-তা মনে হয় আপনি পারবেন না। নিরাসক্ত গলায় বললেন মিস মারপল।
–পারব না…একটা দুর্বল বুড়ি..আপনাকে কেউ বাঁচাতে আসবে না এখানে।
–আমি সত্য পথের পথিক-আমাকে রক্ষা করবার জন্য তৈরি রয়েছে দেবদূত।
–দেবদূত। হিংস্র হাসি হাসলেন ক্লোটিলডা, দাঁড়িয়ে উঠে বিছানার দিকে এগোলেন।
–আমার রক্ষাকারী সম্ভবতঃ দুজন দেবদূত। বললেন মিস মারপল, মিঃ র্যাফায়েল তার কাজে কোন ত্রুটি রাখতেন না।
কথা শেষ করে তিনি বালিশের নিচে থেকে বের করে আনলেন একটা ছোট্ট বাঁশি। ঠোঁটের মাঝখানে রেখে ফুঁ দিলেন। সেই তীব্র জোরালো শব্দের সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন মিস ব্যারো। বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠের মত ঘুরে দাঁড়ালেন ক্লোটিলডা। সেই মুহূর্তে দেয়ালের পাশে বড় আলমারির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন মিস কুক। তাদের অন্য মানুষ মনে হচ্ছিল। সেই সন্ধ্যার সামাজিক ব্যবহারের ছিটেফোঁটাও তাদের হাবভাবে ছিল না।
–দুজন দেবদূত, বললেন মিস মারপল, মিঃ র্যাফায়েল তার যোগ্য কাজই করে গেছেন।
.
লণ্ডনের একটা সরকারী ভবন। সেই ঘরে উপস্থিত রয়েছেন প্রফেসার ওয়ানস্টেড ও মিস মারপল ছাড়াও একজন সরকারী উকিল, স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের সহকারী কমিশনার স্যার জেমস লয়েড, মেন্সটোন জেলের অধ্যক্ষ স্যার আন্ডু ম্যাকনীল এবং স্বরাষ্ট্র সচিব স্বয়ং।
প্রফেসর ওয়ানস্টেড মিস মারপলের উদ্দেশ্যে বললেন, ওই দুজন বেসরকারী মহিলা গোয়েন্দা যে আপনাকে রক্ষা করার জন্য নিযুক্ত হয়েছেন, আপনি কখন বুঝতে পারলেন?
–গতকাল সন্ধ্যার আগে আমার কোন ধারণা ছিল না, বললেন মিস মারপল, মিস কুক সেন্টমেরী মিডে এসেছিলেন। কোচে তাকে অন্য বেশে দেখেই মনে হয়েছিল, আমাকে দেখে মনে রাখার উদ্দেশ্যেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আমার রক্ষক কি শত্রুপক্ষের কেউ তা নিয়ে ধাঁধায় ছিলাম। গতকাল সন্ধ্যাতেই আমি নিশ্চিত হলাম, যখন তিনি ক্লোটিলডার আনা কফি পান না করার ইঙ্গিত করলেন আমাকে। তার কৌশল ছিল অনবদ্য। তারপর বিদায় নেওয়ার সময় করমর্দন করার ফাঁকে আমার হাতে গুঁজে দিয়ে যান একটা বাঁশি। ওটা গোপনে বালিশের তলায় রেখে দিই। মিস ব্র্যাডবেরি স্কট যাতে কিছু সন্দেহ করতে না পারে তার জন্য যথাযোগ্য সৌজন্য বজায় রাখি। তার দেওয়া দুধের গ্লাস গ্রহণ করি। কিন্তু ওই দুধ পান করা যে বিপজ্জনক তা জানতাম। তাই স্পর্শ করিনি।
–কিন্তু দরজা খোলা রেখেছিলেন কেন? জানতে চাইলেন প্রফেসর ওয়ানস্টেড।
–আমি জানতাম দুধটা পান করার পর আমি কি অবস্থায় আছি তা জানার জন্য মিস ব্র্যাডবেরি স্কট একটু পরেই আসবেন। তাই দরজা বন্ধ করিনি। আমি তার কথা শুনতে চাইছিলাম।
–মিস কুক যে আলমারির ভেতরে লুকিয়ে আছেন, আপনি তা জানতেন?
