–কেড্রিক আর এমার কথা বলছ নিশ্চয়ই? বললেন মিস মারপল।
–এমাকে এর মধ্যে টানা যাচ্ছে না। কেন না সে দীর্ঘচেহারার কালো মানুষ নয়। এরকম মানুষ হল কেড্রিক আর ব্রায়ান ইস্টলি। তবে ব্রায়ান ফর্সা। তার চোখ নীল, কটা গোঁফ। কিন্তু সেদিন…।
বলতে গিয়ে থেমে গেল লুসি।
-হ্যাঁ, বল। কোনো ঘটনা নিশ্চয়ই তোমার চোখে পড়েছে; বুঝতে পারছি।
লেডি স্টডার্ড ওয়েস্ট যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন ঘটনাটা ঘটেছে। লুসি বলতে থাকে, বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে গাড়িতে উঠতে গিয়ে তিনি হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি যখন বাড়িতে ঢুকছিলাম, তখন রাস্তার ওপর একটি লম্বা কালো লোক দাঁড়িয়ে ছিল, সে কে?
-প্রথমে আমি বুঝতে পারিনি, বাইরে রাস্তায় এসে কে দাঁড়াতে পারে। কেড্রিক তো শয্যাশায়ী এখনো। বাড়িতে দ্বিতীয় নোক বলতে ব্রায়ান ইস্টলি। আমি তার কথা বললাম। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বললেন, হ্যাঁ, ঠিক বলেছ, ব্রায়ানই হবে। ফ্রান্সে প্রতিরোধ আন্দোলনের সময় সে একবার আমাদের ডেরায় লুকিয়েছিল।
তাকে তখন কাছে থেকে দেখেছি, তার দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গি, কাঁধের গঠন, সব আমার মনে আছে। পরে তিনি বললেন, এতদিন পরে তার সঙ্গে দেখা হলে খুশি হতাম। কিন্তু আমরা অনেক খুঁজেও ব্রায়ান ইস্টলিকে কোথাও পেলাম না।
মিস মারপল নীরবে লুসির দিকে তাকিয়ে রইলেন।
লুসি বলে চলল, আমি পরে তাকে লক্ষ্য করলাম…সে আমার দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়েছিল… আমি নজর করলাম, একজন মানুষ ফর্সা এবং তার চুল বাদামী হলেও তাকে সময় ও স্থান বিশেষে কালোও দেখাতে পারে। তখনই আমার মাথায় আসে আপনার বন্ধু যাকে ট্রেন থেকে দেখেছিলেন, সে ব্রায়ান হতে পারে।
–তা পারে।
–কিন্তু, অসহিষ্ণুভাবে বলে উঠল লুসি, এতে ব্রায়ানের লাভ কি? টাকাটা তো পাবে তার ছেলে আলেকজান্ডার। তাতে তার ভোগসুখের কিছুটা হেরফের যা হতে পারে, কিন্তু মূলধন নাড়াচাড়া করার অধিকার তো তার থাকবে না।
–সে অধিকার সে পেতে পারে যদি একুশ বছর হবার আগেই আলেকজান্ডারের জীবনে কিছু ঘটে।
সর্বনাশ..অমন কাজ…নিছক টাকার জন্য কোনো পিতা অমন কাজ করবে না–
মিস মারপল বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন, টাকার জন্য মানুষ করতে পারে না এমন কাজ নেই। ইনসিওরেন্সের কিছু টাকার লোভে একজন স্ত্রীলোক তার তিনটি ছেলেকে খুন করেছিল–এমন ঘটনাও আমি জানি। টাকার লোভ এমনই যে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এক বুড়ীর কথা তোমাকে বলি, সাদামাটা ভালো মানুষ সে, কিন্তু তার ছেলে ছুটিতে বাড়িতে এলে তিনি তাকে খুন করেছিলেন।
