ক্লোটিলডার কথা বলছেন? দুধের গ্লাস হাতে নিয়েই তো তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। দুধটা কি উনি পান করেছিলেন?
-হ্যাঁ। ওতে যে বিষ মেশানো থাকতে পারে কেউ ভাবেনি। তাই বাধাও দেয়নি।
বিষ মেশানো দুধ পান করেই শেষ পর্যন্ত তাকেও পালাতে হল। তার পক্ষে এই পরিণতিই স্বাভাবিক ছিল। দশবছর ধরে অসহ্য মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেছেন তিনি। ভালবাসার দাহ–শেষ পর্যন্ত নিজেই নিজের ওপর প্রতিশোধ নিলেন। বেচারি ভেরিটি নারীর স্বাভাবিক ও সাধারণ চাওয়া স্বামী সংসার সে চেয়েছিল, কিন্তু পেল না। তার সব চাওয়া-পাওয়া সমাহিত হয়ে রইল কাচঘরের ধ্বংসস্তূপের নিচে–এ দুঃখ সওয়া যায় না।
বত্রিশ বছরের যুবক মাইকেল র্যাফায়েলের সঙ্গে মিস মারপলের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন প্রফেসর ওয়ানস্টেড।
-মাইকেল, ইনি মিস মারপল, তোমার ব্যাপারে ইনিই সবকিছু করেছেন।
–সুদর্শন তরুণ মুখ তুলে তাকাল। স্মিত হাসল।
–ওঃ, হ্যাঁ, নামটা শুনেছি। অনেক ঝামেলা সয়েছেন আপনি, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রফেসর ওয়ানডেকে উদ্দেশ্য করে বলল সে, শুনেছি, ওরা নাকি আমাকে ছেড়ে দেবার কথা ভাবছে?
–হ্যাঁ, বললেন ওয়ানস্টেড, তুমি শিগগিরই মুক্তি পাবে।
–এবার তুমি স্বাধীনভাবে নিজের জীবন তৈরি করার সুযোগ পাবে, স্নেহার্দ কণ্ঠে বললেন মিস মারপল, সবকিছুই করেছেন তোমার বাবা।
–আমার বাবা? তিনি কি আমার সম্পর্কে ভেবেছিলেন?
–হ্যাঁ। বললেন মিস মারপল, মৃত্যুশয্যায় থেকেও তিনি চেয়েছিলেন তুমি যাতে অন্যায়ের শিকার না হও। তিনি নিজেও ন্যায়বান মানুষ ছিলেন। আমাকে চিঠিতে সেকথাই লিখেছিলেন।
মাইকেল অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকল শুভ্রকেশ বৃদ্ধার মুখের দিকে।
–বিদায়, তোমার জন্য অন্তরের শুভকামনা রইল।
.
অদ্ভুত মহিলা। যেমন বলেছিলেন, কাচঘরের মেঝের নিচে মৃতদেহটা পাওয়া গেছে। মিঃ সুস্টার বললেন।
–উনি আসবেন এখনই। বললেন মিঃ ব্রডরিব।
–সবই কেমন অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। বললেন মিঃ সুস্টার।
এই সময় ঘরে ঢুকলেন মিস মারপল। ওরা দুজন তাকে অভ্যর্থনা জানালেন।
–আমাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।
–আমি আমার শর্ত পালন করতে পেরেছি, এটাই আমার আনন্দ, বললেন মিস মারপল।
–মিঃ র্যাফায়েলের নির্দেশ অনুযায়ী এবারে বিশ হাজার পাউণ্ড আপনার–ওটা কি আপনার ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে দেব? বললেন মিঃ ব্রডরিব।
–তাই করুন। আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
বিদায় নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন মিস মারপল।