মিস মারপল দেখেই চিনতে পারলেন। এই পাদ্রীকেই স্মৃতিবাসরে দেখেছিলেন।
প্রাথমিক আলাপ পরিচয় সৌজন্যমূলক কথাবার্তার পর দুজন পাশাপাশি চেয়ারে বসলেন।
–আপনার কাছে আমি সম্পূর্ণ অচেনা মানুষ, বললেন ব্রাবাজন, ক্যারিসটাউনের হাসপাতাল হয়ে এসেছি আমি। এলিজাবেথ টেম্পল আমার এক পুরনো বন্ধু ছিলেন। মেট্রন জানালেন, মৃত্যুর আগে এলিজাবেথ আপনার সঙ্গেই শেষবারের মত কথা বলেছেন।
–হ্যাঁ। আমাকে ডেকে পাঠানোতে বেশ অবাকই হয়েছিলাম। বললেন মিস মারপল। ভ্রমণের সময়েই তার সঙ্গে দেখা হয়।
–তিনি আমার সঙ্গেই দেখা করতে আসছিলেন। আমি ফিলমিনস্টারে বাস করি–আপনাদের কোচ আগামী পরশুদিন সেখানে পৌঁছবে। তিনি আমার সঙ্গে কিছু জরুরী কথা বলতে চেয়েছিলেন।
বুঝতে পেরেছি। বললেন মিস মারপল, আমার ভেরিটি নামে একটি মেয়ের সম্পর্কে কথা বলছিলাম।
-হ্যাঁ, ভেরিটি হান্ট। বেশ কয়েক বছর আগেই সে মারা গেছে। আপনি জানতেন? বললেন আর্চডিকন।
-হ্যাঁ। ভেরিটি মিঃ র্যাফায়েলের ছেলের সঙ্গে বিয়ের জন্য বাগদত্তা ছিল। আপনি কি তার সম্পর্কে কোন খবর দিতে পারেন?
আর্চডিকন গভীর দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলেন মিস মারপলকে। পরে বললেন, আপনি মনে হচ্ছে কোন ভাবে এর সঙ্গে জড়িত।
-হ্যাঁ জড়িত। মিঃ র্যাফায়েলের মৃত্যুকালীন ইচ্ছা অনুযায়ীই আমি মাইকেলের সম্বন্ধে খোঁজখবর নিতে বেরিয়েছি।
এক মিনিট নীরব হয়ে রইলেন বৃদ্ধ আর্চডিকন।
–এলিজাবেথ আমার কাছে যা জানবার জন্য আসছিলেন, আপনাকে তা জানাতে কোন বাধা নেই। ধীরে ধীরে বললেন আর্চডিকন, ওই দুই তরুণ-তরুণী পরস্পরকে বিবাহ করবে স্থির করেছিল। আমি ওদের দুজনকেই চিনতাম। ওরা আমার কাছেই এসেছিল।
–আপনি তাদের বিয়ে দিতে রাজি হয়েছিলেন? জানতে চাইলেন মিস মারপল।
-হ্যাঁ। ওরা গোপনে আমার কাছে এসেছিল। কেননা ক্লোটিলডা-ব্র্যাডবেরি স্কট ওদের মেলামেশা বন্ধ করতে চেয়েছিল। মাইকেল র্যাফায়েল অনেক অবাঞ্ছিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। সে ছিল পথভ্রষ্ট। মেয়েদের সঙ্গে তার ব্যবহার খুবই খারাপ ছিল।
এতসব সত্ত্বেও আমি তাদের বিয়ে দিতে রাজি হই। ভেরিটি আমাকে বলেছিল, সে মাইকেলের স্বভাব ভালই জানে। তার বিশ্বাস ছিল তাকে সে ভাল হতে সাহায্য করতে পারবে।
যাইহোক, তাদের বিয়ের দিনক্ষণ সবই স্থির হয়ে গিয়েছিল। ভেরিটি তার বিয়ের কথা কাউকে জানাতে চাইনি। সম্ভবত সে ছেলেটির হাত ধরে পালাতে চেয়েছিল। সে জানতে ক্লোটিলডা কিছুতেই মাইকেলের সঙ্গে তার বিয়েটা মেনে নিতে চাইবেন না। অবশ্য এটাও সত্যি, মাইকেল কোন দিক দিয়েই ভেরিটির যোগ্য ছিল না। ক্লোটিলডা সেকথা অনেকবার ভেরিটিকে বলেও ছিলেন।
-তারপর কি হল বলুন। বললেন মিস মারপল।
