-এলিজাবেথ টেম্পল, বললেন মিস মারপল, কোচে ওঁর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেছিলেন। একজন অবসরপ্রাপ্তা স্কুল শিক্ষিকা–খুবই নামী মানুষ ছিলেন।
–আমি তাকে চিনতাম, বললেন, ক্লোটিলডা। ব্যাপারটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। সবকথা এখনো শুনিনি।
সুটকেসের ঢাকনা আটকে মিস মারপল উঠে দাঁড়ালেন।
–যাওয়া যাক। নিচে গিয়ে মিঃ প্রাইসের সঙ্গে কথা বলি।
ক্লোটিলডা সুটকেসটি তুলে নিয়ে মিস মারপলের সঙ্গে নিচে নেমে এলেন।
এমলিন প্রাইস তার জন্যই অপেক্ষা করে ছিল। তাকে খুবই এলোমেলো দেখাচ্ছিল।
–ওরা আপনাকে খবরটা দিতে পাঠিয়ে দিলেন। মিস টেম্পলের দুর্ঘটনা ঘটেছে। ওপর থেকে পাথরের চাই গড়িয়ে পড়েছিল। মাথায় আঘাত পেয়েছেন মিস টেম্পল–গতরাতেই তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আজকের ভ্রমণ বন্ধ থাকছে। আগামীকালের গ্র্যাং-মেরিং যাওয়াও হবে না।
-মিসেস স্যাণ্ডবার্ন কোথায়? জানতে চাইলেন মিস মারপল।
–তিনি সকালেই হাসপাতালে চলে গেছেন। এগারোটায় গোল্ডেনবোরে আমাদের সঙ্গে কফি পানে যোগ দেবেন।
ক্লোটিলডা আর মিসেস গ্লাইনকে বিদায় জানিয়ে এমলিন প্রাইসের সঙ্গে গোল্ডেনবোরে এসে উঠলেন।
যাত্রীরা সকলেই তখন কফি ঘরে উপস্থিত ছিল। কফি আর প্যাস্ট্রি দেওয়া চলছিল।
মিস টেম্পলের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার ব্যাপার নিয়েই সকলে আলোচনা করছিলেন। মস্তিষ্কের আঘাত খুবই গুরুতর। বিশেষ ডাক্তার তার দেখাশোনা করছেন। সকলেই এখন সংবাদ শোনার আশায় রয়েছে।
অনেকেই সকালের দিকে সময়টা একটু ঘুরে আসার কথা ভাবলেন। কিছুক্ষণ পরেই সকলেই দল বেঁধে বেরিয়ে গেলেন। কেবল রয়ে গেলেন প্রফেসর ওয়ানস্টেড আর মিস মারপল।
–চলুন, হোটেলের বাইরে কোথাও গিয়ে বসা যাক। মিস মারপলকে বললেন প্রফেসর ওয়ানস্টেড।
দুজনে হোটেলের দরজা অতিক্রম করে কোণের দিকের বাগানে পেতে রাখা বাস্কেট চেয়ারে বসলেন।
–আপনি নিশ্চয়ই মিস জেন মারপল? বললেন প্রফেসর।
–হ্যাঁ, আমিই জেন মারপল। অবাক হলেন মিস মারপল, কিন্তু
–আপনার কথা শুনেছিলাম মিঃ র্যাফায়েলের কাছে। বলে একাগ্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রফেসর ওয়ানস্টেড যেন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলেন মিস মারপলকে।
–আমার সম্পর্কে কবে তার সঙ্গে আপনার কথা হয়েছিল?
তার মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে।
তিনি জানতেন, এই ভ্রমণদলে আপনি থাকবেন?
–হ্যাঁ। আপনার জন্য এই ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছেন তিনি একথাও জানিয়েছিলেন।
–এটা তাঁর সদাশয়তা। এমন খরচসাপেক্ষ ভ্রমণ আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব হত না। আর তাতেই এমন করে বাধা পড়ল।
–হ্যাঁ, খুবই দুঃখের কথা।
একটু থেমে প্রফেসর ওয়ানস্টেড পুনরায় বললেন, মিঃ র্যাফায়েল আপনার সম্পর্কে আমার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলেন। এই ভ্রমণে আমি আপনার সঙ্গে থাকি এটাই তার ইচ্ছা ছিল। অর্থাৎ আপনার ওপর যেন একটু নজর রাখি।
-একথার অর্থ?
