-তাই তো। এটা তো আপনার এলাকা নয়–এখানে আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে আশাই করিনি।
–এখান থেকে সেন্ট মেরী মিড বেশ দূর নয় অবশ্য, মাত্র পঁচিশ মাইল। আপনি এখানে থাকেন আমার ধারণাই ছিল না।
–বিয়ের পর অল্পদিন হল এখানে এসেছি।
–বিয়ে করেছেন কবে? জানতে চাইলেন মিস মারপল।
–পাঁচ মাস হল। আমার বর্তমান নাম অ্যাণ্ডারসন।
মিসেস অ্যাণ্ডারসন? আপনার স্বামী?
–একজন ইঞ্জিনীয়ার…আমার চেয়ে বয়স একটু কম। বললেন এসথার।
–তাই ভালো। চমৎকার লাগছে আপনাকে। বাড়িটাও চমৎকার।
মিস মারপল চারদিকে তাকিয়ে প্রাচুর্যের ছাপ উপলব্ধি করলেন। ঘরে দামী আসবাব, পরদা। মিস মারপল উপলব্ধি করলেন, মিঃ র্যাফায়েলের কাছ থেকে পাওয়া অর্থই নিশ্চয় এই প্রাচুর্যের কারণ।
এসথার জিজ্ঞেস করল, মিঃ র্যাফায়েলের মৃত্যুর খবর নিশ্চয় কাগজে দেখেছেন?
–হ্যাঁ, মাসখানেক আগে দেখেছিলাম। খুবই দুঃখ পাই। অসাধারণ মানুষ ছিলেন।
-সত্যিই এক অদ্ভুত মানুষ ছিলেন। যথেষ্ট ভালো মাইনে আমাকে দিতেন। তবু বেশ মোটা অঙ্কের অর্থ আমাকে দিয়ে যান।
–ওরকম মনুষই ছিলেন তিনি, বললেন মিস মারপল, তাঁর সেই লোকটি…কি যেন নাম…
–মিঃ জ্যাকসনের কথা বলছেন।
–হ্যাঁ, হা,–মিঃ র্যাফায়েল তাকেও কিছু দিয়ে গেছেন নাকি?
-না, জ্যাকসনকে কিছু দিয়ে যাননি। তবে গতবছর তাকে কিছু চমৎকার উপহার দিয়েছিলেন।
-জ্যাকসনের সঙ্গে আর দেখাসাক্ষাৎ হয়?
–দ্বীপ থেকে আসার পর হয়নি। মনে হয় ইংলণ্ডে ফিরে মিঃ র্যাফায়েলের কাছে ছিল না। শুনেছিলাম জার্সি বা গুয়ের্নসির এক লর্ডের কাছে কাজ করছেন।
–মিঃ র্যাফায়েলের সঙ্গে একবার দেখা হলে খুব খুশি হতাম। একটা সময় আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি অথচ কিছুই জানি না তার সম্বন্ধে। তিনি মস্ত ধনী ছিলেন, সকলের মত কেবল একথাই আমিও জানি। ওর ছেলেমেয়ে স্ত্রী এঁরা…
হাসলেন এসথার অ্যাণ্ডারসন। বললেন, উনি বিপত্নীক ছিলেন। সম্ভবত বিয়ের কিছুকাল পরেই তাঁর স্ত্রী বিয়োগ হয়েছিল।
-খুবই দুঃখের কথা। ওঁর ছেলেমেয়ে ছিল?
–হ্যাঁ, দুই মেয়ে এক ছেলে। এক মেয়ে বিবাহিত, এখন আমেরিকায় আছে। অন্যটি অল্প বয়সেই মারা যায়। ছেলের প্রসঙ্গ মিঃ র্যাফায়েল কখনো তুলতেন না। মনে হয় বড় রকমের কোন গোলমাল ছিল। শুনেছি সে বছর কয় আগে মারা গেছে।
-ওহ–খুবই দুঃখের কথা। –
-আমার ধারণা ছেলেটি বিদেশে কোথাও চলে গিয়েছিল…সেখানেই মারা যায়।
–ছেলের সম্বন্ধে তিনি কিছুই বলতেন না? আপনি তো বহুদিন তার সেক্রেটারী ছিলেন
–অদ্ভুত মানুষ ছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত কোন কথাই প্রায় বলতেন না। সর্বক্ষণের ধ্যানজ্ঞান ছিল কেবল ব্যবসা আর অর্থ। এডমণ্ডের সঙ্গে দেখা হওয়ার কয়েক মাস পরেই আমি তার কাজ ছেড়ে দিয়েছিলাম।
-আচ্ছা, আপনার কি মনে হয় অপরাধ বিষয়ে মিঃ র্যাফায়েলের কোন আগ্রহ ছিল?