–নির্দিষ্ট দিনে আমি প্রস্তুত হয়ে তাদের জন্য অপেক্ষা করছি–কিন্তু তারা এলো না। কোন সংবাদও আমাকে পাঠালো না। সবকিছু স্থির করে কেন এল না, আমি তার কিছুই জানতে পারলাম না।
এলিজাবেথের দুঃসংবাদটা পাবার পর এখানে এসে মেট্রনের কাছে আপনার কথা শুনে আমার মনে হল, তিনি মৃত্যুর আগে আপনাকে কিছু বলে গেছেন।
-তাহলে এসব কথাবার্তার জন্যই মনে হয় তিনি আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসছিলেন–যেটা ছিল তাঁর কাছে তীর্থযাত্রার মত। বললেন মিস মারপল।
–আমারও তাই বিশ্বাস। ভেরিটির বিয়েতে বাধা দেবার মত ছিলেন ক্লোটিলডা আর অ্যানথিয়া ব্র্যাডবেরি স্কট। ভেরিটি তার স্কুলের শিক্ষিকা এলিজাবেথের প্রতিও খুবই অনুরক্ত ছিল। ব্র্যাডবেরি স্কট বোনেদের কিছু জানাতে না পারলেও আমার মনে হয় ভেরিটি এলিজাবেথকে কিছু খবর দিতে পারে বা লিখে থাকতে পারে।
-আমারও তাই ধারণা। বললেন মিস মারপল। মিস টেম্পল নিজেই আমাকে বলেছেন যে তিনি জানতেন ভেরিটি মাইকেলকে বিয়ে করতে চলেছে। কিন্তু কেন বিয়ে করেনি, আমার এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জবাব দিয়েছিলেন সে মারা গিয়েছিল।
কিন্তু, আর্চডিকন বললেন, আমি বিশ্বাস করি না ভেরিটি বা মাইকেল নিজে থেকে বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে আলাদা হয়ে যায়। মাইকেলের চরিত্র সম্পর্কে যদি ভেরিটির মনে কোন দ্বিধা উপস্থিত হত তাহলে সে নিশ্চয় আমাকে জানিয়ে দিত। সে ছিল চমৎকার মেয়ে।
একটু থেমে তিনি আবার বললেন, আমার ভয় হয়, একটা মাত্র ব্যাপারই ঘটে থাকতে পারে।
–মৃত্যু? বললেন মিস মারপল।
–হ্যাঁ। মৃত্যু। থেমে থেমে উচ্চারণ করলেন আর্চডিকন।
–ভালবাসা!
আর্চডিকন চোখ তুলে তাকালেন মিস মারপলের মুখের দিকে।
–আপনি কি বোঝাতে চাইছেন? বললেন তিনি।
–এই কথাটা মিস টেম্পল আমাকে বলেছিলেন। বললেন মিস মারপল। বলেছিলেন, ভালবাসাই পৃথিবীর সবচেয়ে ভীতিকর শব্দ।
-মনে হচ্ছে বুঝতে পেরেছি। বুঝতে পেরেছি। মাথা দুলিয়ে বললেন আর্চডিকন। সেই চিরাচরিত জেকিল আর হাইড। বিযুক্ত ব্যক্তিত্ব। মাইকেল র্যাফায়েল–মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত মানুষ–ওর মধ্যে দুটি সত্ত্বা ছিল। সে ভেরিটিকে খুন করেছিল।…একদিন হয়তো সব জানা যাবে।
দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন আর্চডিকন। ব্রাবাজন।
–তাহলে এই আপনার বিশ্বাস? আমিও অবশ্য তাই মনে করি। বললেন মিস মারপল।
–কিন্তু তারপর?
–এখনও তা জানি না। আমার ধারণা আসলে কি ঘটেছিল মিস টেম্পল তা জানতে শুরু করেছিলেন বা জানতেন।
এরপর আত্মগতভাবেই তিনি বলে ওঠেন–ভালোবাসা–ভালোবাসা–বড় ভয়ঙ্কর এক