দেয়ালের গায়ে একটা ভোলা দরজা দিয়ে মিস মারপল রাস্তায় এসে পড়লেন। কিছু দোকানপাট পার হয়ে একটা গীর্জার চত্বরে ঢুকলেন। কয়েকটি সমাধির কাছে ঘুরে বেড়ালেন।
পুরনো দিনের সব সমাধি। কয়েকটির গায়ে কয়েকজন প্রিন্সের নাম চোখে পড়ল। আর কয়েকজন ব্রড।
ফিরে আসার পথে একজন বয়স্ক মহিলার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হল। তাকে সুপ্রভাত জানিয়ে কথা শুরু করলেন তিনি।
কথার মাঝখানে সেই মহিলা জিজ্ঞেস করলেন, আপনি ওই পুরনো জমিদার বাড়িতে আছেন, তাই না?
–হ্যাঁ বললেন মিস মারপল, আমার এক পুরনো বন্ধু মিঃ র্যাফায়েল এখানে তার কজন বন্ধুকে লিখেছিলেন, তারাই কয়েকটা রাত কাটাবার জন্য নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মিসেস গ্লাইন আর তার দুই বোন খুব যত্ন করেছেন। তারা সম্ভবত অনেককাল এখানে আছেন?
–তেমন বেশিদিন নয়–বছর কুড়ি হবে। বাড়িটা ছিল কর্নেল ব্র্যাডবেরি স্কটের।
কর্নেলের কোন ছেলেমেয়ে ছিল না?
–এক ছেলে ছিল, সে যুদ্ধে মারা গিয়েছিল। সেজন্যই তো বুড়ো ভাইঝিকে বাড়িটা দিয়ে গেছেন।
কথা শেষ করে বৃদ্ধাটি কবরের সারির দিকে চলে গেল। মিস মারপল গির্জায় প্রবেশ করলেন।
একটা ছোট আসনে বসে মিস মারপল নানা কথা চিন্তা করতে লাগলেন।
দশ-বারো বছর আগের ঘটনা। নতুন করে কোন সমস্যার সমাধান করার কিছু নেই। এতে তার কিই বা করার আছে। মিঃ র্যাফায়েল কি আশা করেছিলেন তার কাছে?
এলিজাবেথ টেম্পল নিশ্চয় আরো কিছু বলতে পারেন। তিনি তার এক ছাত্রীর কথা জানিয়েছিলেন, সে মাইকেল র্যাফায়েলের বাগদত্তা ছিল। কিন্তু সত্যিই কি তাই?
তার গ্রামেও এমনি একটি ঘটনা ঘটেছিল। বিয়ের আগেই সে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিল। এরপর মেয়েটি ছেলেটিকে বিয়ের কথা বলে। ছেলেটির ততদিনে মেয়েটিকে নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তার অন্য সঙ্গিনী জুটেছিল। নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে সে মেয়েটিকে। তারপর যাতে আত্মীয়স্বজন সনাক্ত করতে না পারে তার জন্য মেয়েটির মুখ গুঁড়িয়ে দিতে চেষ্টা করল। সব যেন একই কাহিনীর পুনরাবৃত্তি।
ওরা তিন বোন কি কিছু জানে? এলিজাবেথ টেম্পল? কালতো আবার সকলের সঙ্গে তিনি ভ্রমণে যোগ দেবেন। তখন তার কাছ থেকে আরও কিছু জানার চেষ্টা করবেন।
কিছুক্ষণ পরে উঠে দাঁড়ালেন মিস মারপল। ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করলেন।
গেটের কাছে আসতেই দেখলেন দুজন স্ত্রীলোক দাঁড়িয়ে আছে। একজন এগিয়ে এলো–মিসেস গ্লাইন।
-আপনি এখানে? আমরা চিন্তা করছিলাম।
–প্রাচীন গির্জাটা একটু ঘুরে দেখছিলাম। বললেন মিস মারপল, এটা মনে হয় ভিক্টোরিয়ার আমলের।
-হ্যাঁ।
আপনারা এখানে আগাগোড়াই আছেন?
