.
০২.
মিঃ র্যাফায়েলের মৃত্যুর এক সপ্তাহ পরে মিস মারপল একটা চিঠি পেলেন। চিঠিটা এসেছে ব্লুমসবারীর সলিসিটর কোম্পানি মেসার্স ব্রডরিব ও সুস্টারের কাছ থেকে।
অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে তারা অনুরোধ জানিয়েছে আগামী সপ্তাহের যে কোন দিন মিস মারপল যেন তাদের অফিসে সাক্ষাৎ করেন।
বিষয়টা নাকি তাঁরই অনুকূলে। অবশ্য বিশেষ ভাবে একটা দিনের কথাও তারা উল্লেখ করেছে–আগামী বৃহস্পতিবার, ৪ঠা তারিখে।
এই চিঠির যোগসূত্র উদ্ধার করতে পারলেন না মিস মারপল। কপালে কুঞ্চন রেখা জাগিয়ে অনেকক্ষণ বসে ভাবলেন। সলিসিটরের চিঠি মানেই মামলাটামলা কিছুর ব্যাপার হবে–এরকম অনুমান করলেন। আবার এমনও হতে পারে, মিঃ র্যাফায়েল তাকে স্মৃতি হিসেবে কিছু দান করে গেছেন তার উইলে। বই বা এই জাতীয় কিছু। তবে সেসব ডাকে পাঠিয়ে দেওয়াই তো সম্ভব ছিল।
কিন্তু আগামী বৃহস্পতিবার তার পক্ষে লণ্ডনে যাওয়া সম্ভব হবে না। এখানে মহিলা সমিতির একটা সভায় যোগ দিতে হবে। তিনি পরের সপ্তাহে একটা তারিখ জানিয়ে চিঠি লিখে দিলেন এবং তাদের জবাবে সম্মতিও পেয়ে গেলেন।
জবাবী চিঠিতে সই করেছেন জে. আর. ব্রডরিব। মিস মারপল অনুমান করলেন, সম্ভবত তিনিই কোম্পানির প্রধান অংশীদার।
.
নিজেদের অফিসে বসেছিলেন মিঃ ব্রডরিব আর মিঃ সুস্টার। আর মিনিট পনেরোর মধ্যেই তারা মিস মারপলকে আশা করছেন। সেরকমই চিঠিতে জানিয়েছিলেন তিনি।
ভদ্রমহিলা কেমন হবেন, মিঃ র্যাফায়েলের সঙ্গে তিনি কোন্ সূত্রে পরিচিত এসব কোন কথাই তারা মিঃ র্যাফায়েলের কাছ থেকে শোনেন নি।
নির্দিষ্ট সময়েই মধ্যবয়স্ক কৃশ চেহারার মিঃ ব্রডরিব অভ্যর্থনা জানালেন মিস মারপলকে।
-ইনি আমার অংশীদার মিঃ সুস্টার।
মেদবহুল চেহারার তরুণ ভদ্রলোকের সঙ্গে ব্রডরিব পরিচয় করিয়ে দিলেন।
মিঃ সুস্টার একটা চেয়ার এগিয়ে দিলেন। ধন্যবাদ জানিয়ে আসন গ্রহণ করলেন মিস মারপল।
সৌজন্যমূলক প্রাথমিক কিছু কথাবার্তার পর মিঃ ব্রডরিব আসল প্রসঙ্গের অবতারণা করলেন।
–মিঃ র্যাফায়েলের মৃত্যুসংবাদ সম্ভবত কাগজে দেখেছেন আপনি?