–আমি যেন লক্ষ্য রাখি আপনার যাতে কোন কিছু না ঘটে।
–আমার কি ঘটবে?
–সম্ভবত মিস এলিজাবেথ টেম্পলের যা ঘটেছে–আপনার কি মনে হয়, ওটা দুর্ঘটনা?
–আমি এর কিছুই বলতে গেলে জানি না। বললেন মিস মারপল। আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন ঠিক বুঝতে পারছি না।
–আমার বক্তব্য হল, আপনি নিজের সম্পর্কে সাবধান থাকবেন। বললেন প্রফেসর ওয়ানস্টেড।
–আপনার সম্পর্কে আমি এখনো কোন সূত্র পাইনি। আপনি কি মৃত মিঃ র্যাফায়েলের একজন বন্ধুস্থানীয়?
-না, তার সঙ্গে আমার দু-একবারই দেখা হয়েছে। আমি নিজের সম্পর্কে এটুকু বলতে পারি, আমার কাজের জগতে আমি একজন খ্যাতিমান মানুষ।
–খুব সম্ভব আপনি একজন চিকিৎসক।
-হ্যাঁ, আপনার অনুমান যথার্থ। আমি একজন মনোবিজ্ঞানী। বিশেষ বিশেষ অপরাধী মস্তিষ্ক সম্পর্কে আমি আগ্রহী। এ নিয়েই বহুবছর গবেষণা করে চলেছি।
বুঝতে পেরেছি, বললেন মিস মারপল, মিঃ র্যাফায়েল আমাকে এমন একটা কাজে নামতে বলে গেছেন যার সম্পর্কে কোন ব্যাখ্যা রেখে যাননি।
–আপনি সে কাজ গ্রহণ করেছেন?
–হ্যাঁ, আমি গ্রহণ করেছি। ওয়েস্ট ইণ্ডিজে আমরা দুজনে ওখানে একটা কাজ করেছিলাম।
-হ্যাঁ, আমাকে সেকথা বলেছিলেন। আরও বলেছিলেন, অপরাধমূলক ব্যাপারে সমাধানে আপনার সহজাত ক্ষমতা রয়েছে। আমি মনে করি মিঃ র্যাফায়েল অত্যন্ত বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন।
একটু থেমে তিনি বললেন, এখানে আপনার সঙ্গে বিশেষ আলোচনার জন্যই আমি মিলিত হয়েছি। এখন আশপাশে আড়ি পাতবার মত কেউ নেই। করলেও আমাদের কথা শুনবার সুবিধা নেই। অতএব আমরা নিশ্চিন্তে কথা বলতে পারি।
মিস মারপল বললেন, মিঃ র্যাফায়েল আমার কাজের ব্যাপারটা কি চেয়েছিলেন এ ব্যাপারে আমি এখনো অন্ধকারে।
–তিনি চেয়েছিলেন, নির্দিষ্ট ঘটনার দিকে আপনি এগিয়ে যাবেন। এসম্পর্কে অন্য কোন লোকের মতামত গ্রাহ্যে আনবেন না।
-এ কোন ব্যাখ্যা হলো বলে মনে হয় না।
-আপনার সঙ্গে আমি একমত। তবে আমি কতগুলো ঘটনার কথা আপনাকে জানাবো, তাতে ব্যাপারটা আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। আর এসম্পর্কে আপনার জানা তথ্যও আমাকে জানাতে পারবেন।
–বেশ, কিছু বলুন তাহলে।
-সংক্ষেপেই আমার কথা বলবার চেষ্টা করব। স্বরাষ্ট্র দপ্তরের হয়ে আমাকে মাঝে মাঝে উপদেষ্টার কাজ করতে হয়। তাছাড়া বাইরের কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও আমি জড়িত। এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা যাদের বিশেষ ধরনের অপরাধী বলে সন্দেহ করা হয় অথচ তাদের বয়স কোন বিশেষ বয়সের কম, তাদের বেশ কিছু সময়ের জন্য নিজেদের তত্ত্বাবধানে রাখে।