.
ডেভিডের কাছে লেখা চিঠির জবাবও যথাসময়ে এসে পৌঁছল। অন্যান্য আনুষঙ্গিক কথার পর তার জরুরী বিষয়টা সম্পর্কে সে লিখেছে–দুটি ট্রেন সমদূরত্বে পাশাপাশি একই দিকে চলবে–মাত্র দুটি ট্রেনের ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা ঘটতে পারে। চারটে তেত্রিশ এবং পাঁচটার গাড়ি। প্রথম ট্রেনটা মার্কেট বেসিং অবধি যাত্রায় হেলিংব্রডওয়ে বারওয়েল, হীথ, ব্র্যাকহ্যাম্পটন প্রভৃতি স্টেশনে থামে।
এই ট্রেনটা ধীরগামী।
পাঁচটার গাড়িটা ওয়েলস এক্সপ্রেস। এই গাড়িতে কারণ্ডিফ নিউপোর্ট এবং সোয়ানসি যাওয়া যায়।
চারটে পঞ্চাশের গাড়িটা প্রথম গাড়িকে ব্র্যাকহ্যাম্পটন পৌঁছবার আগে যে কোনো জায়গায় ধরে ফেলতে পারে। পরের গাড়িটা চারটে পঞ্চাশের গাড়িকে ছাড়িয়ে যায় ব্র্যাকহ্যাম্পটন স্টেশনের ঠিক আগে।
ডেভিডের পাঠানো খবরগুলো পর্যালোচনা করে মিস মারপল বুঝতে পারলেন, ম্যাকগিলিকার্ডি যে গাড়ির কথা বলেছে সেটা সোয়ানসি এক্সপ্রেস নয়। কেননা, সে বলেছিল গাড়িতে করিডর ছিল না। চারটে তেত্রিশের গাড়িতেই খুনের ঘটনাটা ঘটে থাকবে।
নির্দিষ্ট অঞ্চলের অবস্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে হলে আরও দু-একবার যাওয়া-আসা করা দরকার।
এজন্য সময় নষ্ট করলেন না তিনি। বারোটা পনেরোর গাড়িতেই লন্ডন রওয়ানা হয়ে গেলেন।
এবারে ভ্রমণের সময় কিছু খুঁটিনাটি বিবরণ সংগ্রহ করতে পারলেন। ব্র্যাকহ্যাম্পটন স্টেশনের কাছাকাছি এসে ট্রেনটা একটা দীর্ঘ বাঁক ঘুরল। গতিবেগও কমল। রাতের অন্ধকার থাকায় ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারলেন না।
দিনের আলোতে জায়গাটা দেখার উদ্দেশ্যে পরদিন ভোরেই তিনি লন্ডনের ট্রেনে প্রথম শ্রেণীর কামরায় চেপে বসলেন।
লেনার্ডের কাছ থেকে চেয়ে আনা মানচিত্রটা সঙ্গেই এনেছিলেন। ট্রেন ব্র্যাকহ্যাম্পটন স্টেশনে পৌঁছবার পনেরো মিনিট আগে তিনি সেটা খুলে বসলেন।
সেই দীর্ঘ বাঁকটা এল। গাড়ির গতিবেগ কমে এলো। সঙ্গে তিনি গাড়ির সঠিক অবস্থান স্থানটি মানচিত্র চিহ্নিত করলেন।
গাড়িটা বেশ উঁচু একটা বাঁধের ওপর দিয়ে চলেছে তখন। নিচে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের দৃশ্যের সঙ্গে মানচিত্র মিলিয়ে তাঁর ধারণা পরিষ্কার করে নিলেন।
পর্যবেক্ষণ শেষ করে বাড়ি ফিরে এলেন মিস মারপল। রাতে ফ্লোরেন্স হিলের কাছে একটা চিঠি লিখলেন। সে থাকে ৪, ম্যাসিডন রোড, ব্র্যাকহ্যাম্পটন।
পরদিন কাউন্টি লাইব্রেরীতে গিয়ে ব্র্যাকহ্যাম্পটনের আঞ্চলিক গেজেটিয়ার ইত্যাদি ঘেঁটে ইতিহাস জেনে নিলেন।
এভাবে তার অনুসন্ধান কার্যের প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেন।
ঘটনার বিষয়ে ইতিমধ্যেই একটা থিওরি ছকে নিয়েছিলেন। এবারে তার সত্যতা নিরূপণের ব্যবস্থা করতে হবে। এব্যাপারে তাকে সাহায্য করতে পারে এমন একজনের কথা ভাবতে বসলেন তিনি। বুদ্ধি এবং সাহস দুই দরকার কাজটার জন্য। কে হলে ভালো হয়?
