-ওঃ আপনারা বড়ই সদাশয়। আপনাদের সবকিছুই সুন্দর।
–আমি আপনার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছি–এখুনি চলুন আমার সঙ্গে।
মিস মারপল আর আপত্তি করলেন না। তিনি তো এরকমই একটা আমন্ত্রণের প্রতীক্ষা করবেন বলে এখানে থেকে গিয়েছিলেন।
কুলির মাথায় সুটকেস চাপিয়ে দিয়ে তিনি অ্যানথিয়ার সঙ্গে আবার ম্যানর হাউসে এসে উঠলেন।
অন্য দুই বোন বসার ঘরেই ছিল। মিস মারপল তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন।
তার মাথায় নানান চিন্তা জট পাকাচ্ছিল। ক্লোটিলডা মেয়েটিকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। ভেরিটির নাম উচ্চারিত হলেই তাঁর চোখে জলের ধারা নেমে আসে।
যাকে তিনি এতো ভালবাসতেন তাকে তার পক্ষে কি মারা সম্ভব?
অ্যানথিয়ার চালচলন গতিবিধিও সন্দেহজনক। সে পার্সেলটা নিয়ে ডাকঘরে গিয়েছিল। তার চোখের দৃষ্টি-বারবার পেছনে ফিরে তাকানো–এসবই অদ্ভুত। ও কি ভয় পেয়েছে, কোন কিছু সম্পর্কে ভয়? নাকি বোনেদের সম্পর্কে ভীত?
তারাও কি তাই? অ্যানথিয়া কি বলে বা করে বসে এই ভেবে তারাও কি ভীত?
ইতিমধ্যে মিসেস গ্লাইন চা নিয়ে এসেছিলেন! চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে মিস মারপলের মনে পড়ল মিস কুক আর মিস ব্যারোর কথা। তারা এখন কি করছে? মিস কুক সেন্ট মেরী মিডে গিয়ে তাকে দেখে এসেছিল…অথচ পরে তা অস্বীকার করে।
চা পান শেষ হলে মিসেস গ্লাইন চায়ের ট্রে নিয়ে উঠে গেল। অ্যানথিয়াও বাগানে চলে গেল। ঘরে রইলেন কেবল মিসেস মারপল আর মিস ক্লোটিলডা।
কথা শুরু করলেন মিস মারপল–আপনি আর্চডিকন ব্রাবাজনকে চেনেন মনে হয়?
–ও হ্যাঁ। গতকাল তিনি গির্জায় এসেছিলেন।
–তিনি পরে আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য হোটেলে এসেছিলেন। মিস টেম্পলের খোঁজে হাসপাতালেও তিনি গিয়েছিলেন। বললেন মিস মারুপল।
–কি ঘটেছিল এ সম্পর্কে তিনি কোন ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন?
–তেমন কিছু না। মিসেস পোর্টারের ভাইঝি কাউকে পাথর ঠেলতে দেখেছিল এটা প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। আমার ধারণা ওরা অদ্ভুত এক কাহিনী বলেছে।
এই সময় মিসেস গ্লাইন ঘরে ঢুকলেন।–কি অদ্ভুত কাহিনী
–আমরা পাহাড়ের দুর্ঘটনার কথা বলছিলাম। বললেন ক্লোটিলডা। ভেরিটির মৃত্যুর পর থেকেই জায়গাটার আবহাওয়া কেমন ছমছমে হয়ে উঠেছে। একটা ছায়া…আপনি অনুভব করছেন মিস মারপল?
এই সময় একগুচ্ছ লিলিফুল হাতে নিয়ে অ্যানথিয়া বাগান থেকে ঘরে ঢুকল।
–অন্ত্যেষ্টির ফুল…এগুলো জলে ভিজিয়ে রাখব। বলল অ্যানথিয়া।
–ওসব করো না অ্যানাথিয়া-ওটা ঠিক নয়। বললেন ক্লোটিলডা।
মিসেস গ্লাইন অ্যানথিয়াকে অনুসরণ করে ঘরের বাইরে চলে গেলেন।
–ও মাঝে মাঝে কেমন হয়ে যায়…হিস্টিরিয়াগ্রস্তের মত। বললেন ক্লোটিলডা, আমারও যেন কেমন বোধ হয় মাঝে মাঝে, ভেবেছি বাড়ি বিক্রি করে চলে যাব।
–হ্যাঁ, দুঃখের স্মৃতি নিয়ে বাস করা—
ও আমার মেয়ের মতই ছিল…আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধুও…ওই মানসিক রোগগ্রস্ত ছেলেটিই—
মিঃ র্যাফায়েলের ছেলে মাইকেল?
