-লণ্ডনে কিছু জরুরী কাজের জন্য আমার ফিরে যাওয়া দরকার। তবে এখানে আপনার কোন কাজে লাগলে থেকে যাবো।
–এখনই কোন সাহায্যের দরকার পড়বে মনে করছি না। এদিকে আপনারও নিজস্ব কোন কাজ আছে আমার মনে হয়।
–আমি কেবল আপনার সঙ্গে দেখা করবার জন্যই এই ভ্রমণে এসেছিলাম।
-আমার সঙ্গে তো দেখা হল আপনার। আমি যা জানি তা-ও এখন আপনার আর অজানা নেই। আপনার নিজের ক্ষেত্রেও যে কিছু খোঁজ করার রয়েছে তা আমি বুঝতে পারি। তবে এখান থেকে যাওয়ার আগে মনে হয় আপনাকে দিয়ে কিছু সাহায্য হতে পারে।
–আপনার কি কিছু ধারণা হয়েছে? সেই অশুভ কিছুর গন্ধ পেয়েছেন?
–এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা খুব সুবিধার মনে হচ্ছে না।
–আর মিস টেম্পলের মৃত্যুও যে দুর্ঘটনা নয় তাও বুঝতে পারছেন?
–এটা দুর্ঘটনা নয়। একটা কথা আপনাকে বলা হয়নি। তিনি আমাকে বলেছিলেন, তীর্থযাত্রায় বেরিয়েছেন।
–খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার। তীর্থযাত্রা কোথায় বা কার কাছে, আপনাকে কি তা জানিয়েছিলেন?
-না, মিস মারপল বললেন, আমার বিশ্বাস দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু না হলে তিনি আমাকে বলতেন।
–কিছু কি অনুমান করতে পেরেছেন?
–না। তবে বুঝতে পারছি তার এই তীর্থযাত্রা মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি যেখানে যেতে চেয়েছিলেন বা যার সঙ্গে দেখা করতে চলেছিলেন, তা তাঁকে করতে দেওয়া হয়নি। দৈবানুগ্রহ না হলে তা আর জানার উপায় নেই।
এজন্যেই কি এখানে থেকে যাচ্ছেন?
–আরও একটি বিষয় আছে। নোরা ব্রড নামে একটি মেয়ের সম্পর্কেও খোঁজখবর নিতে হবে।
–নোরা ব্রড! চিন্তিত হলেন প্রফেসর ওয়ানস্টেড।
-হ্যাঁ, এই মেয়েটি ভেরিটি হান্টের সঙ্গে প্রায় একই সময়ে অদৃশ্য হয়। কথাটা আপনিই আমাকে বলেছিলেন, নিশ্চয় আপনার মনে আছে। মেয়েটির অনেক ছেলেবন্ধু ছিল। ওর সম্পর্কে আরও কিছু জানতে পারলে আমার তদন্তের সুবিধা হতে পারে।
–বেশ, তাহলে নিজের পথেই চলুন। বললেন প্রফেসর ওয়ানস্টেড।
.
