–আমরা জানতে পারব অবশ্যই, বললেন মিস মারপল, খুনীদের চরিত্র আমি জানি, তারা কখনো হাতগুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। দু দুটো খুন তারা করেছে–এর পর তারা চুপ করে বসে থাকবে না। আর তাই তারা অচিরেই আমাদের নজরে এসে যাবে। পুলিস সকলের ওপরেই নজর রেখেছে। সবচেয়ে বড় কথা হল, এলসপেথ যে কোনো মুহূর্তে এখানে হাজির হচ্ছে।
তুমি যেভাবে বললে, বুঝতে পারছি বটে, কিন্তু কেমন অস্বস্তি বোধ হচ্ছে, ওভাবে বলা–
বন্ধুর দিকে তাকিয়ে সলজ্জ কণ্ঠে বললেন মিসেস এলসপেথ ম্যাকগিলিকার্ডি।
–অস্বস্তির কি আছে বুঝতে পারছি না। বাড়ি পৌঁছলে, কথা বলতে বলতে তুমি বলতেই পার, আমি কি একবার ওপরে যেতে পারি
বন্ধুকে আশ্বস্ত করলেন মিস মারপল।
-যাই বল, বাড়ি পৌঁছেই সঙ্গে সঙ্গেই ওরকম বলা–
-দেখো, এরকম ঘটনা কেউ অস্বাভাবিক ভাববে না। তোমার হজমশক্তির পক্ষে আপত্তিকর যদি কিছু তুমি খেয়ে থাক–ওপরে যাওয়ার প্রয়োজন তোমার হতেই পারে–
–সে না হয় হল, তোমার উদ্দেশ্যটা এবার আমাকে বল।
–সেটা এখনই আমি বলতে চাই না।
–জেন, এ বড় বিরক্তিকর। জরুরী দরকার বলে তুমি আমাকে এতদূর ইংলন্ড অবধি ছোটা করিয়েছ, অথচ
আমি দুঃখিত এলসপেথ। কিন্তু এছাড়া আমার উপায় ছিল না। পুলিস সতর্ক নজর রেখেছে, তবু যে কোনো মুহূর্তে একজন তোক খুন হয়ে যেতে পারে, আমি আশঙ্কা করছি। এক্ষেত্রে আসাটা তোমার কর্তব্য বলেই মনে হয়েছে আমার। কর্তব্যকর্ম আমরা–তুমি বা আমি, কেউই অবহেলা করতে পারি না।
–তা অবশ্যই পারি না।
-কাজেই, তোমাকে যা করতে বলেছি, আমি ভেবেচিন্তেই বলেছি। চল, ওই তো ট্যাক্সি আসছে।
দুই বৃদ্ধা ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে রাদারফোর্ড হলের দিকে যাত্রা করলেন।
.
ঘণ্টার শব্দ শুনে এমাই দরজা খুলে দিল। মিস মারপল ঘরে ঢুকলেন। তার পেছনে ঢুকলেন মিসেস ম্যাকগিলিকার্ডি।
প্রাথমিক সম্বোধন শেষ করে মিস মারপল বললেন, পরশু বাড়ি যাচ্ছি, তাই মনে হল, তোমাকে বিদায় জানিয়ে আর লুসির প্রতি তোমার সহৃদয় ব্যবহারের জন্য ধন্যবাদ না জানিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে না।
আমার বন্ধু মিসেস ম্যাকগিলিকার্ডিকেও নিয়ে এসেছি তোমার সঙ্গে পরিচয় করিতে দিতে। উনি এখন আমার কাছে রয়েছেন।
মিস ম্যাকগিলিকার্ডি এমার সঙ্গে করমর্দন করলেন।
এই সময় লুসি ঘরে ঢুকল। মিস মারপলদের দেখে সে খুশি হল।
-কী আশ্চর্য..মাসী তোমরা
–মিস ক্রাকেনথর্পকে বিদায় জানাতে এলাম। উনি তোমার প্রতি এত সহৃদয় ব্যবহার করেন
কেড্রিকও নেমে এসেছিল। তার দিকে তাকিয়ে মিস মারপল বললেন, তোমাদের অসুখের খবর পেয়ে খুবই মর্মাহত হয়েছিলাম। এখন ভালো আছ দেখে স্বস্তি পাচ্ছি।
