–হ্যাঁ। অসাধারণ চাতুরি বলতে হবে।
–এমন হতে পারে মিস টেম্পলের কোন প্রাক্তন ছাত্রী বা তার অভিভাবক শ্রেণীর কেউ, মিস টেম্পল তার সম্পর্কে মারাত্মক কিছু জানতেন, তা প্রকাশ হবার সম্ভাবনা সে স্তব্ধ করতে চেয়েছে। বললেন মিস মারপল।
-হ্যাঁ, আপনি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন, বললেন প্রফেসর ওয়ানস্টেড, এখন দেখা যাচ্ছে মিঃ র্যাফায়েল ইচ্ছাকৃতভাবেই আপনার ভ্রমণের বিরতি ঘটিয়েছিলেন যাতে এখানেই আমাদের সাক্ষাৎ ঘটে। আর–
আর আমাদের অজানা এমন কোন তথ্য জানতে পারি।
–অনেককাল আগে কয়েকটা খুনের ঘটনা পর পর ঘটে গিয়েছিল। জেসলিন সেন্ট মেরী থেকে দুটি মেয়ে অদৃশ্য হয় জানানো হয়েছিল। ছমাস পরে বেশ কয়েক মাইল দূরে একজনের দেহ পাওয়া যায়। তাকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল মাইকেল র্যাফায়েলের সঙ্গে।
–দ্বিতীয়জন?
–মেয়েটির নাম নোরা ব্রড। তার অনেক ছেলেবন্ধু ছিল শোনা যায়। তার দেহ পাওয়া যায়নি। কথা বলতে বলতে ক্যারিসটাউনের হাসপাতালের সামনে গাড়ি পৌঁছে গেল। গাড়ি থেকে নেমে প্রফেসরের সঙ্গে ভেতরে ঢুকলেন মিস মারপল। একজন তাকে সিস্টার বার্কারের ঘরে নিয়ে গেল। তাঁর সঙ্গেই প্রফেসর ফোনে কথা বলেছিলেন।
লম্বা কৃশকায় মহিলা সিস্টার বার্কার। মিস মারপলের সঙ্গে পরিচিত হবার পরে বললেন, হ্যাঁ, আপনার কথাই আমি জানিয়েছিলাম। কি ব্যবস্থা করা হয়েছে আপনাকে জানাচ্ছি।
এরপরে তিনি জানালেন, মিস টেম্পল প্রায় কোমার অবস্থায় রয়েছেন। মাঝে মাঝে জ্ঞান ফিরলে তিনি আপনার নাম করছেন–প্রফেসর ওয়ানস্টেড নিশ্চয় আপনাকে বলেছেন। এবারে একটু ধৈর্য ধরে তার ঘরে একটু অপেক্ষা করতে হবে। জ্ঞান ফিরে উনি কিছু বললে আপনি তা লিখে নেবেন। অবশ্য এমনও হতে পারে জ্ঞান না ফিরে তিনি মারাও যেতে পারেন। একজন নার্স কাছাকাছিই পর্দার আড়ালে থাকবে। মিস টেম্পলের কথা লিখে নেবার জন্য একজন পুলিস অফিসারও ওখানে আছেন। তাকেও যাতে মিস টেম্পল দেখতে না পান ডাক্তার সেভাবেই ব্যবস্থা করেছেন। মিস টেম্পল আপনাকে যা বলতে চান নিশ্চয়ই তা বলবেন। আশা করি আপনার এতে অসুবিধা হবে না।
মিস মারপলকে নিয়ে সিস্টার বার্কার একটা ছোট কামরায় এলেন। ঘরে মৃদু আলো, জানালার পর্দা টানা। খাটে মিস টেম্পল শায়িতা।
সিস্টার বার্কার রোগিনীকে পরীক্ষা করে মিস মারপলকে পাশে একটা চেয়ারে বসতে ইঙ্গিত করলেন।
পর্দার আড়াল থেকে নোটবুক হাতে এক তরুণ এগিয়ে এল। সিস্টার বার্কার বললেন, ডাক্তার এরকমই বলেছেন মিঃ কেকিট।
একজন নার্সও এগিয়ে এল। সিস্টার বার্তার বললেন, দরকার হলে আমাকে ডেকো। আর মিস মারপলের দিকেও খেয়াল রেখো।
সিস্টার বার্কার চলে গেলেন। মিস মারপল চেয়ারেই বসে রইলেন। তার চোখ মিস টেম্পলের দিকে। মনে মনে বললেন, যথার্থ সুন্দরী মহিলা।
দশ, কুড়ি, ত্রিশ করে মিনিট এগিয়ে চলল। প্রায় একঘণ্টা পর আচমকা একটা শব্দ শোনা গেল–মিস পারপল।
চোখ খুলে এলিজাবেথ টেম্পল মিস মারপলের দিকে তাকিয়ে আছেন। সম্পূর্ণ সুস্থ সে দৃষ্টি।
মিস মারপল। আপনি জেন মারপল?
