মিস মারপল গ্রামের রাস্তা ধরে সেদিকে চলেছিলেন। এখনো কুড়ি মিনিট বাকি…তাই ধীরে ধীরে হাঁটছিলেন তিনি।
পথের পাশে দোকানের সারি। একটা পশমের দোকান দেখতে পেয়ে দাঁড়ালেন। কাউন্টারের সামনে একজন বয়স্কা মহিলা দাঁড়িয়েছিলেন।
মিস মারপল ব্যাগ থেকে একটুকরো পশম বার করে পশমের রঙ মেলাতে মেলাতে বয়স্ক মহিলার সঙ্গে কথা শুরু করলেন।
জানা গেল মহিলার নাম মিসেস মেরীপিট। মিস টেম্পলের দুর্ঘটনার খবরও জানেন। জানালেন একবছরে ওরকম তিনটে পাথর গড়িয়ে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
-খুবই দুঃখের কথা। বললেন মিস মারপল।
-আজ করোনার হয়তো এসব বিষয়ে কিছু বলবেন। রাস্তা সারাবার ব্যাপারে করোনারের কোন দায়িত্ববোধই নেই।
মিস মারপল পুলওভার নিয়ে কথা বললেন। খুব উজ্জ্বল রঙের। মিথ্যা করে জানালেন, তাঁর এক নাতির জন্য।
বিদায় নেবার আগে মিস মারপল এ অঞ্চলের আগের খুনের ঘটনাগুলোর প্রসঙ্গ তুললেন।
–পুলিস সেই খুনে লোকটিকে গ্রেপ্তার করেছে, বললেন মিসেস মেরীপিট, চমৎকার সুন্দর ছেলে, ওর বাবা নাকি মস্ত ধনী। দুটি মেয়েকে নাকি খুন করেছিল। আমার মনে হয় ও মানসিক রোগগ্রস্ত। চুরিডাকাতি, চেক জালকরা এমনি অনেক অভিযোগই ছিল তার নামে।
-একটা মেয়ের দেহ তো শুনেছি পাওয়া গিয়েছিল।
–হ্যাঁ। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম ওটা নোরা ব্রড। সে হল মিসেস ব্রডের ভাইঝি। ছেলে পাগল মেয়ে। একইরকম ভাবে বাড়ি থেকে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। তাই ছমাস পরে যখন দেহটা পাওয়া গেল সকলে নোরা ব্রড বলেই মনে করেছিল।
–তবে কি অন্য কেউ
-হ্যাঁ, অন্য একজন। ওর কোন সন্ধান আর পাওয়া যায়নি। ওরা বলে ওর মৃতদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে, নয়তো মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে। কে বলবে কি হয়েছে।
–যে মেয়েটি খুন হয়েছে সে তো এই অঞ্চলেই থাকতো শুনেছি। বললেন মিস মারপল।
-ও হ্যাঁ, যার দেহ প্রথমে নোরা ব্রডের মনে করেছিল পুলিস? মেয়েটার নামটা ভুলে গেছি…হোপে না ভেরিটি…এমনি কিছু হবে। ম্যানর হাউসে থাকতো।
–ওর বাবা-মা দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল?
