.
১৭.
পরদিন সকালে ভ্রমণ দলের কোচ গোল্ডেনবোরের সামনে এসে থেমেছে। মিস মারপল নিচে নেমে একে একে ভ্রমণসঙ্গীদের বিদায় জানালেন।
সকলেই চলে গেলেন। ওই দলের কেবল এমলিন প্রাইস আর যোয়ানা। ইতিমধ্যে তারা দুজন খুবই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। যোয়ানা তাই অজুহাত খাড়া করে তার পিসি মিসেস রাইজেল পোর্টারের কাছ থেকে ছাড়ান নিয়েছে।
সকলে কোচে উঠে গেলেন, মিস মারপল প্রফেসর ওয়ানস্টেডের দিকে তাকালেন।
–আপনার সঙ্গে দুটো কথা বলতে চাই। বললেন মিস মারপল।
তারা হোটেলের কোণের দিকে চলে এলেন।
–বাকি সকলের সঙ্গে কোচে চলে গেলেই মনে হয় ভাল করতেন আপনি। অবশ্য আমি আপনার ওপর নজর রাখতে পারব। বললেন প্রফেসর ওয়ানস্টেড।
-না। তার দরকার হবে না।
–কোন ধারণা কি পেয়েছেন?
মনে হয় পেয়েছি। আর এমন কিছু ব্যাপার আছে তাতে আপনার সাহায্য দরকার। কারণ স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ড ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ আছে।
-হ্যাঁ। কিন্তু আমাকে কি করতে হবে?
মিস মারপল একটা ঠিকানা লেখা কাগজ ব্যাগ থেকে বার করে প্রফেসরের দিকে এগিয়ে দিলেন।
–একটা নামকরা দাঁতব্য প্রতিষ্ঠান। সকলে এখানে শিশুদের আর মেয়েদের পোশাক, কোট, পুলওভার ইত্যাদি পাঠিয়ে থাকে। দুদিন আগে এখানকার ডাকঘর থেকে পাঠানো একটা পার্সেল সম্বন্ধে খোঁজখবর নিতে হবে আপনাকে।
–কে পাঠিয়েছিল সেটা?
–পার্সেলটা গিয়েছিল অ্যানথিয়া ব্রাডবেরি স্কটের কাছ থেকে।
–আপনি তাকে সেটা নিয়ে যেতে বলেছিলেন?
–না। গোল্ডেনবারের বাগানে সেদিন আমি আর আপনি বসে কথা বলার সময় তাকে পার্সেলটা নিয়ে যেতে দেখেছিলাম।
-হ্যাঁ, মনে পড়েছে। কিন্তু ওই পার্সেলের সঙ্গে
–ধীরে বন্ধু ধীরে। আমি পরে ডাকঘরে গিয়ে মিথ্যে করে গল্প ফেঁদে সদাশয়া পোস্ট মিসট্রেসের কাছ থেকে ঠিকানাটা সংগ্রহ করে এনেছিলাম। অবশ্য জানি পার্সেলে প্রেরকের ভুয়ো নামঠিকানাই দেওয়া থাকবে।
প্রফেসর ওয়ানস্টেড ঠিকানা লেখা কাগজটা নিলেন।
–ঠিক আছে। স্বচ্ছন্দেই এটা করা যাবে। আপনি আশা করছেন এই পার্সেল আপনাকে সাহায্য করতে পারে?
–হ্যাঁ। এর ভেতরের জিনিসগুলো গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে আপনাকে কিছু এখনই বলতে চাইছি না।
–বেশ, আর কিছু?