আবার শোনা গেল সেই কণ্ঠস্বর।
–হ্যাঁ, আমিই জেন মারপল?
–হেনরি আপনার কথা প্রায়ই বলত।
–হেনরি?
–হেনরি ক্লিদারিং, আমার পুরনো বন্ধু।
–হেনরি ক্লিদারিং আমারও পুরনো বন্ধু। বললেন মিস মারপল।
-হেনরি থাকলেও একই কথা বলতো–আপনি অনুসন্ধান করতে পারেন। খুব জরুরী অনেক দিন আগের
মিস টেম্পলের কণ্ঠস্বর কেঁপে উঠল। নার্স উঠে এসে তাঁকে এক চুমুক জল খাইয়ে দিয়ে চলে গেল।
–সম্ভব হলে আমি সাহায্য করব। বললেন মিস মারপল।
–এক মিনিট চোখ বুজে রইলেন মিস টেম্পল। তারপর আবার বললেন, দুজন–দুজনের মধ্যে কে তাই খুঁজে দেখতে হবে।
–একজন নোরা ব্রড–যে মারা গেছে?
-না না, অন্য মেয়েটি–ভেরিটি হান্ট। চুপ করলেন মিস টেম্পল। খানিক পরে আবার বললেন, মিস মারপল, আপনি…আপনার বয়স হয়েছে, তবুও আপনি পারবেন খুঁজে পার করতে।
আবার একটু থামলেন তিনি। এক মিনিট নীরবতা।
-বলুন, আপনি পারেন, তাই না? আমার আর বেশি সময় নেই…বুঝতে পারছি। ওদের দুজনের মধ্যে একজন তাকেই খুঁজে বার করতে হবে। আপনার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে–
–আমি করবো…অবশ্যই করবো…ঈশ্বর আমার সহায় হবেন।
–আঃ।
শান্তিতে দুচোখ বুজলেন মিস টেম্পল। মলিন ঠোঁটে যেন একটু হাসির রেখা ফুটল।
–ওপর থেকে এলো বিরাট পাথরের চাঙর।
–কে ঠেলে দেয় পাথরটা?
–বলতে পারব না। ওসব যাক–কেবল ভেরিটি–সত্যের আরেক নাম ভেরিটি। মিস টেম্পলের শরীর কেমন শ্লথ হয়ে এলো। অস্পষ্ট স্বর শোনা গেল–বিদায়…যতটুকু পারেন করবেন…
নার্স উঠে এলো। নাড়ি দেখলো। মিস মারপলকে ইঙ্গিত করলো। তিনি উঠে বাইরে চলে এলেন।
প্রফেসর ওয়ানস্টেড এগিয়ে এলেন। দুজনে পায়ে পায়ে গাড়ির দিকে অগ্রসর হলেন।
-কিছু পেলেন?
–পেলাম একটা নাম, বললেন মিস মারপল, ভেরিটি–মেয়েটির কি ওই নাম ছিল?
–হ্যাঁ, ভেরিটি হান্ট।
এলিজাবেথ টেম্পল জ্ঞান হারিয়েছিলেন। তাঁর জ্ঞান আর ফেরেনি। দেড় ঘণ্টা পরেই তিনি মারা গেলেন।
.
১৩.
ভ্রমণে বেরুবার আগে তাদের বাড়িতে দুদিন থাকার জন্য মিস মারপলকে অনুরোধ করে নিয়ে এসেছিলেন মিসেস গ্লাইন।
কোচ ভ্রমণ শুরু হবে মিস টেম্পলের স্মৃতি অনুষ্ঠানের পরে। পরদিন হবে ইনকোয়েস্ট। কোচের যাত্রীরা তাতে অংশ নিতে রাজি হয়েছেন।