–কিন্তু আলফ্রেড খুন হওয়ার কারণটা ভেবে পাচ্ছি না।
চিন্তিতভাবে বললেন ক্রাডক।
–আলফ্রেডই খুনীর লক্ষ্য ছিল বলে আপনি ভাবছেন?
-হ্যাঁ, সেই ব্যাপারটা ভাবছি। কিন্তু সব ঘটনার পেছনেই যে একটা উপলক্ষ কাজ করেছে তেমন সূত্র পাওয়া যাচ্ছে না। দেখুন, এতদিনে মোটামুটি মেনে নেওয়া হয়েছে পাথরের কফিনের মৃতদেহটি এডমান্ডের বিধবা পত্নী মার্টিনের ছিল।
সেই ঘটনার সঙ্গে আলফ্রেডের হত্যার যোগাযোগ রয়েছে যদি ভাবতে হয় তাহলে বলতে হয়, সমস্ত বিপত্তির মূলে হল পরিবার।
–আমি কিছু ধরতে পারছি না।
যাইহোক, ওপরতলার রোগীদের মধ্যেই একজন বিষপ্রয়োগকারী রয়েছে, একথা মনে রেখো। তুমি নিজের সম্পর্কে সতর্ক থাকবে।
.
–ডাঃ কুইম্পার বলেছেন বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্প আগে আপনারই রোগী ছিলেন। অনেকদিন থেকেই ওই পরিবারকে আপনি জানেন। বললেন ক্রাডক।
হ্যাঁ, বৃদ্ধ জোসিয়া ক্রাকেনথর্পেরও চিকিৎসা আমি করেছি। কিন্তু আমার কাছে আপনি কি জানতে এসেছেন বুঝতে পারছি না। বললেন ডাঃ মরিস।
ক্রাডক বৃদ্ধ ডাঃ মরিসকে সমস্ত ঘটনা বিবৃত করলেন।
–ওহ, সেই নির্বোধ কুইম্পারের কথা আপনি শুনছেন। একবার লুথার ক্রাকেনথর্পের গ্যাস্ট্রিকের প্রকোপ হয়েছিল, আমি তার চিকিৎসা করেছিলাম। কুইম্পারের মাথায় ঢুকেছে কেউ লুথারকে বিষ খাইয়ে মারার চেষ্টা করেছিল। উদ্ভট সব কথাবার্তা। আর্সেনিক প্রয়োগের ঘটনা দেখলে আমি চিনতে পারব, এটুকু বিশ্বাস আছে।
ক্রাডক বললেন, নিজেদের পেশায় খ্যাতিমান কিছু সংখ্যক ডাক্তার কিন্তু আর্সেনিকের ঘটনা ধরতে পারেননি।
ক্রাডক তার বক্তব্যের সমর্থনে কতগুলো ঘটনা তুলে ধরলেন।
–আপনার বক্তব্য বুঝতে পারছি। আমি ভুল করে থাকতে পারি, তাই তো। কিন্তু আমি তা মনে করি না। তা বেশ, কুইম্পারের কি ধারণা, বিষপ্রয়োগের ব্যাপারে সে কাকে সন্দেহ করছে?
