–ট্যাবলেটগুলোতে বিষ মেশানো ছিল! চিন্তিতভাবে বললেন মিস মারপল।
–তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এক নারকীয় পরিকল্পনা।
-হ্যারল্ড যে ট্যাবলেট আগে খেয়েছিলেন হুবহু সেরকমই ছিল দেখতে। সঙ্গে একটুকরো কাগজে লেখা ছিল, ডাঃ কুইম্পারের নির্দেশ অনুসারে পাঠানো হল।
ডাঃ কুইম্পার ওগুলোর অর্ডার দেননি। একজন কেমিস্টের প্যাডে চিরকুট লেখা হয়েছিল। অথচ সেই কেমিস্টও এই ব্যাপারে কিছুই জানে না। একটা ব্যাপার পরিষ্কার বোঝা গেছে, ট্যাবলেটের বাক্সটা রাদারফোর্ড হল থেকেই পাঠানো হয়েছিল।
-তুমি কি নিশ্চিত যে ওটা রাদারফোর্ড হল থেকেই প্রেরিত হয়েছিল?
–আমি নিশ্চিত। আমরা তদন্ত করে দেখেছি, মানসিক উত্তেজনা প্রশমনের ওই ট্যাবলেটগুলো ওই বাক্সের মধ্যেই ছিল। ওগুলো এমার ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছিল।
–এমার জন্য
-হ্যাঁ। বাক্সের ওপর এমার আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে। এছাড়া ছিল নার্সের আর যে কেমিস্ট তাতে ট্যাবলেট ভরেছিল তার হাতের ছাপ। অন্য কারো ছাপ ছিল না। খুবই সতর্কতার সঙ্গে কাজটা করা হয়েছিল।
–প্যাকেটের আসল ট্যাবলেটগুলো সরিয়ে অন্য ট্যাবলেট ভরা হয়েছিল।
–হ্যাঁ। ট্যাবলেটগুলো দেখতে একই রকম ছিল।
–আজকাল হরেক রকমের ট্যাবলেট বেরিয়েছে রোগের জন্য–একটা থেকে আরেকটার তফাৎ ধরা কষ্টকর। অথচ আমাদের সময়ে এমন গোলযোগ ঘটবার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। ডাক্তাররা নানান রঙের মিকশ্চার ব্যবহার করতেন। তা ওই ট্যাবলেটগুলো কিসের ছিল?
-একোনাইটের। বিষাক্ত। জলের সঙ্গে মিশিয়ে দেহের বাইরের অংশে প্রয়োগের জন্য দেওয়া হয়।
–সেগুলো খেয়ে হারল্ড মারা গেছে।
–ওকথা চিন্তা করলে এখনো আমার বুকে যন্ত্রণা হয়। ব্যাপারটা খুবই মর্মান্তিক। কাতর স্বরে বললেন ক্রাডক।
–আমি কোনো থৈ পাচ্ছি না। নিজের গলদটা ভালোভাবেই বুঝতে পারছি। গোটা ব্যাপারটাই কেমন গুলিয়ে ফেলেছি। এখানকার চিফ কনস্টেবল স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড ডেকে পাঠিয়েছে। আমি যে এখানে গর্দভের মতো কাজ করেছি তা তারা জেনে যাবে।
–তুমি অতো অধীর হয়ে পড়েছ কেন
–মিস মারপল, আপনার কাছে ভাবাবেগ প্রকাশ করে ফেলেছি বলে কিছু মনে করবেন না। আপনি চিন্তা করে দেখুন আমার ব্যর্থতা কী নিদারুণ। আলফ্রেডকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে, হারল্ডের মৃত্যুও বিষপ্রয়োগে। আমি জানি না শয়তানের মতো কে এসব কাজ করে চলেছে। আবার দেখুন, সেই নিহত স্ত্রীলোকটি, তার কি পরিচয় এখনো জানতে পারলাম না।
এডমান্ড ক্রাকেনথর্পের ঘনিষ্ঠ মহিলা মার্টিন ডুবয় রাদারফোর্ড হলে এসে নিহত হয়েছেন, এই কাহিনীর সঙ্গে সমস্ত ঘটনা এমন সুন্দর ভাবে মিলে যাচ্ছিল যে খুবই আশান্বিত হয়ে উঠেছিলাম।
কিন্তু দেখুন, অবিশ্বাস্য ভাবে আসল মার্টিন আত্মপ্রকাশ করলেন আর আমার এত পরিশ্রম যেন এক ফুকারে নস্যাৎ হয়ে গেল। এখন আর তল খুঁজে পাচ্ছি না।
স্যার রবার্ট স্টডার্ড ওয়েস্টের গৃহিণী বলে যিনি নিজের পরিচয় দেন, তার বক্তব্য সন্দেহাতীত। তাহলে গুদামঘরে পাথরের কফিনে যে মৃতদেহটি নিয়ে আমরা এত দৌড়ঝাঁপ করলাম, দফায় দফায় এত জিজ্ঞাসাবাদ, সেই স্ত্রীলোকটি কে? তার খুনের রহস্য যেখানে ছিল, সেখানেই রয়ে গেল। আমি তাহলে কোথায়? আবার সেই আন্না ট্রাভিনস্কির ব্যাপারটা দেখছি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, এই ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই।
সম্পর্ক নেই বলেই ভাবছ?
