গ্লাইন তাকে অন্য দুই বোনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তাদের হাবভাব বেশ মার্জিত।
বাগানের দিকে তাকিয়ে তার মনে হল, এই ক্ষয়িষ্ণু পরিবারটির সঙ্গে মিঃ র্যাফায়েলের সম্পর্ক কি রকম? বুঝতে পারছিলেন, তার এখানে আসার সকল ব্যবস্থা তিনিই করে গেছেন। মৃত্যুর কয়েকমাস আগেই সম্ভবত সবকিছু করেছেন।
মিস মারপলের মনে হল তার ওপর যে দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছে, তিনি যেন ধীরে ধীরে তা বুঝে নিতে পারছেন।
সুন্দর এক পরিকল্পনা বেশ অনেকদিন ধরে চিন্তার পর, ছকে ছিলেন মিঃ র্যাফায়েল। কিন্তু কী এমন সমস্যায় পড়েছিলেন তিনি যার জন্য এমন বিস্তৃত এক পরিকল্পনা নিতে হয়েছিল তাকে?
এ সমস্যা এমনই যে মিঃ র্যাফায়েল নিজে সমাধান করতে পারেননি। সময়ও ছিল না, শয্যাশায়ী হয়ে তিনি মৃত্যুর দিন গুণছিলেন।
নিশ্চয় এমন কিছু ব্যাপার ছিল বা কেউ যার কোন ব্যবস্থা তিনি করে যেতে পারেন নি। নিশ্চয় অর্থের বিনিময়ে এই সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব ছিল না। ব্যবসায়িক চাল বা আইনজ্ঞের সাহায্যেরও বাইরে ছিল না।
তবে, মিস মারপলের মনে হল, বিষয়টা নিশ্চয়ই অপরাধমূলক কিছু বা অপরাধের সঙ্গে তার যোগসূত্র রয়েছে।
ওয়েস্ট ইণ্ডিজে, তার এলাকায় ঘটে যাওয়া কোন অপরাধ হওয়াও বিচিত্র নয়।
যাই হোক, ভাগ্যের কিছু আনুকূল্য, সঙ্গে কঠিন শ্রম আর চিন্তা, সেই সঙ্গে কিছু পরিমাণে বিপদ–এই দুজ্ঞেয় বিষয়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষ সেই কাজের জন্য তাকে সেন্ট মেরী মিডের বাড়ি থেকে বাইরে নিয়ে আসা হয়েছে। জোসেলিন সেন্ট মেরীর এই প্রাচীন জমিদার ভবনে বাস করছেন মিসেস গ্লাইন, মিস ক্লোটিলডা ব্র্যাডবেরি স্কট আর মিসেস অ্যানথিয়া ব্র্যাডবেরি স্কট। তার এখানে আসার ব্যবস্থা মিঃ র্যাফায়েলই করে গেছেন মৃত্যুর আগে। তার আইনজ্ঞদের নির্দেশ দিয়ে নিশ্চয় ভ্রমণ সংস্থার আসন সংরক্ষণ করেছিলেন। বিশেষ কোন উদ্দেশ্য ছাড়া–কেবল দুটি রাতের জন্য, এমন বন্দোবস্ত করা তার মত লোক কখনোই করেননি।
মিস মারপলের ধারণা হল, মিসেস গ্লাইন আর তার দুটি বোন নিশ্চিত সেই ব্যাপারটির সঙ্গে জড়িত। তাকে তা বের করতে হবে।
খুব সতর্ক হয়ে তাকে পদক্ষেপ করতে হবে। কোন ভাবেই, কোন সংবাদেই উত্তেজনা বা কৌতূহল প্রকাশ করা তার ঠিক হবে না।
সচেতন থেকে তাকে বের করতে হবে কোন আত্মীয়তা বা ঘটনা বা জীবনের ঘটনার কথা যা এই তিন বোনের সঙ্গে জড়িত নয় অথচ এদের কাছাকাছিই ঘটে থাকবে সেই ঘটনা।
যাই হোক, দুদিন এখানে থাকবেন স্থির করলেন তিনি। তারপরে আবার ভ্রমণে যোগ দেবেন। হয়তো তিনি যা চাইছেন, তা ওই কোচেই রয়েছে।
একজন বা বহুজন, কোন নির্দোষ বা নির্দোষ নন, হয়তো দীর্ঘ অতীতের কোন কাহিনী।
এই সময় দরজায় শব্দ করে মিসেস গ্লাইন ঘরে প্রবেশ করলেন।
আশা করি আরাম বোধ করছেন এখানে। আপনার জিনিসপত্র বের করে দেব?
