–মনে হয় ব্যাপারটা সম্বন্ধে কিছু জানেন ভদ্রমহিলা। বেশ উৎসাহের সঙ্গেই এটা গ্রহণ করেছেন বলে মনে হচ্ছে।
চিঠি পড়া শেষ করে মন্তব্য করলেন সুস্টার। মনে হয় না জানতেন। সবকিছু এমনি জটিল করে তোলাই স্বভাব ছিল ভদ্রলোকের।
–কিন্তু আমাদের তাহলে করণীয় কি হবে?
–অপেক্ষা করব। কিছু একটা ঘটবে নিশ্চিত। বললেন ব্রডরিব।
–আচ্ছা, সীলআঁটা কোন নির্দেশ কি কোথাও আছে?
–তেমন হলে আমার অজানা থাকতো না। আমার সততা এবং আইনজ্ঞ হিসেবে আমার দক্ষতার কথা মিঃ র্যাফায়েল সর্বদা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করতেন। যথেষ্ট আস্থা ছিল তার আমার ওপর। বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সীলআঁটা নির্দেশ খুলে দেখতে আমার বাধা নেই। কিন্তু সে অবস্থা এখনো আসেনি।
.
ট্রে থেকে কফির কাপ তুলে নিতে নিতে মিস মারপল জিজ্ঞেস করলেন, মিসেস হেস্টিংস নামে একজন এখানে কোন বাড়িতে থাকেন জানো? মিস বার্টলেট নামে একজন বোধহয় তার সঙ্গে থাকে।
–হ্যাঁ, গ্রামের শেষে নতুন যে বাড়িতে রঙ হলো, ওখানেই নতুন এসেছেন দুই মহিলা। ওদের নাম জানি না। কেন কি হয়েছে? বলল চেরি।
–ওরা কি আত্মীয়?
-না মনে হয়। বন্ধু হবেন
–ওহ আচ্ছা। একটা চিঠি লিখব। আমার ডেস্কটা পরিষ্কার করে দাও।
–কাকে লিখবেন? কি ব্যাপার?
–এক পাদ্রীর বোন মিস ক্যানন প্রেসকটকে।
–অ, তার সঙ্গেই তো ওয়েস্ট ইণ্ডিজে আপনার পরিচয় হয়েছিল তাই না? মনে হয় অ্যালবামে ছবি দেখেছি।
-হ্যাঁ। একটা কাজে হাত দিচ্ছি। বোনের সাহায্য দরকার হতে পারে।
চেরি আর কিছু জানতে চাইল না। সে চলে গেলে মিস মারপল চিঠিটা লিখতে বসলেন। প্রিয় মিস প্রেসকট,
আশা করি আমাকে মনে পড়বে। ওয়েস্ট ইণ্ডিজের অনরোতে আপনাদের দুই ভাইবোনের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল।
বিশেষ প্রয়োজনে আপনাকে চিঠি লিখছি। মিসেস ওয়াল্টার্স অর্থাৎ এসথার ওয়াল্টার্সের ঠিকানাটা আমার দরকার। তিনি মিঃ র্যাফায়েলের সেক্রেটারী ছিলেন। ক্যারিবিয়ানেই দেখেছিলেন তাকে।
বাগানের ব্যাপারে উৎসাহী জেনে তিনি কিছু গাছগাছড়ার ঠিকানা আমার কাছে চেয়েছিলেন। তখন সেটা দিতে পারিনি।
শুনেছি এসথার ওয়াল্টার্স আবার বিয়ে করেছেন। আপনি তার বিষয়ে নিশ্চয় খবর রাখেন? তার ঠিকানা জানালে বাধিত হব।
আশা করি বিরক্তির কারণ ঘটালাম না।
প্রীতিসহ
আপনার একান্ত
জেন মারপল
চিঠিটা ডাকে দেবার পর চটজলদি উত্তরও পেয়ে গেলেন মিস মারপল। সুন্দর একটা চিঠির সঙ্গে ঠিকানাটাও জানালেন তিনি।
মিস প্রেসকট জানালেন–
এসথার ওয়াল্টার্স সম্পর্কে বিশেষ কিছু শুনিনি। এক বান্ধবীর কাছে শুনেছিলাম তার নাম এখন মিসেস স্যাণ্ডারসন বা অ্যাণ্ডারসন। তার ঠিকানা এই সঙ্গে পাঠালাম। অ্যাল্টনের কাছে উইনস্লো লজে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