-হ্যাঁ, আমরা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। বলল কেড্রিক।
–লুসির কাছে শুনলাম, ছত্রাক থেকে নাকি হয়েছে
বললেন মিস মারপল।
–কারণটা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। বলল এমা।
–তবে আর্সেনিকের একটা গুজব রটেছে চারপাশে। বলল কেড্রিক।
-কেড্রিক, ভাইকে ভর্ৎসনা করল এমা, ইনসপেক্টর ক্রাডক না এসব কথা বলতে বারণ করেছেন।
–সবাই তো এখন জেনে গেছে। বলল কেড্রিক, আপনারাও নিশ্চয় কিছু কিছু শুনে থাকবেন।
-আমি গত পরশু বিদেশ থেকে ফিরেছি। বললেন মিসেস এলসপেথ।
কেড্রিক হেসে বলল, তাহলে গুজব এখন আপনার কানে ওঠেনি। তবে লুসির মাসীমা নিশ্চয় শুনে থাকবেন যে কারিতে আর্সেনিক মেশানো ছিল–সবাই এখন একথা জেনে গেছে।
–আমি এরকমই কিছুটা শুনেছি। কিন্তু এসব কথা নিয়ে তোমাদের বিব্রত করতে চাইনি।
এই সময় দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্প। তিনি লুসিকে চায়ের জন্য তাড়া দিলেন।
-এই মেয়ে, আমার চা এখনো আনননি কেন?
–চা তৈরি মিঃ ক্রাকেনথর্প। আমি এখুনি নিয়ে আসছি।
লুসি চলে গেল। বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্প মিস মারপল ও মিসেস ম্যাকগিলিকার্ডির সঙ্গে পরিচিত হলেন।
একটু পরেই ট্রে ভর্তি স্যান্ডউইচ, রুটি, মাখন, কেক নিয়ে ঘরে ঢুকল ব্রায়ান। লুসির হাতে চায়ের ট্রে।
-এত আয়োজন কিসের–এত? তীব্র স্বরে বলে উঠলেন বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্প, আজকে আমাদের পার্টি হচ্ছে নাকি? আমাকে তো কেউ জানায়নি।
-বাবা আজ ডাঃ কুইম্পার আমাদের এখানে চা পান করতে আসছেন। তার জন্মদিন। বলল এমা।
-জন্মদিন? বৃদ্ধ চিড়বিড় করে উঠলেন, জন্মদিন তো শিশুবেলায় হয়, ও এসব দিয়ে কি করবে
এদিকে মিস মারপল ব্রায়ানের সঙ্গে পরিচিত হলেন।
লুসির কাছে তোমার কথা অনেক শুনেছি। তোমাকে দেখে আমাদের সেন্টমেরী মিডের এক সলিসিটরের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সে হল রনি ওয়েলস। বাপের ব্যবসায়ে ঢুকে কিছু করতে পারল না ছেলেটা। পরে পূর্ব আফ্রিকাতে গিয়ে আরও কিসব করার চেষ্টা করল। কিন্তু ব্যর্থ হল। সমস্ত মূলধন জলে গেল। তোমার সঙ্গে তার চেহারার এমন হুবহু মিল, আশ্চর্য তোমার কোনো আত্মীয় নয়তো?
–না, মাদাম, বলল ব্রায়ান, আমার কোনো আত্মীয় আছে বলে জানি না।
কথা বলতে বলতে হঠাৎ জানালার দিকে সরে গেলেন মিস মারপল।
-বাঃ জানলা দিয়ে বাইরেটা সুন্দর দেখাচ্ছে তো! একেবারে ছবির মতো
এমা হাসিমুখে এগিয়ে গেলো তার দিকে।
–বিস্তর জায়গা ফাঁকা, বলল সে, শহরে আছি বোঝাই যায় না।
সেই মুহূর্তে মিসেস ম্যাকগিলিকার্ডি এমার কাছাকাছি এগিয়ে নিচুস্বরে বললেন, ওপরতলায় একটু যেতে পারি–মিস–