মৃদু কাশির সঙ্গে ফিসফিস করে কথাগুলো বললেন মিস মারপল।
সন্দেহ পূর্ণ দৃষ্টিতে মিস মারপলকে লক্ষ্য করে ক্রাডক বললেন, জামাইকা থেকে লেখা সেই চিঠিতেই তো ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল।
-কিন্তু সেটাকে সত্যি সত্যি প্রমাণ বলে কি মেনে নেওয়া যায়? বললেন মিস মারপল।
–কেন নয়?
-আমি বলতে চাইছি, ওরকম একটা চিঠি যে কোনো লোক পৃথিবীর যে কোনো জায়গা থেকে পাঠাতে পারে। মিসেস ব্রিয়ারলির ঘটনাটা শুনলেই তুমি পরিষ্কার বুঝতে পারবে আমি কি বলতে চাইছি। তার স্নায়বিক বিকার এত বেড়ে গিয়েছিল যে সকলে তাকে পরামর্শ দিল কোনো মানসিক হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ছেলেদের এসব জানাতে তিনি সঙ্কোচবোধ করছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি অদ্ভুত এক কাণ্ড করলেন। তিনি চোদ্দখানা চিঠি লিখলেন এবং সেগুলো বিদেশের চোদ্দটা জায়গা থেকে পোস্ট করার ব্যবস্থা করলেন। চিঠিগুলোতে তার ছেলেদের জানানো হলো যে, তিনি মনের আনন্দে বিদেশ ভ্রমণ করছেন।
-বুঝতে পেরেছি, কি বোঝাতে চাইছেন, বললেন ক্রাডক, মার্টিনের কাহিনীটা আমাদের এত সম্ভবপর বলে মনে হল যে জামাইকার সেই চিঠির ব্যাপারটা তদন্ত করে দেখার কথা বিবেচনা করিনি। জানি না সেখানে সম্ভাব্য কোনো সূত্র অবহেলায় পরিত্যক্ত হল কিনা।
মার্টিন ক্রাকেনথর্পের নাম সইকরা একটা চিঠি এমার কাছেও লেখা হয়েছে। লেডি স্টডার্ড পরিষ্কার জানিয়েছেন তিনি সেই চিঠি কখনওই লেখেননি। তাহলে কে পাঠালো সেই চিঠি? মার্টিন বলে পরিচয় দিয়ে এরকম একটা চিঠি পাঠাবার উদ্দেশ্যই বা কি? নিছকই কি কিছু অর্থ আদায়ের ফিকিরে? এগুলো যে জট পাকানো জটিল রহস্য নিশ্চয় আপনি তা স্বীকার করবেন?
হ্যাঁ, তা স্বীকার করি।
-তারপর আরও আছে দেখুন। এমা মার্টিনের নামে লন্ডনের ঠিকানায় যে চিঠিখানা লিখেছিল তার খামখানা পাওয়া গেল রাদারফোর্ড হলে। মার্টিন যদি সেখানে নাই এসে থাকে তাহলে চিঠির ঠিকানা লেখা খামখানা এলো কি করে? সত্যি সত্যি সে এসেছিল প্রমাণ হয়?