–হ্যাঁ, কাগজেই দেখেছি।
–আমাদের ধারণা তিনি আপনার বন্ধু।
–ওয়েস্ট ইণ্ডিজে প্রথম দেখা হয়েছিল, প্রায় বছরখানেক আগে।
নিশ্চয় ভালভাবেই চিনতেন তাঁকে।
–সেভাবে বলা যাবে না। দুজনে একই হোটেলে উঠেছিলাম। মাঝে মাঝে কথা হতো। আমি থাকি গ্রামের দিকে। কাজেই ইংলণ্ডে ফিরে এসে দেখাসাক্ষাতের প্রশ্ন ছিল না। তিনি খুবই অসাধারণ মানুষ ছিলেন।
-আপনার সম্পর্কে তার খুব উচ্চ ধারণা ছিল, বললেন ব্রডরিব, তার উইলে আপনার জন্য কিছু টাকা রাখা আছে। একবছর পরে তার মালিকানা আপনার হবে। অবশ্য তা হবে তার একটা প্রস্তাবে আপনার সম্মতি-অসম্মতি শর্তসাপেক্ষে।
কথা শেষ করে মিঃ ব্রডরিব টেবিলের ওপর থেকে শীলমোহর আঁটা একটা দীর্ঘ খাম মিস মারপলের দিকে বাড়িয়ে দিলেন।
–এটা পড়লেই আপনি সব জানতে পারবেন। তাড়াহুড়োর কিছু নেই, আপনি মনস্থির করার জন্য সময় নিতে পারেন।
সযত্নে খামটা খুলে টাইপ করা কাগজটা বার করলেন তিনি।
–এটা আপনার হাতে তুলে দিয়ে প্রাপ্য অর্থের কথা জানিয়ে দেওয়ার নির্দেশ আমাকে দেওয়া আছে। অর্থের পরিমাণ হল বিশ হাজার পাউণ্ড ।
-বিশ হাজার পাউণ্ড। এত টাকা।
প্রবল বিস্ময়ে প্রায় চোখ কপালে উঠল মিস.মারপলের।
এবারে তিনি কাগজের লেখায় চোখ বোলালেন। তারপর মিঃ ব্রডরিবকে লক্ষ্য করে বললেন, খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার। শর্তের কথাটা আপনার নিশ্চয় জানা আছে?
-হ্যাঁ, মিঃ র্যাফায়েল আমাকে বলেছিলেন।
–এর ব্যাখ্যা কিছু ।
–আমি তাকে জানিয়েছিলাম, তিনি ঠিক কি বলতে চাইছেন তা বুঝে ওঠা আপনার পক্ষে হয়তো কঠিন হবে। কিন্তু তিনি কোন ব্যাখ্যা করেননি।
–আমাকে এ নিয়ে একটু ভাবতে হবে। বললেন মিস মারপল। আমার বয়স হয়েছে, এক বছর পরে টাকাটা নেবার জন্য আমি বেঁচে না-ও থাকতে পারি। বুঝতে পারছি না এ ধরনের তদন্তের ব্যাপারে আরও যোগ্য লোকের কথা না ভেবে আমার মত একজন মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধার কথা তিনি কেন ভাবলেন?
–তিনি আপনাকেই মনোনীত করে গেছেন। যদি কিছু মনে না করেন, একটা কথা জিজ্ঞেস করি, কোন অপরাধ বা অপরাধের তদন্তের ব্যাপারে আপনি কি কখনো জড়িয়ে পড়েছিলেন?
–সত্যি কথা বলতে গেলে সেটা পেশাদারী কোন ব্যাপার নয়। কোন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কোন কালেই আমি যুক্ত ছিলাম না।
ওয়েস্ট ইণ্ডিজে থাকবার সময় ওখানে ঘটে যাওয়া একটা ব্যাপারের সঙ্গে মিঃ র্যাফায়েল ও আমার যোগাযোগ ঘটে গিয়েছিল।
–আপনারা দুজনে সেটার সমাধান করেছিলেন?
-ঠিক সেরকম বলা চলেনা। কয়েকটা যোগসূত্র আমার নজরে এসেছিল, মিঃ র্যাফায়েলের ব্যক্তিত্বের সহায়তায় আমি একটা খুনের ব্যাপার রুখে দিতে পেরেছিলাম। বয়স ও শরীরের কারণে কাজটা আমার একার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। মিঃ র্যাফায়েলও ছিলেন পঙ্গু মানুষ। তার একার পক্ষেও সম্ভব ছিল না। বন্ধুর মত আমরা একসঙ্গে কাজটা করেছিলাম।
বক্তব্য শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন মিস মারপল। বললেন, এসম্পর্কে আর কোন নির্দেশ পেলে আমাকে জানাবার অনুরোধ করছি কেন না আমাকে ঠিক কি করবার কথা বলে গেছেন তা এখনো আমার কাছে পরিষ্কার নয়।