মাইকেল র্যাফায়েল মেয়েটিকে বিয়ে করবে ঠিক হয়েছিল কিন্তু বিয়ে করেনি। মেয়েটি মারা গিয়েছিল।
মেয়েটির মারা যাবার কারণ আমি জানতে চেয়েছিলাম। জবাবে তিনি বলেছিলেন ভালবাসা। স্রেফ একটি শব্দ প্রয়োগ করেছিল। প্রথমে আমার ধারণা হয়েছিল আত্মহত্যা। কিন্তু এটা ছিল হত্যা।
ঈর্ষা বশে হত্যা–এবং দ্বিতীয় একজনের উপস্থিতিও স্পষ্ট। আমাদের এখন সেই মানুষটিকেই খুঁজে বার করতে হবে। মিস টেম্পল ভাল হয়ে উঠলেই তার সঙ্গে এনিয়ে আবার কথা বলব, তিনি সম্ভবত সেই অজানা লোকটি সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন।
–আর কোন সম্ভাবনা কোথাও আছে বলে আপনার মনে হয়?
–সম্ভাবনা কোচের যাত্রীদের মধ্যেও থাকা অসম্ভব নয়। আবার পুরনো ম্যানর বাড়িতে কারোরও থাকা সম্ভব। ওই তিন বোনের কেউ ওই মেয়েটি বা মাইকেলের বলা কথা হয়তো মনে রাখতে পারে।
ক্লোটিলডা মেয়েটিকে নিয়ে বিদেশেও গেছেন। বিদেশে কোথাও কিছু ঘটে থাকলে, সেটা তার পক্ষে জানা সম্ভব।
ওদের দ্বিতীয় বোন মিসেস গ্লাইন, বিয়ের পরে স্বামীর সঙ্গে বহুদিন ভারতবর্ষ ও আফ্রিকায় ছিলেন। তিনিও তার স্বামী বা আত্মীয়স্বজণের কারো কাছ থেকে নিহত মেয়েটির বিষয়ে কিছু শুনে থাকতে পারেন।
তৃতীয় বোনটি, যার বাগান সম্পর্কে খুব আগ্রহ, সে একটু বেশিমাত্রায় চঞ্চল। তবু আশা করা যেতে পারে নিহত মেয়েটির সম্ভাব্য প্রেমিক বা ছেলেবন্ধুর কথা জেনে থাকতে পারে।
কথা বলতে বলতে সামনের দিকে তাকিয়ে তিনি বলে উঠলেন, ওই যে সেই মেয়েটি হোটেলের পাশ দিয়ে চলেছে। একটা বড় পার্শেল দেখছি হাতে-মনে হয় মোড়ের মাথায় ডাকঘরে যাচ্ছে।
প্রফেসর ওয়ানস্টেড মেয়েটিকে দেখলেন।
–কেমন একটু ক্ষ্যাপা ধরনের মনে হচ্ছে।
–আমারও তাই মনে হয়েছিল প্রথম যখন দেখি। আমার কথা এই পর্যন্তই। এখন আমি এক সমস্যায় পড়েছি–দুদিন এই হোটেলেই থাকবো না কোচে চেপে ভ্রমণে যাব–বুঝতে পারছি না।
.
১২.
মধ্যাহ্নভোজের আগে মিসেস স্যাণ্ডবার্ন হাসপাতাল থেকে ফিরে এলে জানা গেল, মিস টেম্পলের এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তার সুস্থ হয়ে উঠতে কয়েকদিন লাগবে।
এই পরিস্থিতিতে তিনি ভ্রমণার্থীদের জানিয়ে দিলেন, দু-এক দিন পরে কাছাকাছি দ্রষ্টব্য ভাড়া গাড়িতে দেখানো হবে। ইতিমধ্যে যদি কেউ লণ্ডনে ফিরতে চান তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা করে দেবেন।
ডাইনিং হল থেকে বেরুবার মুখে প্রফেসর ওয়ানস্টেড মিস মারপলকে একপাশে ডেকে এনে বললেন, কাছাকাছি একটা গির্জা আছে, যদি বিকেলে যেতে চান আমার সঙ্গে আসতে পারেন।
–ভালই তো হয়। বললেন মিস মারপল।
.