হ্যাঁ। এব্যাপারে যিনি ভারপ্রাপ্ত তাঁকে আগে থেকে একটু সতর্ক করে রাখা দরকার–একটা মৃতদেহ হয়তো আবিষ্কার হতে পারে
আমরা যেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি তার সঙ্গে জড়িত? সেই দশ বছর আগেকার ঘটনা–
-হ্যাঁ, বললেন মিস মারপল, এব্যাপারে আমি নিশ্চিত। আমি জানি সেটা কোথায় আছে।
–আশ্চর্য! কার দেহ
–যে মেয়েটি একই সঙ্গে উধাও হয়ে আর ফিরে আসেনি–নোরা ব্রড। কোন বিশেষ জায়গায় তার দেহটা রয়েছে বলে আমার ধারণা।
–কিন্তু তাহলে তো দেখছি আপনি খুবই বিপজ্জনক পথের মুখে এসে দাঁড়িয়েছেন। আমার এখানে থেকে যাওয়াই উচিত–আমার ওপর নজর রাখার জন্য।
-না, তার দরকার হবে না। আপনাকে লণ্ডনে গিয়ে দশ বছর পুরনো হয়ে যাওয়া কিছু জিনিস আবার চালু করে তুলতে হবে।
–কিন্তু…এই পরিস্থিতিতে যে কোন মুহূর্তে আপনার বিপদ ঘটতে পারে–কোন এক বিশেষ ব্যক্তি কি আপনার সন্দেহের আওতায় রয়েছে?
-মনে হয় একজন সম্পর্কে কিছু কিছু জানি। সেকারণেই আমাকে এখানে থাকতে হবে। তবে আমার মতো বৃদ্ধার বিশেষ কোন বিপদের আশঙ্কা তার কাছ থেকে নেই।
–তাহলে এখন আপনি কি করতে চাইছেন? উদ্বেগের সঙ্গে জানতে চাইলেন প্রফেসর ওয়ানস্টেড।
–ভেরিটি হান্টের মৃত্যু ও এলিজাবেথ টেম্পলের মৃত্যুর মধ্যে একটা যোগসূত্র আমি খুঁজে পেয়েছি। মিঃ র্যাফায়েল এই উদ্দেশ্যেই যে আমাকে ম্যানর হাউসে পাঠিয়েছিলেন তা আমার কাছে এখন স্পষ্ট। এখন আমি অপেক্ষা করছি একজন মানুষের কাছ থেকে কিছু শোনার জন্য। সেজন্যই আমার এখানে থাকা। আপনি আর দেরি করবেন না–তাহলে এই ট্রেনটা ধরতে পারবেন না।
–বেশ আর কি বলব–নিজের সম্পর্কে সাবধান থাকবেন।
এইসময় লাউঞ্জের দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন মিস কুক ও মিস ব্যারো।
প্রফেসর ওয়ানস্টেড ও মিস মারপল অবাক হলেন তাঁদের দেখে।
কোচের সঙ্গে তাঁদেরও যাবার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মত বদল করেছেন জানালেন তারা। দু-একদিন থেকে স্থানীয় কিছু দর্শনীয় দেখে যাবার ইচ্ছা তাদের। আপাতত গোল্ডেনবোরেই থাকবেন।
প্রফেসর ওয়ানস্টেড সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিয়ে ট্রেন ধরতে চলে গেলেন। তার গমনপথের দিকে তাকিয়ে মিস মারপল বললেন, বড় দয়ালু মানুষ। আমি ওঁর কোন আত্মীয় নই…তবু আমার জন্য এত ভাবেন–
-হ্যাঁ এমন হয়, মিস কুক বললেন, কাল আমরা গ্রোভে সেন্ট মার্টিন গির্জা দেখতে যাব-আশাকরি আপনি আমাদের সঙ্গী হবেন?
–আপনাদের সদাশয়তার জন্য ধন্যবাদ। শরীর কোনরকম বাধা না দিলে যেতে পারি।
.
১৮.
মধ্যাহ্নভোজের পর মিস মারপল বারান্দায় বসে কফি পান করছিলেন।
এমন সময় তিনি দেখতে পেলেন অ্যানথিয়া ব্র্যাডবেরি স্কটের দীর্ঘ কৃশ মূর্তি সিঁড়ি বেয়ে উঠে তার দিকে এগিয়ে আসছে। খুব বাস্তবতার সঙ্গেই হাঁপাতে হাঁপাতে আসছিল মেয়েটি।
–ওঃ মিস মারপল, আপনি এখানে। আপনি কোচে সকলের সঙ্গে যাননি জানতে পেরে ক্লোটিলডা আর ল্যাভিনিয়া আপনাকে নিয়ে যাবার জন্য আমাকে পাঠিয়ে দিল। যে কদিন এখানে আছেন, আমাদের বাড়িতেই থাকবেন। আমরা সবাই খুশি হব।