ক্যারিবিয়ানে যা ঘটেছিল, সেজন্য আপনার কথাটা মনে হয়েছে নিশ্চয়ই?
–ঠিক তা নয়, বললেন মিস মারপল, আমার ধারণা হয়েছিল ন্যায়-অন্যায় বিষয় নিয়ে তিনি ভাবতে শুরু করেছিলেন।
–ওসব বিষয়ে তার মাথা ঘামাবার সময় কোথায়। সেই অনরের ঘটনা নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই না।
-আপনি ঠিকই বলেছেন। আমি সত্যিই দুঃখিত। আমি শুধু তার আগ্রহের বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম।
–অর্থকরী বিষয় ছাড়া কোন বিষয়ে তার আগ্রহ ছিল না।
আরও দু-চার কথার পর মিস মারপল তার ব্যাগ হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।
–আবার চাকরির কথা ভাবছেন না তো? বললেন তিনি।
–তার প্রয়োজন মিঃ র্যাফায়েলই মিটিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি আমাকে যা দিয়ে গেছেন তা আমি উপভোগ করতে চাই।
এরপর বিদায় নিয়ে মিস মারপল রাস্তায় নেমে এলেন। চলতে চলতে সব ব্যাপারটা নিয়ে তিনি গভীরভাবে চিন্তা করতে লাগলেন।
মিঃ র্যাফায়েল অদ্ভুত একটা ছকের মধ্যে তাকে গেঁথে ফেলেছেন। তার এই পরিকল্পনা ছকবার সময়ে মনের অবস্থা কেমন ছিল তা অনুধাবন করার চেষ্টা করতে লাগলেন তিনি।
ওয়েস্ট ইণ্ডিজে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথাও তার মনে পড়ল। সেখানকার কেউ অথবা কিছু কি এর সঙ্গে জড়িত? কিংবা এখানেই কি কোন যোগসূত্র আছে। নইলে এসথারের কথাই বা হঠাৎ তার মনে হবে কেন? মিঃ রাফায়েল যে তাকে নিয়ে কোন তামাশা করতে চেয়েছেন, এমন মনে হল না তার।
পাম হোটেলের সঙ্গে কোন যোগসূত্রের সম্ভাবনা যাচাই করার উদ্দেশ্যেই এসথার ওয়াল্টার্সের কথা মনে হয়েছিল তাঁর। কিন্তু কিছু পাওয়া গেল না এখানে।…কাজ শুরু করার মত কোন সূত্রই এখনও পর্যন্ত পাননি তিনি।
বাড়ি ফিরে রাতে বিছানায় আশ্রয় নেবার আগে তিনি স্বগতোক্তি করলেন–মিঃ রাফায়েল, আমার ক্ষমতার মধ্যে যা আছে তাই আমি করবার চেষ্টা করছি। অবশিষ্ট যা করণীয় তা আপনার।
.
০৫.
চারদিন পরে দ্বিতীয় খাম এল মিস মারপলের নামে।
খাম খুলে তিনি চিঠিটা পড়লেন–
প্রিয় মিস মারপল,
আমি নিশ্চিত, এই চিঠি যখন আপনি পড়বেন আমি তখন করবে শায়িত। ভস্মীভূত হলে যে সম্ভাবনা থাকে না অর্থাৎ ছাইয়ের মধ্য থেকে উঠে এসে কাউকে ভয় দেখানো সম্ভব হয় না। কিন্তু সমাধিক্ষেত্র থেকে উঠে এসে ভয় দেখানো খুবই সম্ভব। তা না করতে চাইলেও, আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করার ইচ্ছা আমার হতে পারে।