পরদিন যথাযযাগ্য মর্যাদা সহকারে মিস টেম্পলের স্মৃতিবাসর অনুষ্ঠিত হল। ভ্রমণ দলের সকলেই উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অনেকের সঙ্গে মিসেস গ্লাইন ও তার বোন মিস ক্লোটিলডাও ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন একজন শুভ্রকেশ বয়স্ক পাদ্রী।
গির্জা ছেড়ে বেরিয়ে আসার পথে মিস মারপল জানতে পারলেন অনেকে ফিরে যাওয়া মনস্থ করলেও যেকজন থাকবেন তাদের নিয়েই ভ্রমণ-কর্মসূচী চলবে।
মিস মারপল নিজের মনেই গ্রামের পথ ধরে এগিয়ে চললেন। তিনি হাতব্যাগ থেকে একটুকরো কাগজ বার করে দেখে নিলেন। তাতে দুটো ঠিকানা লেখা ছিল।
প্রথম ঠিকানা হল এক মিসেস ব্ল্যাকেটের রাস্তার শেষে ছোট বাগানবাড়িতে তিনি থাকেন।
তাকে বাড়িতে পাওয়া গেল। মিস মারপলকে সাদরে বসার ঘরে নিয়ে বসলেন মিসেস ব্ল্যাকেট।
মিসেস মারপল একগ্লাস জল চেয়েছিলেন। স্মৃতিবাসর থেকে ফেরার পথে অসুস্থ বোধ করছেন বলে তিনি জানান।
একগ্লাস জল অতিথির দিকে এগিয়ে দিয়ে মিসেস ব্ল্যাকেট বললেন, মহিলাটি তাহলে দুর্ঘটনায় মারা গেলেন? আমারও তাই ধারণা অবশ্য। করোনার সবকিছুর মধ্যেই অপরাধের গন্ধ পায়।
–হ্যাঁ, বরাবরই এরকম হয়। আমি একটা মেয়ের কথা শুনেছিলাম, নোরা ব্রড
-হ্যাঁ, নোরা! সে আমার পিসতুতো বোনের মেয়ে। বড় উছুঙ্খল–আমি বারবার বলেছি। আমার বোন ন্যানসি ব্রডকে। অমন করে ছেলেদের পেছনে লেগে থাকলে গণ্ডগোল না হয়ে পারে? শেষে হলও তাই।
–আপনি বলতে চাইছেন
–হ্যাঁ, ছেলেটি এখানেই বাস করছিল। নোরা চলে গেলে বেচারি খুবই ভেঙ্গে পড়েছিল।
–নোরা চলে গিয়েছিল?
–একজন অচেনা লোকের গাড়িতে তাকে দেখা গিয়েছিল। লোকে বলে ওই গাড়িতে চড়ার পরেই সে খুন হয়। আমার মনে হয় না এরকম কিছু ঘটেছে, তাহলে এতদিনে তার দেহ পাওয়া যেত।
–তাই মনে হয়। বললেন মিস মারপল।
–অনেকদিন হয়ে গেল, সাত আট বছর প্রায়, আমার ধারণা ও ফিরে আসবে।
–আপনার বোন ছাড়া সে কি আর কোথাও যেত?
-হ্যাঁ, ওই পুরনো জমিদার বাড়ির বোনেদের কাছে যেত। মিস ক্লোটিলডা তাকে খুব ভালবাসতেন। পড়াশুনায় মনোযোগী হবার জন্য অনেক বোঝাতেন। সে কোন কথাই কানে তোলেনি। তবু ভাল বলব, ম্যানর বাড়ির সেই…নামটা ভুলে গেছি, মেয়েটির মতো তাকে খুন হতে হয়নি।
এমনি আর দু-চার কথা বলার পর মারপল শরীর ঠিক হয়ে গেছে বুঝতে পেরে মিসেস ব্ল্যাকেটকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলেন।
মিস মারপলের প্রশ্নের জবাবে সে বলল, ওঃ নোরা ব্রড, সে তো অনেক দিন গ্রামে নেই। কারও সঙ্গে চলে গিয়েছে–ছেলেদের সঙ্গেই তো রাতদিন ঘুরে বেড়াতো। আপনি কি কোন দরকারে ওর সঙ্গে দেখা করতে চাইছিলেন?
-হ্যাঁ, আমার এক বন্ধুর চিঠি পেয়ে ওর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। তুমি ওর সঙ্গেই স্কুলে পড়তে, তাই না?
-হ্যাঁ, আমরা এক ক্লাসেই পড়তাম। কিন্তু বরাবর ছেলেপাগল ছিল। যে-ই ওকে ডাকতো, তার সঙ্গেই গাড়িতে উঠত। ওরকম একটা গাড়িতে ওঠার পরেই তাকে আর দেখা যায়নি। তবে রক্ষা এটাই যে ওকেও খুন হতে হয়নি।
যাইহোক, তাহলে আর দেখা হল না।
নিজের মনে বলতে বলতে বিদায় নিলেন মিস মারপল।
৪. আর্চডিকন ব্রাবাজন
১৬.
আর্চডিকন ব্রাবাজন। গোল্ডেনবোরের লাউঞ্জে বসে অপেক্ষা করছিলেন মিস মারপলের সঙ্গে দেখা করবেন বলে।