পরে তিনি মিস জেন মারপল নামটি আমাকে লিখে দেন। তবে ঠিকানা দেননি। বলেছিলেন, আমি চাই আমার পছন্দমত পারিপার্শ্বিক অবস্থায় আপনার সঙ্গে তার স্বাভাবিকভাবে দেখা হোক।
এরপর তিনি এই ভ্রমণের কথা উল্লেখ করেন। এই ভ্রমণে আপনাকে আমি সহযাত্রী হিসেবে পাব একথা জানিয়েছিলেন।
আপনার সম্বন্ধে মিঃ রাফায়েল কেবল জানিয়েছিলেন, আপনি বয়স্ক, আর মানুষ সম্পর্কে আপনার ধারণা অতি স্বচ্ছ। আর…আর…অশুভ কিছু অনুধাবন করার অসাধারণ ক্ষমতা আপনার আছে। নিশ্চয়ই তিনি ভুল বলেননি?
–সম্ভবতঃ তাই। চারপাশের গণ্ডির মধ্যে কাছাকাছি অশুভ কিছু বা কেউ থাকলে আমি অনুভব করতে পেরেছি–এমন ঘটনা নানা সময়ে ঘটেছে বটে।
–এটা হলো অশুভ জানার শক্তি। যদি তেমন কিছুর আভাস পান তাহলে আমাকে জানাবেন। আমার বক্তব্য এখানেই শেষ। এবার আপনার কথা আমি শুনতে চাই।
মিস মারপল বললেন, কিভাবে এব্যাপারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লাম আপনাকে সংক্ষেপে জানাচ্ছি।
এরপর, মিঃ র্যাফায়েলের মৃত্যুর সংবাদ জানা, তার আইনজ্ঞদের চিঠি–সাক্ষাৎকার, তাদের দেওয়া প্রস্তাব…মিঃ র্যাফায়েলের চিঠি…ভ্রমণসংস্থার চিঠি প্রভৃতি সব ঘটনা খুলে জানালেন।
পরে বললেন, ভ্রমণের আসন সংরক্ষণের সংবাদ জানবার পরেই আমি বুঝতে পারি আমাকে যে কাজ করার প্রস্তাব মিঃ র্যাফায়েল করেছেন, ভ্রমণের ব্যাপারটা তার প্রথম পদক্ষেপ। এই ভ্রমণের মধ্যেই নিশ্চয় কোন সূত্র আমার দৃষ্টিগোচর হবে। আমার ধারণা তা হয়েছে।
একমুহূর্ত থেমে পুনরায় তিনি বললেন, গতকালের আগের দিন, এখানে পৌঁছবার পরেই তিনজন মহিলা এসেছিলেন আমাকে অভ্যর্থনা করতে। কাছেই পুরনো জমিদার ভবনে তারা থাকেন। তারা তাদের গৃহে আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন।
–তারা কি মিঃ র্যাফায়েলের পরিচিত? জানতে চাইলেন প্রফেসর ওয়ানস্টেড।
-হ্যাঁ। তারা জানালেন, মিঃ র্যাফায়েলের কাছে শুনেছিলেন তার এক পুরনো বন্ধু ভ্রমণে আসবেন, তারা যেন তাকে দুই বা তিনদিন বাড়িতে আশ্রয় দেন। কারণ তার পক্ষে পাহাড়ে চড়া সম্ভব হবে না। আমাদের গতকালের ভ্রমণ সেখানেই ছিল।
–এটাকে আপনি কিভাবে গ্রহণ করছেন?
–এই যোগাযোগ আমার করণীয় কাজের সঙ্গেই যুক্ত বলে আমি মনে করি। মিঃ র্যাফায়েল চেয়েছিলেন আমি ওখানে যাই।
-আপনি সেখানে গিয়েছিলেন?
–হ্যাঁ, তবে তিন বোনকে দেখে খুবই সাধারণ বলেই মনে হলো। তারা যে বাড়িতে বসবাস করছে তার মালিক ছিলেন তাদের এক কাকা। তার মৃত্যুর পর বছর কয়েক আগে সেখানে এসেছে। তাদের অবস্থা খুব ভাল নয়, তবে খুবই অমায়িক।
ওদের দেখে মিঃ রাফায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত ছিল বলে মনে হল না। তিন বোনের মধ্যে তফাতও যথেষ্ট।
-ওখানে থাকার সময়ে কিছু জানতে পেরেছেন?