লুসি আইলেসব্যারোর কথা মনে পড়ে মিস মারপলের।
.
০৩.
মহিলা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত শাস্ত্রে প্রথম স্থান অধিকার করেছিল। বর্তমানে বয়স বত্রিশ। অসাধারণ তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারিণী। শিক্ষাজগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সে স্বেচ্ছায় অদ্ভুত এক পেশা বেছে নিয়েছিল।
লুসি লক্ষ্য করেছিল, গৃহস্থালীর সবরকম কাজে দক্ষ কর্মীর চাহিদা খুবই বেশি। উপযুক্ত কর্মীর খুবই অভাব। সকলকে আশ্চর্য করে এই ক্ষেত্রটাকেই তিনি তার কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিলেন এবং অদ্ভুত কর্মদক্ষতা গুণে অল্পসময়ের মধ্যেই সাফল্য অর্জন করল। কাজের সুবাদে কোনো কোনো মহলে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সে।
সাধারণতঃ ছুটিছাটায় কেউ বাইরে গেলে, বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে কিংবা বাচ্চার দেখাশোনার দরকার হলে লুসির ডাক পড়ে।
যে বাড়ির কাজ সে হাতে নেবে, সেখানে কোথায় কখন কি দরকার সব সে বুঝে নেয় এবং কঠোর পরিশ্রমের তোয়াক্কা না করে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় সে সমস্ত সম্পন্ন করে। ঘরের শান্তি স্বস্তি ফিরে আসে।
এই কারণে পারিশ্রমিক তুলনায় বেশ মোটা রকমের গুণতে হলেও নির্দ্বিধায় এবং নির্ভাবনায় লুসির কথাই লোকে ভাবে।
তার কাজের খুব চাহিদা হওয়ার ফলে কাজ গ্রহণের ক্ষেত্রে তার কিছু স্বাধীনতা ছিল। পছন্দ হলে সে কাজ সে নিত না। দীর্ঘমেয়াদী কাজ সে গ্রহণ করত না। তার মেয়াদ ছিল দুই সপ্তাহ। বিশেষ ক্ষেত্রে সময়টা বাড়িয়ে একমাস পর্যন্ত করা চলত।
.
মিস মারপলের চিঠিটা পেয়ে বারকয়েক মনোযোগ দিয়ে পড়ল লুসি। দুবছর আগে উপন্যাস লেখক রেমন্ট ওয়েস্টের কাছে একটা কাজ নিয়েছিল সে। সেই সময় মিস মারপলের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। মহিলাকে তার খুব ভালো লেগেছিল। সেণ্টমেরী মিডে তার বাড়িতেও সে গিয়েছিল।
মিস মারপল লিখেছিলেন বিশেষ ধরনের একটা জরুরী কাজের ব্যাপারে তিনি লন্ডনের কোনো জায়গায় তার সঙ্গে আলোচনা করতে চান।
লুসি তখুনি টেলিফোন তুলে মিস মারপলের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরদিন তার ক্লাবেই সাক্ষাৎকারের সময় জানিয়ে দিল সে।
পরদিন যথাস্থানে একটা নিরিবিলি কক্ষে দুজনে আলোচনায় বসল।
মিস মারপল বললেন, আমি বলেছি কাজটা একটু অন্য ধরনের। আসলে একটা মৃতদেহ খুঁজে বার করার জন্য তোমার সাহায্য আমার দরকার হয়ে পড়েছে।