অবশ্যই। আচ্ছা, মিঃ র্যাফায়েলের পরিবারের কারো সঙ্গে কি আপনি পরিচিত?
–না, তেমন সুযোগ ছিল না। আকস্মিকভাবেই বিদেশে আমরা একটা রহস্যময় ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলাম।
মিসেস এসথার ওয়াল্টার্স নামে তার একজন সেক্রেটারী ছিলেন, আমার জানা ছিল, মিঃ র্যাফায়েল তার দলিলে তাকে পঞ্চাশ হাজার পাউণ্ড দিয়ে গেছেন।
-হ্যাঁ, তা তিনি পেয়েছেন। তবে মিসেস ওয়াল্টার্স আবার বিয়ে করেছেন। তিনি এখন মিসেস অ্যাণ্ডারসন।
-শুনে খুব খুশি হলাম। বেচারী এক মেয়ে নিয়ে বিধবা হয়েছিলেন। চমৎকার মহিলা। নিজের বাড়িতে ফিরে এসে সেদিন সন্ধ্যায় তাঁর নিজস্ব চেয়ারে বসে চিঠিটা খুলে নিয়ে বসলেন।
মিস জেন, মারপল,
সেন্ট মেরী মিড,
আমার মৃত্যুর পর আমার সলিসিটর মিঃ জেমস ব্রডরিবের কাছ থেকে এই চিঠি আপনি পাবেন। তিনি বিশ্বস্ত আইনজ্ঞ। আমার অফিস এবং ব্যক্তিগত আইন সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের দায়িত্ব তার হাতে।
তবে বিশেষ কারণে অনেক ব্যাপারেই মিঃ ব্রডরিবের অনুসন্ধিৎসা মেটাইনি। কোন কোন ব্যাপারে বোঝাঁপড়া কেবল আমার আর আপনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। নিয়তি, আমাদের মধ্যের কাজ হবে সাঙ্কেতিক।
কি অবস্থায় সম্বোধনটা আমি প্রয়োগ করেছিলাম, নিশ্চয় আপনার মনে পড়ছে।
যে মানুষ অভিজ্ঞ এবং জ্ঞানে সমৃদ্ধ, কাজের প্রতি স্বাভাবিক প্রবণতা যার রয়েছে, দীর্ঘ কর্মময় জীবনে আমি তেমন লোককে দিয়েই কাজ করতে চেয়েছি।
হ্যাঁ, সব যোগ্যতাই আপনার মধ্যে রয়েছে। আর আছে, ন্যায়ের প্রতি স্বভাবজাত আকর্ষণ। সেকারণে আপনাকে দিয়ে আমি একটা বিশেষ অপরাধের তদন্ত করাতে চাই।
আমি জানিয়ে রেখেছি, যদি আপনি আমার এই অনুরোধ অনুমোদন করেন আর আপনার তদন্তের ফলে ওই বিশেষ অপরাধের মীমাংসা হয়, তাহলে আপনার জন্য নির্দিষ্ট কিছু টাকা সম্পূর্ণভাবেই আপনার হবে।
আমার এই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ করার জন্য একবছর সময় নির্দিষ্ট রেখেছি। অবশ্যই স্বীকার করব যে আপনার বয়সের কথাটা আমি বিস্মৃত হইনি।
যতদূর দেখেছি, আমার ধারণা, তরুণী না হলেও আপনি যথেষ্ট শক্ত ধাতের। আমার বিশ্বাস, ভাগ্য আপনাকে এক বছর অন্তত বাঁচিয়ে রাখবে।
অপরাধ তদন্তের ব্যাপারে আপনার স্বাভাবিক প্রবণতা ও দক্ষতা রয়েছে। কাজ করবার সময় প্রয়োজনীয় অর্থ আপনাকে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থাও করা রয়েছে। আশা করি আমার প্রস্তাব আপনার রুচিবিরুদ্ধ মনে হবে না।
চোখ বুজলে আপনাকে এখনো সেই উলবোনা অবস্থায় অবিকল দেখতে পাই। বিশেষ করে সেই দিনের কথা আমি ভুলতে পারি না, যেদিন আপনার তাড়ায় মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল, আপনার মাথার দিকে গোলাপী রঙের একরাশ পশম জড়ানো ছিল। পশম বোনাটা আপনার প্রাত্যহিক জীবনে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে গেছে আমি জানি। যদি এই বোনার কাজ চালিয়ে যেতে চান, স্বচ্ছন্দে তা করতে পারেন।
আর যদি ন্যায় ও সত্যের জন্য কাজ করতে উৎসুক হন তাহলে আমার প্রস্তাবিত কাজে নিশ্চয় উৎসাহ পাবেন। —
আপনার প্রিয় বন্ধু
জে. বি. র্যাফায়েল
.
