-হ্যাঁ, বুঝতে পারছি। বললেন মিস মারপল।
–সাধারণতঃ অপরাধ সংঘটিত হবার পর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়–রোগ নির্ণয় করা, নিরাময়ের সম্ভাব্যতা বিচার করা–এসবই আমাকে করতে হয়। এই ব্যাপারে আমার কাছে আহ্বান আসে স্বরাষ্ট্র দপ্তর থেকে।
এমনি এক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আমার বন্ধু। তিনি বিশেষ একজন তরুণ অপরাধী সম্পর্কে আমাকে জানিয়েছিলেন। ঘটনাটা বেশ কয়েকবছর আগেকার। ছেলেটি তার কৈশোরকাল থেকেই সম্পূর্ণ অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। সে ডাকাত দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল, ডাকাতি, চুরি, জালিয়াতি সবকিছুতেই সে অংশ নেয়।
-বুঝতে পেরেছি, আপনি মিঃ র্যাফায়েলের ছেলের কথাই বলছেন।
–হ্যাঁ, তার সম্পর্কে আপনি কি জেনেছেন?
–বিশেষ কিছুই না। মাত্র গতকালই শুনেছি মিঃ র্যাফায়েলের এক অযোগ্য ছেলে আছে যে অপরাধী তালিকাভুক্ত।
–সে মিঃ রাফায়েলের একমাত্র পুত্র। তাঁর আরও দুটি মেয়ে ছিল। একজন চোদ্দ বছর বয়সে মারা যায়, অন্য মেয়েটি বিয়ে করে সুখেই আছে। ওঁর স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন অল্প বয়সেই।
ছেলের জন্য সবরকম করণীয়ই তিনি করেছিলেন। স্কুলে থাকাকালীনই ছেলেটি তার যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠেছিল। তবু তিনি সবরকম গোলমাল থেকে ছেলেকে বাঁচিয়েছেন। আদালতের ঝামেলাও সামলেছেন। একটি ধর্ষণের অভিযোগে ছেলেটিকে জেল খাটতেও হয়েছিল। পরে যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল তা খুবই গুরুতর
–সে একটি মেয়েকে খুন করেছিল শুনেছি। বললেন মিস মারপল।
–মেয়েটিকে বাড়ি থেকে ফুসলে নিয়ে গিয়েছিল। বেশ কিছুদিন পরে মেয়েটির মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। তাকে গলা টিপে মেরে ভারি পাথর বা লোহা দিয়ে মুখ মাথায় আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলা হয়। সম্ভবত মেয়েটির পরিচয় গোপন করার জন্যই এরকম করা হয়েছিল।
–এরকম অপরাধী মানসিকতার কাউকে আমি সহ্য করতে পারি না। বললেন মিস মারপল।
-ওটাকে বংশানুক্রম বলেই আমি মনে করি। জন্মের সঙ্গেই যে চরিত্র বা বংশধারা নিয়ে তারা জন্মায় তার ওপর তাদের কোন হাত থাকে না।
যাইহোক, ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বন্ধুটি—অত্যন্ত অভিজ্ঞ মানুষ তিনি। তার বিশ্বাস হয়েছিল–ছেলেটি আদৌ খুনী নয়। তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, ছেলেটি কোন মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তার মুখ ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিল।
তিনি দৃঢ় নিশ্চিত হয়েছিলেন যে তার সম্পর্কে যে রায় দেওয়া হয়েছিল, তা ভুল ছিল। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখেছিলেন, ছেলেটির সব অপরাধই সাক্ষ্যপ্রমাণ সহ প্রমাণিত।
স্বভাবতঃই আমার বন্ধুটি খুবই অসুখী হয়ে পড়েছিলেন। প্রকৃত সত্য জানার জন্য তিনি উদ্গ্রীব হয়ে উঠেছিলেন। তিনি আমাকে অনুরোধ করেছিলেন, ছেলেটিকে দেখে, পেশাদারী পদ্ধতিতে ব্যাপারটা অনুধাবন করে আমার মতামত জানাই।
–আপনার ওই পরিচালক বন্ধুটি যথার্থই অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন। তার ন্যায়ের প্রতি আগ্রহ প্রশংসনীয়। বললেন মিস মারপল। আপনি নিশ্চয় তার অনুরোধ রক্ষা করেছিলেন?
–হ্যাঁ। আমি ছেলেটির কাছে বন্ধুর মত গিয়েছিলাম এবং আমার সাধ্যমত বাস্তব পরীক্ষাও করি। একটু থেমে প্রফেসর ওয়ানস্টেড আবার বললেন, মাইকেল র্যাফায়েল একজন খুনী একথা আমি মানতে পারিনি।
আগ্রহ বশে আমি নিজেও কিছু অনুসন্ধান চালাই। সে একটি মেয়ের ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল সত্য কথা, কিন্তু সে তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেনি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত মেয়েটির আরও অনেক ছেলেবন্ধু ছিল। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের বাইরেও তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
তবে ওই খুনের ঘটনাটি–ধর্ষণ করে হত্যা–শারীরিক, মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক–সবরকম পরীক্ষা করেই দেখেছি, কোনদিক থেকেই খুনের ঘটনাটির সমর্থন পাইনি।
-আপনি আপনার বন্ধুকে সেকথা জানিয়েছিলেন?
–হ্যাঁ। তার মতামতের সঙ্গে যে আমিও একমত সেকথা জানিয়েছিলাম। আবেদন করার মত কোন প্রমাণ আমাদের হাতে ছিল না। অথচ আমরা দুজনেই বুঝতে পেরেছিলাম বিচারে কোথাও বড় রকমের ফাঁক থেকে গিয়েছিল। এটাও বুঝতে পেরেছিলাম, প্রমাণ হয়তো কোথাও পাওয়া যেতে পারে, তবে তা বার করে আনা খুবই দুরূহ ব্যাপার। এবং খরচসাপেক্ষ।
–মিঃ র্যাফায়েল তার ছেলের সম্বন্ধে কি ভেবেছিলেন?
এ ব্যাপারে তার সঙ্গে আমার খোলাখুলি আলোচনা হয়েছিল। তিনি ন্যায়পরায়ণ মানুষ ছিলেন সত্য, তবে বলব, নির্মমও ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমার ছেলেটি বিকৃত–সংশোধনের অযোগ্য। তবু, অসুস্থ মৃগী রোগাক্রান্ত ভেবে তার জন্য যা দরকার তাই করব। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, আমি তাকে কি করতে বলছি।
ছেলেটির অপরাধের যথার্থ দিকটারই বিচার হোক, আন্তরিকভাবেই তিনি তা চেয়েছিলেন। বন্দিদশা থেকে বেরিয়ে এসে সে তার নিজের পছন্দমত জীবনযাপন করুক তা-ও তিনি চাইছিলেন।
আমাকে স্পষ্টই বলেছিলেন, অন্য কেউ যদি মেয়েটিকে হত্যা করে থাকে, তাহলে আমি চাই সে ঘটনা প্রকাশিত হয়ে সকলে জানুক। আমি একজন অশক্ত মানুষ-জীবনের মেয়াদও ফুরিয়ে এসেছে। এই অল্প সময়ের মধ্যে আমার পক্ষে যা ব্যবস্থা করা সম্ভব তা করে যাব। এজন্য খরচের কোন বাধা আমি রাখব না।
সবশেষে তিনি আমাকে বলেছিলেন, আপনাকেই আমার প্রধান সাহায্যকারী বলে আমি মনে করছি। আর আপনাকে সাহায্য করবার জন্য একজনকে খুঁজে পেতে চেষ্টা করব।