–কোচের সহযাত্রীদের কেউ বলতে চাইছেন? বললেন মিস মারপল।
-না, না, তা ঠিক বলিনি, ক্লোটিলডা বললেন, মিস মারপল, সম্ভাবনার কথাই আমি ভাবছিলাম।
–অনেক সম্ভাবনার কথাই ভাবা যায়। অ্যানথিয়া বলে উঠল, এমনও হতে পারে মিস টেম্পল একজন অপরাধী। কেউ তাকে অনুসরণ করে এসেছিল হয়তো।
–অসম্ভব, ক্লোটিলডা বললেন, তিনি একজন বিখ্যাত শিক্ষয়িত্রী। তাকে কে অনুসরণ করবে?
মনে হয় মিস মারপল কিছু ধারণা দিতে পারবেন, বললেন মিসেস গ্লাইন।
–আমার ধারণা, বললেন মিস মারপল, সত্যি কথা বলত কি, আসলে ওরা কাউকেই দেখেনি।
–মানে বলছেন, ওরা যা বলছে, তা ঠিক নয়? বলল অ্যানথিয়া।
–হ্যাঁ। আসলে অল্প বয়স তো, ওই বয়সে মজা করার একটা প্রবণতা থাকে। তাই করতে চেয়ে থাকবে—
-হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। ক্লোটিলডা বললেন, হতে পারে, বিচিত্র নয়।
–দুজনে মিলেই ব্যাপারটা করে থাকবে। মিস কুক বললেন।
-হ্যাঁ, ওরা দুজনে একই কাহিনী বলেছে, বললেন মিস মারপল, মিস টেম্পলকে হত্যা করার উদ্দেশ্য হয়তো তাদের ছিল না, পাথরটা গড়িয়ে দিয়ে মজা দেখতে চেয়েছিল হয়তো। আমার এরকমই মনে হয়।
–এরকম হওয়া অসম্ভব না। তবে আগে ব্যাপারটা মাথায় আসেনি। ক্লোটিলডা বলল।
মিস কুক উঠে দাঁড়ালেন। মিস মারপলের উদ্দেশ্যে বললেন, এবারে ওঠা যাক, গোল্ডেনবোরে ফিরতে হবে। মিস মারপল
-ওহো, আপনারা জানেন না, বললেন মিস মারপল, মিস ব্র্যাডবেরি স্কট একটা রাত তাদের সঙ্গে কাটিয়ে যাবার অনুরোধ করেছেন আমাকে।
-খুব ভাল কথা। আপনার পক্ষে ভালই হবে।
ক্লোটিলডা বললেন, আপনারাও আসুন না, নৈশ ভোজের পরে কফি পান করবেন আমাদের সঙ্গে।
মিস কুক সহাস্যে তার আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন এবং যথাসময়ে আতিথ্য গ্রহণ করবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সকলকে বিদায় জানালেন।
.
–মিস কুক আর মিস ব্যাপোর কথা বলছি, ওরা থেকে গেলেন কেন বুঝলাম না। নৈশ ভোজের টেবিলে মিস মারপলকে বললেন অ্যানথিয়া।
-ওদের নির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা থেকে থাকবে। বললেন মিস মারপল।
পরিকল্পনা কেন? জানতে চাইলেন মিসেস গ্লাইন।
–খুনের ব্যাপারটাতে ওরা আগ্রহী হয়ে পড়েছেন বলছেন? মিসেস গ্লাইন।
–কেন নয়, অ্যানথিয়া বলল, খুন অবশ্যই। কেউ নিশ্চয়ই ঘৃণা করত, সুযোগ পেয়ে
-ঘৃণার জের কি এতবছর থাকে? বললেন মিস মারপল। এটা ঘৃণা নয়–ঘৃণার চেয়েও যা জোরালো তা হল ভালবাসা।
অ্যানথিয়া বলল, মিস কুক বা মিস ব্যারো এদের দুজনকে আপনার সন্দেহ হয়?