-হ্যাঁ। মেয়েটি ওখানেই থাকতো। সম্ভবত মিসেস গ্লাইন মেয়েটির মায়ের বন্ধু ছিলেন। সবচেয়ে বড় বোন ক্লোটিলডা মেয়েটিকে খুব ভালবাসতেন। সে উধাও হলে তিনিই খুব ভেঙ্গে পড়েন।
–তিন বোনের ছোট সম্ভবত অ্যানথিয়া তাই না।
-হ্যাঁ, উনি একটু অন্যরকম। লোকে বলে কেমন নাকি একা একা ঘুরে বেড়ান…কথা বলতে বলতে মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকান হঠাৎ হঠাৎ। আমি অবশ্য জানি না। গ্রামের লোকের মুখেই শোনা যায়। ওই মেয়েটির মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে নাকি ওর মধ্যে খুশির ভাব জেগেছিল। অদ্ভুত কাণ্ড।
বিদায় জানিয়ে মিস মারপল পথে নামলেন। এখনো দশ মিনিট হাতে আছে। তিনি ডাকঘরের দিকে চললেন। সেটা মার্কেট স্কোয়ারের পাশেই।
মধ্যবয়স্কা এক মহিলা কাউন্টারের পেছনে ছিলেন তাঁর কাছ থেকে কিছু ডাকটিকিট কিনলেন মিস মারপল।
দু-একজন আরো লোক ছিল। তারা কাজ সেরে চলে গেল। মিস মারপল তাকিয়ে দেখলেন, চারদিক খালি। তিনি সন্তর্পণে জানালার দিকে এগিয়ে গেলেন।
–মাপ করবেন, একটু বিরক্ত করব আপনাকে। আমি মস্ত একটা ভুল করে ফেলেছি। আসলে যত বয়স বাড়ছে ততই সব কেমন ভুলভাল হয়ে যাচ্ছে দেখছি। দানের জন্য কিছু কাপড় পার্সেল করে পাঠিয়েছিলাম…ঠিকানাও লিখেছিলাম…আজ সকালেই দেখলাম ভুল ঠিকানা লেখা হয়ে গিয়েছিল।
আপনারা পাঠানো পার্শ্বেলের তালিকা রাখেন কিনা জানি না…তবে ঠিকানাটা যদি মনে থেকে থাকে। আসলে আমি লিখতে চেয়েছিলাম দি ডকইয়ার্ড অ্যাণ্ড টেমসসাইড ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।
পোস্ট মিস্ট্রেস মিসেস ভিনিগার সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকালেন মিস মারপলের দিকে। বয়স্ক মানুষের ভুলভ্রান্তির ব্যাপারটা তার অজানা নয়।
–আপনি নিজে এসেছিলেন। তিনি জানতে চাইলেন।
-না, ওদের একজন কেউ এসেছিল। আমি ম্যানর হাউসে আছি। মিসেস গ্লাইন বলেছিলেন, তার এক বোনকে দিয়ে পাঠিয়ে দেবেন।
-ও, হ্যাঁ, আচ্ছা…মঙ্গলবারে, তাই না? মনে পড়েছে…ওদের সবচেয়ে ছোট বোনটি মিস অ্যানথিয়া নিয়ে এসেছিল পার্সেলটি।
-হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওই দিনই হবে।
–আমার মনে পড়ছে। বেশ ভারিই ছিল…কিন্তু যেরকম বললেন ঠিকানা তো তা ছিল না। ওতে লেখা ছিল রেভারেণ্ড ম্যাথুজ-দি ইস্টহ্যাম উইমেন অ্যাণ্ড চিলড্রেন উলেন ক্লোদীং অ্যাপীল।
–হ্যাঁ, হা, দু হাত জড়ো করে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন মিস মারপল এমনি ভঙ্গিতে বলে উঠলেন, ঠিক মনে রেখেছেন দেখছি, বড়দিনের সময় কিছু জামাকাপড় আমি ওদের পাঠিয়েছিলাম। ওদের ঠিকানাটাই ভুল করে লিখে ফেলেছিলাম। দয়া করে ঠিকানাটা আর একবার বলুন।
মিস মারপল তাঁর নোটবই বার করে ঠিকানাটা টুকে নিলেন।
মিসেস ভিনিগার বললেন, কিন্তু পার্সেলটা তো পাঠানো হয়ে গেছে।
-আমি ওদের ভুলের কথা লিখে পার্সেলটা ডকইয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশনের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে বলতে পারব। ওঃ অনেক উপকার করলেন…অজস্র ধন্যবাদ।
মিস মারপল ডাকঘর থেকে বেরিয়ে পথে নামলেন।
.
ইনকোয়েস্টে ডঃ স্টোকস একে একে সকলের সাক্ষ্য নিলেন। মস্তিষ্কের আঘাতের ফলেই মিসেস টেম্পেলের মৃত্যু হয়েছিল পুলিসের ও ডাক্তারি সাক্ষ্যে একথা জানানো হলো। মিসেস স্যাণ্ডবার্ন কোচ ভ্রমণের সব ব্যবস্থা, আর বিকেলে কিভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেকথা জানালেন।