–আপনি যে ঘটনা শোনালেন কিছুক্ষণ আগে সেই ঘটনাই শুনেছি। ওদের এক বয়স্ক পরিচারিকার কাছ থেকে। সে তাদের কাকার আমল থেকে ওই বাড়িতে আছে। মিঃ র্যাফায়েলের নামটাই শুধু সে শুনেছে।
মিঃ র্যাফায়েলের ছেলে মাইকেল এখানে বেড়াতে আসার সময় থেকে ব্যাপারটার সূত্রপাত হয়। খুবই খারাপ ছেলে ছিল সে। মেয়েটি তার প্রেমে পড়েছিল, সে তাকে গলা টিপে মেরেছিল।
আরও কি সব ও বলেছিল। জানিয়েছিল, পুলিসের ধারণা ছেলেটি এরকম খুন আগে আরও করেছে।
-এই ঘটনার সঙ্গে ওই তিন বোনের কোন যোগ আছে বলে মনে হয়নি আপনার?
–না। যোগাযোগ এটুকুই কেবল, মেয়েটি ওদের কাছেই প্রতিপালিত হয়েছিল। তারা মেয়েটিকে ভালবাসতো।
–অন্য কোন মানুষের কথা ওদের জানা অসম্ভব মনে হয় না। বললেন প্রফেসর ওয়ানস্টেড।
-হ্যাঁ, এটাই জানতে হবে আমাদের। এমন একজন মানুষ যে ঈর্ষায় উন্মাদ হয়ে মেয়েটিকে হত্যা করে মুখ ক্ষতবিক্ষত করেছে।
-পুরনো ওই ম্যানর হাউসে আর কোন ঘটনা
–তেমন কিছু না। নজরে পড়ার মত কেবল ছোট বোনটি-বারবার বাগান সম্বন্ধে কথা বলতে চায়। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি, বাগান বা গাছলতা সম্পর্কে ও কিছুই জানে না।
-ওই বাগানের ব্যাপারটাই আপনার কাছে আকর্ষণীয় বলে মনে হয়েছে?
-হ্যাঁ। ঠিক তাই। আচ্ছা, এই ভ্রমণে দুজন মাঝবয়সী মহিলাকে আপনার নজরে পড়েছে। মিস ব্যারো আর মিস কুক?
–হ্যাঁ, দুজন একসঙ্গেই ভ্রমণ করছেন।
–ওই মিস কুক–ভ্রমণের তালিকায় দেখলাম ওই নামই রয়েছে। কিন্তু আমার সন্দেহ এই মহিলাই-সেন্ট মেরী মিডে আমি যে গ্রামে থাকি সেখানে তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। তিনি আমার বাগান দেখে খুশি হয়ে কথা বলেছিলেন। নাম বলেছিলেন বার্টলেট-বলেছিলেন ওই গ্রামেই নতুন এক বাড়িতে বাগানের কাজ করতে এসেছেন। আমার মনে হয়, সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেছিলেন।
কেন না, তখন তার চুল অন্যভাবে আঁচড়ানো ছিল, রঙও আলাদা ছিল। পোশাকের ধরনও অন্যরকম ছিল। ভ্রমণের প্রথম দিনেই দেখে চিনতে পেরেছিলাম। কোথায় দেখেছি বলাতে, না চেনার ভান করেছিলেন।
এখন বুঝতে পারছি, এই মিস কুক সেন্ট মেরী মিডে গিয়েছিলেন আমাকে দেখে নিতে যাতে পরে আমাকে চিনতে পারেন,
–আপনার এরকম মনে হল কেন?
-তা ঠিক বলতে পারব না। তবে ব্যাপারটা আমার ভাল লাগছে না।
আমারও সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। এলিজাবেথ টেম্পলের যা ঘটেছে তা-ও ভাল ঠেকছে না। ওঁর সঙ্গে আপনি কথা বলেছিলেন?
-হ্যাঁ। ওই নিহত মেয়েটি সম্পর্কে তিনি আমাকে কিছু বলেছিলেন। মেয়েটি ওরই স্কুলের ছাত্রী ছিল।