–একদম না। তাকে দেখে আমি খুবই আশ্চর্য হই।
–ওই দুজন বাড়িতে আছেন, আপনি জানতেন?
–বাঁশিটা পাবার পর বুঝতে পেরেছিলাম তারা কাছাকাছি থাকবেন। বাড়ির সবাই যখন শুতে যান সেই সময় সম্ভবত তারা ভেতরে ঢোকেন।
-ওহ, এই অবস্থায় মারাত্মক ঝুঁকি আপনি নিয়েছিলেন, মিস মারপল।
–আমি বাধ্য ছিলাম। কারণ আমি সত্য উদঘাটনে বদ্ধপরিকর ছিলাম।
-ডাকঘরের ওই পার্সেলটার ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। ওর ভেতরে পুরুষদের উপযোগী লালকালো ডোরাকাটা একটা গলাবন্ধ জাম্পার ছিল। কিন্তু পার্সেলটার কথা আপনি ভেবেছিলেন কেন?
–ওরকম একটা জাম্পারের কথা যোয়ানা আর এমলিন বলেছিল। ওদের নজরে পড়েছিল। ওরকম রঙচঙে জিনিস সহজে ফেলা যায়। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, তাই জানতাম পোশাকটা কাছাকাছি কোথাও পাওয়া যাবে না। ওটা নাগালের বাইরে সরিয়ে দেবার সহজ পথ ছিল ডাক মারফত কোন দাঁতব্য প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেওয়া। কোথায় পাঠানো হয়েছে সেই ঠিকানাটা আমি জানতাম না।
–ঠিকানাটা পেলেন কি ভাবে?
–ডাকঘর থেকে। তবে একটু কৌশল করতে হয়েছিল। পোস্টমিস্ট্রেস ভালমানুষ ছিলেন। তাকে জানালাম ঠিকানাটা ভুল লিখে ফেলেছি। বয়স হয়েছে, মনে রাখতে পারি না সব। তিনি আমাকে ঠিকানাটা জানাল।
-একেবারে পাকা অভিনেত্রীর মত কাজ, বললেন প্রফেসর ওয়ানস্টেড, কিন্তু একটা কথা, দশ বছর আগে যে ঘটনা ঘটল, তার হদিশ আপনি পেলেন কি ভাবে?
এরকম একটা তথ্য ছাড়া কাজে জড়িত হওয়ায় প্রথমে খুবই বিরক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু মিঃ র্যাফায়েল বিচক্ষণ ব্যক্তি, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছিল তার প্রতিটি কাজে। তিনি এমন ব্যবস্থা করেছিলেন। তার সরবরাহ করা তথ্য প্যাকেটের মাধ্যমে মাঝেমাঝেই আমি পেয়ে গেছি। তাতে আমার পথ সহজ হয়েছে।
–কোথাও বাধার মুখে পড়তে হয়নি?
-না, তেমন কিছু ঘটেনি। তবে মিস এলিজাবেথ টেম্পলের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে পর্যন্ত মূল ঘটনার কোন আভাসই পাইনি। তার সঙ্গে আলাপ হবার পরেই বুঝতে পারি আমাকে একটা গ্রন্থি মোচন করতে হবে। সেই গ্রন্থিতে রয়েছে একজন হত্যাকারী আর একজন মিথ্যার শিকার।
ওয়েস্ট ইণ্ডিজে মিঃ র্যাফায়েলের সঙ্গে আমার যোগাযোগের সূত্র ছিল একটা খুন। সেই খুন আর খুনীকে কেন্দ্র করেই আমরা একসঙ্গে মিলিত হই। সেই সুবাদেই, আমি বুঝতে পারি এখানেও নিশ্চয়ই কেউ খুন হয়েছে আর অন্যায় ভাবে সাজা পাচ্ছে কেউ।
মিস টেম্পল আমাকে জানিয়েছিলেন, একটি মেয়েকে তিনি চিনতেন, সে মিঃ র্যাফায়েলের ছেলেকে বিয়ে করতে বাগদত্তা ছিল। কিন্তু তারা বিয়ে করবার আগেই মেয়েটি মারা যায়।