-হ্যাঁ। ভাবতে পারিনি অমন ফুলের মত নিষ্পাপ ভেরিটি ওই বদ ছেলের প্রেমে পড়বে। অনেক বারণ করেছিলাম, কিছুতেই শুনতে চায়নি।
-ভেরিটি তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল? বললেন মিস মারপল।
–না, অতদূর গড়ায়নি মনে হয়। ছেলেটা তো এসব ভাবতেই পারে না।
–ওহ বড়ই মর্মান্তিক।
–আমার পক্ষে সবচেয়ে মারাত্মক হয়েছিল মৃতদেহ সনাক্ত করা। মর্গে গিয়ে…উঃ কী ভয়ঙ্কর
মিস ক্লোটিলডা আতঙ্কে ভয়ে চোখ বুজলেন।
একটু পরে চোখ খুলে বললেন, অ্যানথিয়াও আমার ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছিল সেই সময়।
–অ্যানথিয়া-কেন? বললেন মিস মারপল।
–ও কেমন ঈর্ষাকাতর হয়ে উঠেছিল। হঠাৎ ভেরিটিকে ঘৃণা করতে শুরু করে। নিজের বোন…তবু মাঝে মাঝে মনে হয়…আমাদের একটা কথাবলা টিয়াকেও একবার গলা ছিঁড়ে মেরে ফেলেছিল। উঃ…উঃ…ভাবতে পারি না।
-ওসব কথা থাক মিস ক্লোটিলডা। বেদনার্ত স্বরে বললেন মিস মারপল।
-ভেরিটি এভাবে মারা গেলো বলে অন্য মেয়েরা অবশ্য ছেলেটির হাত থেকে বেঁচে গেল…যাবজ্জীবন কারাবাস হয়েছে তার। অবশ্য মানসিক রোগগ্রস্ত হিসাবেই তাকে দেখা উচিত ছিল।
কথা শেষ করে চোখ মুছতে মুছতে ক্লোটিলডা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
ল্যাভিনিয়া গ্লাইন ঘরে ঢুকল। বললেন, ক্লোটিলডা সেই মেয়েটির মৃত্যুর পর থেকে এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি। ভেরিটিকে দারুণ ভালবাসত ও।
-উনি আপনাদের ছোট বোনটির জন্যেও চিন্তিত মনে হয়।
–অ্যানথিয়া? কে…জানালার কাছে কে গেল? চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন ল্যাভিনিয়া।
-ওঃ আমাদের ক্ষমা করবেন, ঘরে ঢুকলেন দুই মূর্তি, মিস কুক আর মিস ব্যারো, মিস মারপল, আমরা আপনাকেই বলতে এসেছিলাম গির্জা দেখতে যাওয়া হয়নি আমাদের।…ঘণ্টা বাজলেও কাউকে বেরতে না দেখে ঢুকে পড়েছিলাম আমরা।
ক্ষমাপ্রার্থনার ভঙ্গিতে কথা শেষ করে মিসেস গ্লাইনের দিকে তাকালেন মিস ব্যারো।
-বসুন, একটু শেরী আনছি বলে মিসেস গ্লাইন উঠে গেলেন।
একটু পরেই তিনি ফিরে এলেন শেরী নিয়ে। সঙ্গে এল অ্যানথিয়া। বললেন, মিস টেম্পলের ব্যাপারটা কি হবে বুঝতে পারছি না।
মিস ব্যারো বললেন, পুলিস ওই পাথরটার ব্যাপার নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছে। ওটা কেউ ঠেলে দিয়েছিল না, আপনা থেকেই পড়েছিল।
-পাথর কে ঠেলতে যাবে, বললেন মিস কুক, তবে কোন গুণ্ডা বা বিদেশী কেউ হলেও হতে পারে।