আরও শুনবে? বৃদ্ধা মিসেস স্টানডইচের কাহিনী তো খবরের কাগজেও ছাপা হয়েছিল। প্রথমে তার মেয়ে মারা গেল, পরে ছেলে। তিনি জানালেন, মেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। বিষ পাওয়াও গেল দইয়ের মধ্যে। পরে জানা গেল তিনি নিজেই তাতে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিলেন। ধরা পড়েছিলেন তিনি তার অবশিষ্ট মেয়ে সন্তানটিকে বিষ প্রয়োগের সময়। এব্যাপারটা অবশ্য একটু অন্যরকম ছিল। জীবন উপভোগের আকাঙ্ক্ষা এই বৃদ্ধাকে উন্মাদ করে তুলেছিল। ছেলেমেয়েরা তার চেয়ে বেশি দিন বাঁচবে, জীবন উপভোগ করবে, এই ঈর্ষা থেকেই সে তার সন্তানদের খুন করেছিল।
যাইহোক, তুমি খুবই বিচলিত হয়ে পড়েছ বুঝতে পারছি। ভেবো না; এলসপেথ ম্যাকগিলিকার্ডির আসার অপেক্ষায় রয়েছি আমি, যে কোনো দিন সে এখানে পৌঁছতে পারে।
তার সঙ্গে এখানকার কি সম্পর্ক তো বুঝতে পারছি না।
–হয়তো কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু তার আসাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। তুমি বাছা অত দুশ্চিন্তা করো না।
–চিন্তা না করে তো পারছি না। এই পরিবারের সঙ্গে আমি কেমন জড়িয়ে পড়েছি।
–আমি সেটা লক্ষ্য করেছি। পরিবারের দুজনের প্রতি তুমি আসক্ত হয়ে পড়েছ।
–আপনার একথার অর্থ?
–এই পরিবারের দুটি ছেলের একজন ছেলে অন্যজন জামাই। দুঃখের বিষয় যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দুজন মারা গেছে। আর যে দুজন বেশি আকর্ষণীয় তারা জীবিত। কেড্রিক আকর্ষণীয় একারণে যে সে নিজের মূলকে কখনো বড় করে তুলে ধরে না। তার এই দিকটাই তোমাকে আকর্ষণ করেছে।
মিস্টার ইস্টলি একটি দুর্বল ছিচকাঁদুনে বালক যেন। এরকম চরিত্রেরও আকর্ষণ আছে।
–কিন্তু এদের দুজনের একজন খুনী। কেড্রিক, দুই ভাইয়ের মৃত্যুতে সে একটুও বিচলিত নয়। এখন থেকেই মনের আনন্দে রাদারফোর্ড হল সম্পর্কে পরিকল্পনা তৈরি করছে। জায়গাটার উন্নতি করার জন্য অনেক টাকার দরকার, একথাও সে বলছে।
–এসব কথা শুনতে ভালো লাগে না। বললেন মিস মারপল।
এদিকে ব্রায়ানের অবস্থা দেখুন, তার মনোগত ইচ্ছা রাদারফোর্ড হলেই বাস করা। আলেকজান্ডারকে নিয়ে সে ওখানেই থাকতে পারবে। এসম্পর্কে অনেক মতলবও তার আছে।
-তাই বুঝি।
–কিন্তু অবাস্তব সব কল্পনা। খুব কার্যকর নয়। যুদ্ধবিমানের পাইলট বলেই বোধহয় কল্পনার আকাশে ভাসতে ভালোবাসে।
ব্রায়ান সম্পর্কে আর কি মনে হয় তোমার?
মিস মারপল চোখের কোণ দিয়ে তাকালেন লুসির দিকে।
–আর একটা বিষয় নজরে এসেছে দুদিন আগে। আমার সন্দেহ ব্রায়ান সত্যিই সেই গাড়িতে ছিল।
-প্যাডিংটন থেকে চারটে তেত্রিশে যে গাড়ি ছেড়েছিল? তবে সত্যটা না জানতে পারা পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না।