এরপর যোয়ান ক্রফোর্ডের আহ্বান এলো। তার নাম বয়স জেনে নেবার পর ডাঃ স্টোকস তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি দলের সকলের সঙ্গে হাঁটছিলেন।
-না, আমরা রাস্তা ছেড়ে অন্য দিকে ঘুরে ওপরে উঠছিলাম।
–আপনার একজন সঙ্গী ছিল?
–হ্যাঁ, মিস এমলিন প্রাইস।
–আপনারা মিস টেম্পলকে দেখতে পেয়েছিলেন?
-বাঁক ঘোরার সময় মনে হয় তাকে দেখেছিলাম। এরপর পাহাড়ের আড়ালে চলে যাওয়ায় আর দেখতে পাইনি।
–আপনাদের সামনে পাহাড়ের উঁচুতে কাউকে দেখেছিলেন?
–হ্যাঁ, পাহাড়ের ওদিকে অনেক পাথরের চাঁই ছিল।
–আপনি ওখানে কাউকে দেখেছিলেন?
–হ্যাঁ, কেউ পাথরের চাঁই ঠেলছিল।
–যাকে আপনি দেখেছিলেন সেকি পুরুষ ছিল?
–অত উঁচুতে ঠিক বুঝতে পারা যায়নি। তবে পুরুষ বা স্ত্রীলোক যেই ঠেলে থাকুক, পাথরটা আলগা হয়েছিল।
–আসলে ওখানে কে ছিল ভাবছেন, কোন পুরুষ না স্ত্রীলোক?
–যেই হোক, তার গায়ে ট্রাউজার আর পুলওভার ছিল। পোশাকটা পুরুষেরই যোগ্য।
–পুলওভারের রঙ কি রকম ছিল?
–গাঢ় লাল আর কালো নকশা। লম্বা কিছু দাগও ছিল–ওরকম পুলওভার পুরুষেরই হওয়া সম্ভব।
-এরপর কি হলো?
-এরপর পাথরটা গড়াতে শুরু করল। আমি আর এমলিন একটা আর্তনাদ শুনতে পেলাম।
-তারপর?
–আমরা বাঁকটা ঘুরে ছুটে গেলাম কি হল দেখতে।
–কি দেখলেন?
–পাথরের নিচে একটা দেহ–আর অন্য সকলে ছুটে আসছে।
–আর্তনাদ কি মিস টেম্পলই করেছিলেন?
–আমার ধারণা তাই। তবে বাঁক ঘুরে যারা এসেছিলেন তাদের কেউও হতে পারেন। ওঃ কী মর্মান্তিক।
–সেই লাল আর কালো পুলওভার পরা ওপরের মূর্তির কি হল? সে কি তখনও ওই পাথরের চাঁইগুলোর কাছেই ছিল?
–তা বলতে পারিনি। সেদিকে আর তাকাইনি মনে হয়।
–ওই মূর্তি আপনাদের যাত্রীদলের কেউ হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
–ওঃ না, আমি নিশ্চিত। আমাদের মধ্যে ওরকম লাল-কালো পুলওভার পরা কেউ ছিলেন না।
-ধন্যবাদ মিস ক্রফোর্ড।
এরপর সাক্ষ্য দিতে উঠল এমলিন প্রাইস। তার কাহিনী যোয়ানারই মত।
সবার সাক্ষ্য নেওয়া শেষ হলে করোনার ঘোষণা করলেন মিস টেম্পলের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হবার মত যথেষ্ট প্রমাণ নেই। তাই ইনকোয়েস্ট মুলতবী রইল।
.
১৫.
ইনকোয়েস্ট থেকে সকলে গোল্ডেনবোর হোটেলে ফেরার পথে চলতে চলতে মিস মারপল প্রফেসর ওয়ানস্টেডকে জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কি হবে?
পুলিসের তদন্ত হবে আরো। ওই দুজনের সাক্ষ্যই গুরুত্বপূর্ণ। বললেন প্রফেসর ওয়ানস্টেড।
-হ্যাঁ।
করোনার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তদন্ত চলবে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এমন রায় করোনার দিতে পারবেন না আশা করি।
–সেটা কেউই আশা করে না। ওদের দুজনের সাক্ষ্য সম্বন্ধে আপনার কি মনে হল?
