–আপনি যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন বোঝা যাচ্ছে।
–মাথা খেলাতে পারছি বলে? তো আলফ্রেডের ব্যাপারটা কি দাঁড়াল?
–তদন্ত মুলতুবি রয়েছে।
–বাড়িসুদ্ধ লোককে এমন বিষপ্রয়োগ, পুলিসও থৈ পাচ্ছে না। তুমি নিজের দিকে নজর রেখো সুন্দরী।
-তা রাখছি।
.
লাঞ্চের আগে লুসি মিস মাপলের কাছে ফোন করল।
–আপনার কাছে কদিন যেতে পারিনি বলে দুঃখিত। একদম ফুরসৎ করতে পারছি না।
–খুবই স্বাভাবিক। আমাদের অবশ্য এখন কিছু করার নেই, আরও কদিন অপেক্ষা করতে হবে।
–কিসের অপেক্ষার কথা বলছেন?
–এলসপেথ ম্যাকগিলিকার্ডির ফিরে আসার জন্য। আমি অবশ্য তাড়া দিয়ে লিখেছি। তুমি মেয়ে সাবধানে থেকো
–আপনি কি আশা করছেন–
-মৃত্যুর ঘটনা আর ঘটবে কিনা বলছ? দেখ, ভবিষ্যতের কথা কিছু বলা যায় না; বিশেষ করে কাছাকাছিই যখন একজন খুনী রয়েছে।
.
ফোন ছেড়ে লুসি রান্নাঘরে গেল। সে নিজের ট্রে নিয়ে ছোট পড়ার ঘরে গিয়ে বসল। তার খাওয়া শেষ হতে হতেই ব্রায়ান ইস্টালি দরজা ঠেলে ঘরে প্রবেশ করল।
-আপনি এসময়ে
–খবর নিতে এলাম, সকলে কেমন আছে?
–সামলে উঠেছেন। হারল্ড কাল লন্ডনে ফিরে যাচ্ছেন।
ব্যাপারটা কি সত্যিই আর্সেনিক ঘটিত, তুমি কি মনে কর?
–সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বাড়ির মধ্যে চুপি চুপি ঢুকে খাবারে বিষ মেশাচ্ছে, এমন শত্রুতা কে করছে বলতো?
–তেমন লোক আমিও তো হতে পারি। সুযোগ অনেক বেশি।
-না, লুসি, একাজ তুমি করতে পার না। কারির মধ্যে যদি কেউ কারচুপি করে থাকে, তবে যে পাঁচজন খেতে বসেছিল, তাদেরই মধ্যে কেউ একজন।
লুসির খাওয়া শেষ হলে ব্রায়ান তার সঙ্গে রান্নাঘরে এলো।
–দেখো, যা বুঝতে পারছি, বাড়িটা শেষ পর্যন্ত কেড্রিকের হাতেই আসছে। কিন্তু আমি জানি সে সব বিক্রিবাটা করে বিদেশে চলে যাবে।
হ্যারল্ড অবশ্য এমন সেকেলে বাড়ি রাখতে চাইবে না। এমা তো একা মানুষ। এখনো পর্যন্ত বিয়েই করল না। এই নির্জন পুরী রেখে সে কি করবে? আমি আপাততঃ বেকার। কিন্তু বাড়িটা যদি আলেকজান্ডারের হাতে আসত তাহলে আমরা দুটিতে মিলে আনন্দে কাটাতে পারতাম। কিন্তু কি জান, আলেকজান্ডারকে এটা পেতে হলে এই বাড়ির সকলের মরা দরকার। ধ্যাৎ, কি সব আজেবাজে কল্পনা করছি। তবে যাই বল, বুড়ো অতি সহজে মরছে না।
-তাই মনে হয়।
.
রান্নাঘরের মেঝে ঘষে পরিষ্কার করছিল মিসেস কিডার। আর কাজের ফাঁকে রাদারফোর্ড হলের ঘটনা নিয়ে, বাইরে লোকের মুখে যে গুজব রটেছে তা লুসিকে শোনাচ্ছিল।
এমন সময় দরজায় ঘন্টা বাজল।
ডাক্তার কুইম্পার এসেছেন অনুমান করে লুসি এসে দরজা খুলল। কিন্তু দেখে অবাক হল, দীর্ঘাঙ্গী, অভিজাত চেহারার এক মহিলা দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। তার পেছনে বাড়িতে ঢোকার পথের ওপরে একটি রোলস গাড়ি দাঁড়ানো। মহিলার বয়স, পঁয়ত্রিশের গায়েই হবে।
এমা ক্রাকেনথর্পের সঙ্গে দেখা করতে পারি?