–ওঃ ধন্যবাদ। টুকিটাকি সামান্য জিনিসটা আমিই বার করে নিয়েছি।
এরপর বাড়ির নিচতলাটা দেখাবেন বলে মিসেস গ্লাইন মিস মারপলকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলেন।
–বাড়িটা সত্যিই চমৎকার, বললেন মিস মারপল, ১৭০০ সালে তৈরি মনে হয়।
–১৭৮০ সালে। বললেন মিসেস গ্লাইন।
চমৎকার বড় একখানা ঘরে এনে বসানো হলো মিস মারপলকে। অন্য দুই বোন সেই সময় ঘরেই ছিলেন।
তিন বোন। ল্যাভেনিয়া গ্লাইন। ক্লোটিলডা ব্র্যাডবেরি স্কট। অ্যানথিয়া ব্র্যাডবেরি স্কট।
মিস মারপল তিন বোনকে কথার ফাঁকে ফাঁকে লক্ষ্য করতে লাগলেন।
ক্লোটিলডা সুন্দরী। ল্যাভেনিয়া সরল। অ্যানথিয়া আকর্ষণীয়া। তার একটি চোখের পাতা মাঝে মাঝেই কেমন কেঁপে ওঠে। আচমকা পেছনে ফিরে তাকায়। এতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। যেন কেউ তাকে সব সময় লক্ষ্য করছে। অ্যানথিয়ার এই অভ্যাসটা খুবই অদ্ভুত মনে হল মিস মারপলের।
.
০৯.
মাত্র তিনদিন হয়েছে। মিস মারপল ভ্রমণে বেরিয়েছেন। ভ্রমণের বিষয়ে বিবরণ দেবার তেমন কিছু ছিল না।
–মিঃ র্যাফায়েল নিশ্চয় আপনার পুরনো বন্ধু ছিলেন? জ্যেষ্ঠ বোন ব্র্যাডবেরি স্কট প্রশ্ন করলেন।
–ঠিক তা নয়, বললেন মিস মারপল, তাঁকে প্রথম দেখি–যখন ওয়েস্ট ইণ্ডিজে যাই। সম্ভবত তিনিও সেখানে স্বাস্থ্য ফেরাতে গিয়েছিলেন।
-হ্যাঁ। শেষ দিকে তিনি অক্ষম হয়ে গিয়েছিলেন, অ্যানথিয়া বললেন, আপনি লণ্ডনে থাকেন?
-না, গ্রামের দিকে থাকি। লুমাউথ আর মার্কেট বেসিংয়ের মাঝামাঝি আমাদের গ্রামটা। লণ্ডন থেকে পঁচিশ মাইল। মিঃ র্যাফায়েল মনে হয় লণ্ডনেই থাকতেন?
–কেন্টে তাঁর এক বাগানবাড়ি ছিল ক্লোটিলডা বললেন, কালেভদ্রে লণ্ডনে গেলে তার সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হত।
-আপনারা আমাকে যে অনুগ্রহ করে নিমন্ত্রণ জানালেন এটা তার সদাশয়তা।
এর আগে তাঁর অনেক বন্ধুকেই ভ্রমণের ফাঁকে আমরা নিমন্ত্রণ করে এনেছিলাম, বললেন ক্লোটিলডা, আগামীকাল সেন্ট বোনাভেঞ্চারে আপনাদের ভ্রমণ খুবই ক্লান্তিকর হবে।
-আপনি বাগান ভালবাসেন? অ্যানথিয়া বললেন।
–হ্যাঁ। এদের তালিকায় ঐতিহাসিক ভবন আর সংলগ্ন চমৎকার বাগান দেখতে পাব বলে উদগ্রীব হয় আছি।
এইরকম কথোপকথন ছিল খুবই সাধারণ আর নীরস। সবই স্বাভাবিক মনে হলেও মিস মারপলের মনে হল এখানে অস্বাভাবিক কিছু আছে।