প্রফেসার ওয়ানস্টেড পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকালেন মিস মারপলের দিকে। বললেন, এব্যাপারে আপনার কি কোন ধারণা আছে? ওরা কি বলবে তা অবশ্য আগেই আমরা জানতাম।
–ওদের বলা ওই লাল-কালো পুলওভার ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। বললেন মিস মারপল।
–আমারও তাই ধারণা।
–আমি মনে করছি, একটা মূল্যবান সূত্রের সন্ধান এ থেকে আমরা পেতে পারি।
কথা বলতে বলতে ওঁরা হোটেলে পৌঁছে গেলেন। ততক্ষণে অন্যান্যরাও পৌঁছে গিয়েছিলেন। মধ্যাহ্নভোজের আগে সকলকেই টম্যাটোর রস, শেরী ও অন্যান্য সুরা পরিবেশন করা হয়েছিল।
মিসেস স্যাণ্ডবার্ন সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি করোনার এবং পুলিস ইনপেক্টরের পরামর্শ নিয়েছি, আপনাদের সেকথা জানাচ্ছি। মেডিক্যাল সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সেইকারণে আগামীকাল সকাল এগারোটায় গির্জায় স্মৃতিবাসর অনুষ্ঠিত হবে।
একটু পরেই আমি স্থানীয় ভিকার মিঃ কোর্টনির সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি। স্মৃতিবাসরের পরদিনই আমাদের ভ্রমণ শুরু করতে চাই।
ইতিমধ্যে দু একজন লণ্ডন ফিরে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সন্দেহ নেই এই মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি বিশ্বাস করি, মিস টেম্পলের মৃত্যু দুর্ঘটনার ফলেই ঘটেছে। অবশ্য এব্যাপারে এখনো পুলিসি তদন্ত হবে।
কোন ভ্রমণকারী খেলাচ্ছলেও ওই পাথরটা ঠেলে থাকতে পারেন। সেকথা তার এগিয়ে এসে বলা উচিত। এটা আমরা সকলেই বিশ্বাস করি যে মিস টেম্পলের মত মহিলার কোন শত্রু ছিল না। যাইহোক, এই দুঃখজনক ঘটনা নিয়ে আমরা আর কোন আলোচনা করব না…আমাদের মন ভাল রাখার জন্যই।
কিছুক্ষণ পরেই মধ্যাহ্নভোজ শেষ হল। মিস টেম্পলের মৃত্যু নিয়ে কেউই আর কোন কথা বললেন না।
–আপনি কি ভ্রমণে যাবেন?
প্রফেসার ওয়ানস্টেড মিস মারপলকে জিজ্ঞেস করলেন।
-না। এখানেই আরও কয়েকদিন থাকা দরকার বলে আমি মনে করছি। বললেন মিস মারপল।
–থাকবেন কোথায়? গোল্ডেনবোরে না ওই জমিদার বাড়িতে?
-সেই সিদ্ধান্ত নেবার আগে আমি অপেক্ষা করছি ম্যানর হাউস থেকে আর কোন আমন্ত্রণ পাই কিনা। আগে আমাকে দুদিনের জন্য নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। অবস্থা বুঝে দরকার মত গোল্ডেনবোরেই থেকে যাব না হয়।
–সেন্ট মেরী মিডে আপাতত ফিরতে চাইছেন না?
–এখানে থেকে দু-একটা কাজ আমাকে করতে হবে। একটা অবশ্য ইতিমধ্যে করেও ফেলেছি। আপনি কি সকলের সঙ্গেই যাচ্ছেন?
–আপনার কোন প্রয়োজনে লাগতে পারি বলে মনে করছেন আপনি?
–যদি যান তাহলে আপনাকে একটা তদন্তের কথা বলব। তাতে আমার খুবই উপকার হবে। এখানে আমার থাকার বিশেষ কারণ হল স্থানীয়ভাবে কিছু খোঁজখবর নিতে চাই। ফলাফল কি হবে তা অনিশ্চিত বলেই এখন কিছু বলতে চাইছি না আপনাকে।