–একটা বিরাট পরিমাণ টাকার প্রশ্নে পরিবারের অনেকেই জড়িত, আপনি তো জানেন।
-হ্যাঁ, জানি বৈকি। লুথারের মৃত্যুর পর সমস্ত বিষয়-আশয় তার ছেলেরা পাবে। তাদের টাকার প্রয়োজনও রয়েছে। তবু আমি মনে করি না তারা টাকার পাওয়ার জন্য বৃদ্ধ পিতাকে হত্যা করার চেষ্টা করবে।
-না, তা অপরিহার্য নয়।
-দেখুন ইনসপেক্টর, আমি আপনাকে এটুকু বলতে পারি, লুথার বারবার গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত হয়েছেন, এটা ঠিক, কিন্তু আমি কখনো আর্সেনিকের কথা ভাবিনি। তার চিকিৎসক হিসেবে যে ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছি তা হল, লুথার হল স্বভাব-কৃপণ। তিনি তাঁর ব্যয় সংক্ষেপ করে যথেষ্ট অর্থ সঞ্চয় করেছেন বলেই আমার ধারণা–ছেলেদের তিনি সেই সঞ্চয়ে হাত দিতে দেন না।
ক্রাডক বললেন, পরিবারের এই অর্থনৈতিক বিষয়টাই আমাদের বিবেচনার মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্প তার সঞ্চিত অর্থ নিশ্চয় কারোর নামে উইল করে দিয়েছেন–
–দেখুন, এই পরিবারের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর আমার কোনো যোগাযোগ নেই। আমার পক্ষে আর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।
মিসেস কিডার বলল, তুমি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছ মিস। মাত্র একজনের ওপর দিয়ে বিপদটা কেটে গিয়েছে। ছত্রাক বড় ভয়ানক জিনিস।
–কিন্তু ছত্রাকগুলোয় কোনো দোষ ছিল না, বলল লুসি।
সে রুগীদের ঘরে পৌঁছে দেবার জন্য খাবারের ট্রে গুছিয়ে নিচ্ছিল।
–যাই বল, এ বাড়িতে শয়তানের খেলা শুরু হয়েছে আমি বলব। প্রথমে হল একটা খুন, পরে ছত্রাকের বিষে আলফ্রেড মারা গেল। আমার স্বামী তো আমাকে আসতে দিতেই চায় না।
–কিন্তু তুমি তো গা বাঁচিয়ে চলার মেয়ে নও। বলতে বলতে লুসি প্রথম ট্রে-খানা নিয়ে ওপর তলায় চলল।
বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্প ঝাঁঝের সঙ্গে বললেন, এসব কি নিয়ে এসেছ? বীফ স্টিক ছাড়া আমি কিছু খাব না।
–ডাঃ কুইম্পার বলেছেন, এখনো আপনার বীফ স্টিক খাওয়ার সময় হয়নি।
-ওসব কথা ছাড়, আমি এখন যথেষ্ট সুস্থ হয়ে উঠেছি। কাল সকালেই দেখবে ঘুরে বেড়াব। ওরা কেমন আছে?
–মিঃ হারল্ড অনেক ভালো। কাল সকালে তিনি লন্ডন চলে যাচ্ছেন।
–কেড্রিক এখনো রয়েছে? এমা কি করছে?
–এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন।
-দেখ মেয়ে, আমি কত দ্রুত সামলে উঠেছি। তবু ওরা বলে আমি বুড়ো মানুষ। তুমি ওসব কথায় কান দিও না। তোমাকে সেদিন যে কথাটা বলেছিলাম, সেটা মনে রেখো।
লুসি এরপরে এমার ঘরে ট্রে নিয়ে এলো।
–লুসি, আমি অনেকটা ভালো বোধ করছি। তোমার মাসীমার সঙ্গে বোধহয় এই কদিন দেখা করতে পারনি?
–একদম সময় পাইনি।
-তিনি নিশ্চয় তোমার কথা ভাববেন। বুড়ো মানুষ। তুমি আজও তার সঙ্গে ফোনে কথা বলো।
এমার উদ্বেগ লক্ষ্য করে লুসির অপরাধবোধ হল। মিস মারপলের প্রতি খুবই অবহেলা হয়ে গেছে। সে স্থির করল, কেড্রিককে খাবারটা দিয়েই মিস মারপলকে ফোন করবে।
কেড্রিকের ঘরে পৌঁছে লুসি দেখল সে বিছানায় উঠে বসেছে। কয়েক তাড়া কাগজের ওপর ব্যস্তভাবে কিসব লিখছে।
–আপনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন দেখে ভালো লাগছে। এখুনি লেখাপড়া শুরু করে দিয়েছেন দেখছি–
পরিকল্পনা ছকছি, বলল কেড্রিক, বুড়ো মারা গেলে এবাড়ি আর আশপাশের জায়গাটা নিয়ে কিছু একটা তো করতে হবে। প্লট ভাগ করে বিক্রি করে দেব, না, কারখানার জন্য রাখব বুঝতে পারছি না।
বাড়িটাতে অবশ্য নার্সিংহোম বা স্কুলও হতে পারে। আবার ভাবছি অর্ধেক জায়গাটা বিক্রি করে বাকি অর্ধেকে নিজে দুঃসাহসিক কিছু করব।