আমরা ইংলণ্ডের দুই প্রান্তের অধিবাসী। উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তের দূরত্ব এমনই যে আমাদের দেখাসাক্ষাৎ ভাগ্যের দাক্ষিণ্য ছাড়া সম্ভব হবার নয়। আশা করি ভবিষ্যতে একদিন অবশ্যই দেখা হবে।
অ্যাল্টন খুব বেশি দূরে নয়। তবে ট্যাক্সিতে গেলে বেশ খরচ পড়বে। মিস মারপল ঠিক করলেন, চিঠি আর লিখবেন না। হয়তো এতদিনে মনেই করতে পারবে না। ওর সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারটা ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়াই বরং ভালো।
অবশ্য এটা ঠিক যে, ক্যারিবিয়ানে এসথারকে খুন হওয়া থেকে তিনি রক্ষা করেছিলেন। যদিও এসথার তা বিশ্বাস করেনি। এখন তার কাছ থেকে কোন খবর বার করাও নিশ্চয় কষ্টকর হবে। অন্যভাবে সেই চেষ্টা করতে হবে।
.
পরদিন সকালেই ট্যাক্সিকে খবর দিয়ে রাখা হল। সাড়ে এগারটা নাগাদ ট্যাক্সি উপস্থিত হলে মিস মারপল চেরিকে বললেন, একজনের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। তুমি এই নম্বরে ফোন করে দেখ মিসেস অ্যাণ্ডারসন আছেন কিনা। তিনি নিজে যদি ফোন ধরেন বলবে এক মিঃ ব্রডরিব তার সঙ্গে কথা বলতে চান। তোমাকে তার সেক্রেটারী বলে পরিচয় দেবে। আর যদি বাড়িতে না থাকেন, কখন ফিরবেন জেনে নিও।
নির্দেশ মতো ফোন করলো চেরি। জানা গেল, মিসেস অ্যাণ্ডারসন বাড়ি নেই। তবে দুপুরে খাওয়ার সময় ফিরে আসবেন।
মিস মারপল বললেন, ব্যাপারটা তাহলে সহজ হয়ে গেল। যাক..আমি ঘুরে আসি। কথা শেষ করে ট্যাক্সিতে গিয়ে উঠলেন তিনি।
.
০৪.
সুপারবাজার থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়ির দিকে যাবার সময় এক ভদ্রমহিলার সঙ্গে আচমকা ধাক্কা লেগে গেল এসথার অ্যাণ্ডারসনের।
–মাপ করবেন। ঘুরে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইলেন তিনি। অন্য মহিলা সবিস্ময়ে অস্ফুট শব্দ করে উঠলেন।
–মিসেস ওয়াল্টার্স না? কি আশ্চর্য। আমি জেন মারপল। ক্যারিবিয়ানে এক হোটেলে আমাদের দেখা হয়েছিল। বছর দেড়েক হবে
মিস মারপল, তাই তো আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল…আশ্চর্য।
খুব আনন্দ হলো দেখে। এদিকে এক বান্ধবীর সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সারতে এসেছি। বিকেলে বাড়িতে থাকবেন তো কথা বলে আনন্দ করা যেত।
–খুব ভাল কথা–তিনটের পর চলে আসুন না।
.
এভাবে দেখা হয়ে যাবার নাটকীয় ব্যাপারটাতে এসথারের সন্দেহ করার কিছু ছিল না। এমন আকস্মিক দেখাসাক্ষাৎ তো পরিচিতদের মধ্যে যে কোন সময় হতেই পারে।
কাঁটায় কাঁটায় বিকেল তিনটেয় মিস মারপল উইনস্লো লজে উপস্থিত হলেন।
–পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে কী যে ভাল লাগে। আপনার সঙ্গে লণ্ডনে বা হারডেও তো দেখা হতে পারতো। বললেন মিস মারপল।