০৩.
পর পর তিনবার বেশ উচ্চস্বরে চিঠিটা পড়লেন মিস মারপল। কাজের প্রয়োজনে নির্দিষ্ট কোন সূত্র বা তথ্য কোথাও পেলেন না। তার মনে হল, মিঃ ব্রডরিবের কাছ থেকে এর পর কিছু খবর আসা উচিত। অবশ্য যদি না মিঃ র্যাফায়েল ইচ্ছে করে ব্যাপারটাকে গোলমেলে করে রাখেন এটাই তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
সবকিছুতে মজা উপভোগ করতেই চাইতেন তিনি। একারণেই মিঃ ব্রডরিবের স্বাভাবিক অনুসন্ধিৎসাও তিনি মেটাননি।
মিঃ র্যাফায়েল কোন সূত্রের উল্লেখ না করলেও, মিস মারপল ভাবলেন, তাকে সূত্র আবিষ্কার করতেই হবে। তাকে জানতে হবে কি করতে হবে, কোথায় যেতে হবে, বা কোন সমস্যার সমাধান করতে হবে।
কাজের খরচের ব্যবস্থা যখন রাখা হয়েছে, অনুমান করা যায়, মিঃ র্যাফায়েল চেয়েছেন, ওয়েস্ট ইণ্ডিজ বা দক্ষিণ আমেরিকা বা অন্য কোথাও তিনি যাবেন।
মিস মারপল নিজের মনেই বলে উঠলেন, মিঃ র্যাফায়েল, আমি চিরন্তন জীবনে বিশ্বাসী। আমি বিশ্বাস করি, কোথাও আপনি নিশ্চয় রয়েছেন, আমি জানতে না পারলেও নিশ্চয়ই আপনি আছেন–আমি আপনার ইচ্ছাপূরণের চেষ্টা যথাসাধ্য করব।
তিনদিন পরে মিঃ ব্রডরিব মিস মারপলের কাছ থেকে একটা চিঠি পেলেন। চিঠির মূল বক্তব্য ছিল–
প্রিয় মিঃ ব্রডরিব,
মিঃ র্যাফায়েলের যে প্রস্তাব আপনি আমার হাতে তুলে দিয়েছেন, সেসম্পর্কে জানাচ্ছি, তার প্রস্তাব আমি গ্রহণ করছি। জানি না কতটা সফল হব, তার ইচ্ছাপূরণের চেষ্টা যথাসাধ্য করব। যদিও জানি না, সফলতা কিভাবে আসবে। কোন সূত্র বা তথ্যই তিনি রেখে যাননি। আপনার কাছেও রেখে গেছেন বলে মনে হয় না। বাস্তবিকই যদি তেমন কিছু থেকে থাকে। আমাকে পাঠাতে অনুরোধ করছি।
একটা বিষয়ে আমার কৌতূহল নিশ্চয়ই অসঙ্গত মনে হবে না। জীবনের শেষ দিকে ব্যবসায় বা ব্যক্তিগত জীবনে মিঃ র্যাফায়েলের কোন অপরাধমূলক ঘটনা কি ঘটেছিল? কোন অন্যায় বিচার বা এই ধরনের কিছু? তার কোন আত্মীয় কি ইদানীংকালে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত বা উৎপীড়িত হয়েছিলেন?
আমার বিশ্বাস, আপনি বুঝতে পারবেন, এই সব কেন আমি জানতে চাইছি।..
চিঠিটা পড়ে খুশি হলেন মিঃ ব্রডরিব। সেটা এগিয়ে দিলেন সুস্টারকে।