আগন্তুক মহিলার সুমিষ্ট কণ্ঠস্বরে মুগ্ধ হল লুসি।
–আমি দুঃখিত, তিনি খুবই অসুস্থ।
–আমি জানি তিনি কিছুদিন ধরে অসুস্থ আছেন। আমার অনুমান, আপনিই মিস আইলেসব্যারো। আমার ছেলে স্টডার্ড ওয়েস্ট সারাক্ষণই আপনার প্রশংসা করছে। আলেকজান্ডার আপাততঃ আমার কাছেই আছে।
মিসেস স্টডার্ড ওয়েস্টের পরিচয় পেয়ে লুসি যথোচিত সম্ভ্রমের সঙ্গে তাকে ড্রইংরুমে এনে বসাল।
–আমার ছেলের কাছে একটা বিষয় জানতে পেরে আমি মিস ক্রাকেনথর্পের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। বিষয়টা খুবই জরুরী। যদি তাকে কথাটা বুঝিয়ে বলেন।
আগন্তুককে বসিয়ে লুসি ওপরে গিয়ে এমাকে সব জানাল।
তাকে নিয়ে এসো।
.
–বোধহয় স্কুলের স্পোর্টসের সময় আপনাকে দেখেছি।
এমার সঙ্গে করমর্দন করে বিছানার পাশে বসানো চেয়ারে আসন গ্রহণ করলেন লেডি।
-এখন মনে পড়েছে, আমিও আপনাকে দেখেছি। বলল এমা।
-একটা গুরুতর কারণেই আমাকে এভাবে চলে আসতে হল। এখানে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, ছেলেরা এ নিয়ে খুবই উত্তেজিত। আমাকে তারা অনেক কথা বলেছে। তারা বলেছে, যে মেয়েটি খুন হয়েছে সে নাকি ফরাসি। আপনাদের ভাই যিনি যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন, তার পরিচিত ছিল। একথা কি সত্যি?
–এরকম একটা সম্ভাবনা আমরা বিবেচনা করেছি। আবেগকম্পিত স্বরে বলল এমা, ঘটনাটা সত্যি হতেও পারে।
নিহত স্ত্রীলোকটিই মার্টিন–পুলিসের এরকম মনে করার কারণ কি? তার সঙ্গে কিছু কাগজপত্র ছিল?
-সেরকম কিছু ছিল না। তবে এই মার্টিনের কাছ থেকে আমি একটা চিঠি পেয়েছিলাম।
–মার্টিনের কাছ থেকে? আপনি চিঠি পেয়েছিলেন?
-হ্যাঁ। সে আমাকে জানিয়েছিল যে সে ইংলন্ডে এসেছে, আমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। আমি তাকে আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু পরেই একখানা তারবার্তা পাঠিয়ে সে জানায়, ফ্রান্সে ফিরে যাচ্ছে।
সে সত্যিই ফ্রান্সে ফিরে গিয়েছিল কিনা আমরা জানি না। এরপর এখানে তার ঠিকানা লেখা একটা খাম পাওয়া যায়। তাতেই অনুমান হচ্ছে যে সে এখানে এসেছিল। কিন্তু আসলে
এমার কথা শেষ হবার আগেই লেডি স্টডার্ড ওয়েস্ট বললেন, এ কাহিনীর সঙ্গে আমার কোথায় সম্পর্ক তা আপনার পক্ষে অনুমান করা সম্ভব নয়। আর পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সেই কথা জানাবার তাগিদ বোধ করেছি আমি।
-বলুন।
–যেকথা কোনোদিনই আপনাকে বলব না বলে আমি ঠিক করেছিলাম, ঘটনাচক্রে তাই আজ প্রকাশ করতে হচ্ছে। দেখুন, আমিই মার্টিন ডুবয়।