বিকেলের আগেই ভাড়াগাড়িতে করে দুজনে বেরিয়ে পড়লেন। গ্রাম ছেড়ে গাড়ি অন্য রাস্তায় ঢুকলে প্রফেসর ওয়ানস্টেড বললেন, আমরা কিন্তু কোন গির্জা দেখতে যাচ্ছি না মিস মারপল।
–হ্যাঁ, আমি তা অনুমান করেছিলাম। বললেন মিস মারপল। কিন্তু কোথায় যাচ্ছি আমরা?
–ক্যারিসটাউনের এক হাসপাতালে। মিস টেম্পল ওখানেই আছেন। মিসেস স্যাণ্ডবার্নের হাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার নামে একটা চিঠি দিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ আগেই আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম।
–তাঁর অবস্থা এখন কেমন?
-খুব ভাল নয়। মাঝে মাঝে জ্ঞান ফিরে আসছে–সেই সময় তিনি আপনার খোঁজ করছেন।
-বুঝতে পারছি না, তিনি কেন আমাকে ভাবছেন। তিনি মেয়েদের বিখ্যাত স্কুল ফেলোফিল্ডের প্রধান শিক্ষিকা-খুবই নামী মহিলা। তিনি যদি মারা যান সেটা খুবই দুঃখের হবে। কিন্তু ওই দুর্ঘটনার বিষয়ে আমাদের কিছু আলোচনা করা দরকার।
–হ্যাঁ, আমারও তাই ইচ্ছে। দুর্ঘটনার কথাটা আমাকে প্রথম জানিয়েছিল দুজন তরুণ-তরুণী। যোয়ান ক্রফোর্ড আর এমলিন প্রাইস।
তারা কি বলেছিল?
–যোয়ান জানাল সে আর এমলিন নিচের পথ ধরে পাহাড়ে উঠছিল। সেই সময় তারা কাউকে দেখেছিল। তবে মানুষটা পুরুষ বা স্ত্রীলোক বুঝতে পারেনি। সে বিরাট একখণ্ড পাথর ঠেলে দিতে চেষ্টা করছিল। সেই পাথরেই আহত হয়েছিলেন মিস টেম্পল।
-লোকটার সম্পর্কে যোয়ান আর কি জানিয়েছিল?
–জিনস বা ট্রাউজার পরা ছিল লোকটার। আর ছিল গলাবন্ধ লালকালো নক্সাআঁকা পুলওভার। মূর্তিটি সঙ্গে সঙ্গেই সরে যায়।
–তাহলে কি ইচ্ছাকৃতভাবেই মিস টেম্পলের ওপর আক্রমণ হয়েছিল?
-বুঝতে পারা যাচ্ছে না। আমাদের কোন সহযাত্রী অথবা অজানা কেউ সুযোগ বুঝে জায়গাটা বেছে নিয়ে থাকতে পারে।
–প্রচ্ছন্ন শত্রুর কথা বলছেন?
-হ্যাঁ। কিন্তু এমন একজন প্রখ্যাত শিক্ষয়িত্রীকে কে হত্যা করতে চাইবে? মিস টেম্পল মূর্তিটিকে চিনতে পেরেছিলেন কিনা তার কাছ থেকে জানা যেতে পারে।
–আপনি কি কোন বিশেষ ঘটনার কথা ভাবছেন?
–না, শুধু সম্ভাবনার কথাই ভাবছি। কোন ব্যক্তিগত শত্রুর কথা আমি বাদ দিচ্ছি। এমন হতে পারে মিস টেম্পল এমন কোন কিছু হয়তো জানতেন, যা প্রকাশ হয়ে পড়লে কারও পরিণতি মারাত্মক হতে পারে।
-হ্যাঁ। আমার বিশ্বাস ব্যাপারটা তাই। আমাদের কোচেও এমন কেউ থাকা সম্ভব যে মিস টেম্পলকে চিনতে পেরেছিল, অথচ তিনি তাকে চিনতে পারেননি।
–কিন্তু ওই পুলওভার, যোয়ান যা উল্লেখ করেছিল–
টকটকে লাল-কালো রঙ-যা সহজেই চোখে পড়বার কথা…সেটা ইচ্ছাকৃতভাবেই দেখানো হয়েছিল বলে আমার ধারণা। সেই ব্যক্তি, পুরুষই হোক আর স্ত্রীলোকই হোক, ওই পোশাক খুলে যদি ডাক মারফত পার্সেল করে কোন ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়, কিংবা ফেলে দেয় বা পুড়িয়ে ফেলে নষ্ট করে ফেলে আর সাধারণ পোশাকে থাকে তাহলে কারোর সন্দেহের দৃষ্টিই তার দিকে পড়বে না।