–না, না, ওরা এমন হতে পারেন না। বললেন মিসেস গ্লাইন।
কিন্তু ওদের কেমন রহস্যময় মনে হয়। অ্যানথিয়া বলল।
ক্লোটিলডা তাকে সমর্থন জানিয়ে বলল, আমারও যেন কেমন মনে হয় ওদের।
ঠিক সেই সময়েই, রাত তখন ৮:৪৫, অতিথিরা উপস্থিত হলেন। তারা আসন গ্রহণ করলে ক্লোটিলডা কাপে কফি ঢেলে ওদের পরিবেশন করলেন। পরে এককাপ মিস মারপলকে দিলেন।
মিস মারপলের দিকে ঝুঁকে মিস কুক নিচুস্বরে বললেন, এত রাতে, মাপ করবেন মিস মারপল, ঠিক মতো ঘুম হবে না। এ কফি আপনার পান করা উচিত না।
–তাই বলছেন, বললেন মিস মারপল, কিন্তু আমি তো এসময় কফি পান করি।
-কিন্তু এ খুব কড়া কফি। বলে মিস কুক, মিস মারপলের দিকে তাকালেন। দুজনের চোখাচোখি হল।
–আপনার কথা বুঝতে পেরেছি, বললেন মিস মারপল, তারপর কাপটা সামান্য সরিয়ে দিলেন, বললেন আর্চডিকন মেয়েটিকে, খুবই স্নেহ করতেন। তার কোন ছবি নেই?
-হ্যাঁ, আছে।
ক্লোটিলডা উঠে গিয়ে ওপরের ডেস্ক খুলে একটা ফোটোগ্রাফ এনে মিস মারপলের হাতে দিলেন।
এই ভেরিটি।
-বেচারি মেয়েটা; কি সুন্দর দেখতে। বললেন মিস মারপল। দেখা হলে তিনি হাত বাড়িয়ে ছবিটা ক্লোটিলডার হাতে দিতে গেলেন। সেই সময় ক্লোটিলডার হাতের ধাক্কা লেগে কফির কাপটা মেঝেয় ছিটকে পড়ল।
–ওহ্, কুঁকড়ে গেলেন মিস মারপল, কাপটা ফেলে দিলাম।
-না, আমার হাত লেগেই পড়ল, ক্লোটিলডা বলল, কড়া কফি বরং থাক, আপনাকে এককাপ দুধ দিচ্ছি।
-দুধ পান করা যেতে পারে। ঘুমটাও ভাল হবে তাহলে। বললেন মিস মারপল।
নানান প্রসঙ্গের আলোচনায় সকলে আরো কিছুক্ষণ সময় কাটলেন। একসময় মিস কুক আর মিস ব্যারো ব্যস্তভাবে বিদায় নিলেন। কিন্তু কিছু একটা ফেলে গিয়েছিলেন। আবার ফিরে এসে সেটা নিয়ে গেলেন।
ক্লোটিলডা মিস মারপলকে তার ঘরে নিয়ে গেলেন। পরে তার জন্য এক গ্লাস দুধ নিয়ে এসে টেবিলে রাখলেন।
-ওহ, আপনাদের আতিথেয়তার কথা কখনো ভুলব না। বললেন মিস মারপল।
–মিঃ র্যাফায়েল যে চিঠিতে আমাদের সেভাবেই নির্দেশ দিয়েছিলেন। সব দিকেই তার সতর্ক নজর ছিল। বললেন ক্লোটিলডা।
–হ্যাঁ, তিনি খুবই বিচক্ষণ মানুষ ছিলেন। বললেন মিস মারপল।
তাকে শুভরাত্রি জানাবার আগে ক্লোটিলডা জিজ্ঞেস করলেন, সকালে কি এখানেই আপনার প্রাতঃরাশ পাঠিয়ে দেব?
-না, তার দরকার নেই, বললেন মিস মারপল, আমি নিচেই নামব-বাগানটা চমৎকার, ওই ফুলে ঢাকা ঢিবিটা ঘুরে ঘুরে দেখতে ভাল লাগবে। ঠিক আছে, শুভরাত্রি মিস ব্র্যাডবেরি স্কট।
প্রাচীন জমিদার বাড়ির দেয়াল ঘড়িতে রাত দুটোর ঘোষণা শুনতে পেলেন মিস মারপল। ঝিম ধরা অন্ধকারে সব ডুবে আছে।
ঢং ঢং শব্দে রাত তিনটের ঘোষণা হল। বাইরে হালকা পায়ের শব্দ পাওয়া গেল। দরজাটাও যেন ধীরে ধীরে খুলে যাচ্ছিল। মিস মারপল বিছানায় উঠে বসলেন। সুইচ টিপে ঘরের আলো জ্বালালেন।