–না। মাইল ত্রিশেক দূরে আমরা থাকতাম। লিটল হার্ডসনেতে। আমার বাবা ছিলেন অশ্বারোহী বাহিনীর মেজর। কাকাকে দেখতে প্রায়ই আমরা এখানে আসতাম। তারও আগে আসতাম ঠাকুর্দাকে দেখতে। আমার বোনেরা কাকার মৃত্যুর পর এখানে চলে আসে। সেসময় আমি স্বামীর সঙ্গে বিদেশে ছিলাম। বছর পাঁচ আগে তিনি মারা গেছেন। ওরাই আমাকে আগ্রহ করে এখানে নিয়ে আসে। স্বামীর মৃত্যুর আগে আমি স্বামীর সঙ্গে কয়েকবছর ভারতবর্ষেও ছিলাম।
-ওহ আচ্ছা
লণ্ডনের কাছে আমি ছোট একটা কটেজও কিনেছি–হ্যাম্পটন কোর্টে। মাঝে মাঝে লণ্ডনের দু-একটা দাঁতব্য প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করতে হয়, সেজন্য বোনেদের কাছে বেশি থাকা হয় না। ওদের নিয়ে আজকাল খুব চিন্তা হয়। বিশেষ করে অ্যানথিয়ার জন্য ভাবনা হয়। মাঝে মাঝে যেন কেমন হয়ে যায়। দেখেছেন তো
-হ্যাঁ। খুব ভাবনাচিন্তা করলে মানুষের এরকম হয়।
–কিন্তু, ওর চিন্তাভাবনার কি কারণ থাকতে পারে বুঝতে তো পারি না। বাগানটা নিয়ে খুব চিন্তা করে অবশ্য। কাচঘর, পীচ, আঙুরলতা এসবের কথা খুব বলে
–দেওয়ালের গায়ে চেরি পাই-এর কথাও–এছাড়াও সেই ফুলের বেড়া
–আপনি দেখছি মনে রেখেছেন। সেই ফুলের বেড়া আবার ও লাগাতে চায়। অনেক কিছুই নতুন করে লাগাতে চায়। ক্লোটিলডা অবশ্য ওকে বলে এখন আর অত খরচ সম্ভব নয়। তবু কি শোনে, কদিন আগে এক নামী কোম্পানিকে বাগানটা সাজিয়ে তোলার জন্য বায়না দিয়েছে। কাচঘর নাকি আবার আগের মত করে তুলবে।
আজকাল সবেতেই খুব খরচ। কিছু করা কঠিন। বললেন মিস মারপল।
একটু চুপ করে থেকে তিনি বললেন, কাল সকালেই তো আমাকে যেতে হবে। গোল্ডেনবোরে খোঁজ নিয়েছিলাম। সকাল নটায় ওখানেই যাত্রীরা ফিরে এসে আবার যাত্রা করবেন। শুনেছি এবারে আমাদের দেখানো হবে স্টারলিং সেন্ট মেরী-গির্জা আর কেল্লা
-বেশ। আজ বিকালটা বিশ্রাম নিয়ে নিন। কথা বলতে বলতে ওরা দুজন বাড়িতে ঢুকলেন।
৩. প্রাতঃকালীন চা পান
১১.
পরদিন সকালে মিস মারপল প্রাতঃকালীন চা পান করছেন। একটু পরেই তাঁকে গুছিয়ে নিতে হবে।
এমনি সময় উদ্বিগ্ন মুখে ক্লোটিলডা ঘরে ঢুকলেন।
–এমলিন প্রাইস বলে একটি ছেলে আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে। ওদের নাকি কি একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।
–দুর্ঘটনা! আমাদের কোচে কিছু হয়েছে? অবাক হয়ে তাকালেন মিস মারপল।
–কোচে নয়। বোনাভেঞ্চারের খাড়াই পথ বেয়ে সকলে উঠছিলেন। সেই সময় পাথর গড়িয়ে পড়ে কাউকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে–
-ওঃ! খুব দুঃখ পেলাম। কিন্তু কে আঘাত পেলেন কিছু বলেছে?
–কে একজন মিস টেম্পল বা টেণ্ডারটন বলল–