–না।
কুইম্পার মাথা ঝাঁকালেন।
অবশিষ্ট খাবার কি কি আছে?
–খানিকটা কারি রয়েছে, ছত্রাকের সুপও বেঁচেছে আর চাটনি।
–সবকটাই খানিকটা করে আমি নিয়ে যাব।
এরপর কুইম্পার আবার রোগীদের পরীক্ষা করলেন। লুসিকে কিছু প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন।
–ব্যাপারটা খাদ্যের বিষক্রিয়া না বিষপ্রয়োগের চেষ্টা খাবারের নমুনাগুলো পরীক্ষা করলে নিশ্চিত বলা যাবে। আপাততঃ তুমি বিশেষ করে দুজনের ওপর নজর রাখবে। আর এমাকে দেখবে অবশ্যই। আমি আটটা নাগাদ একজন নার্সকে পাঠিয়ে দেব। আমি ফিরে যাচ্ছি।
.
–আর্সেনিক বলেই আমি সন্দেহ করেছি ইনসপেক্টর বেবন। কারিটা সঙ্গে নিয়ে এসেছি, আপনি আপনার লোকেদের দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিন। বললেন ডাঃ কুইম্পার।
–বলছেন কি? বিষপ্রয়োগের ঘটনা? বেকনের কথায় অস্থিরতার ভাব প্রকাশ পেল।
–আমার তাই মনে হচ্ছে।
–কিন্তু মিস আইলেসব্যারো বলছেন একমাত্র সুস্থ রয়েছেন
–হ্যাঁ।
–তার দিক থেকে ব্যাপারটা সন্দেহজনক…
–কিন্তু তার কি উদ্দেশ্য হতে পারে? তাছাড়া সে আর্সেনিক প্রয়োগ করলে নিজেকে সন্দেহ মুক্ত রাখার জন্য কিছুটা কারি খেত এবং অসুস্থতার লক্ষণগুলোকে বাড়িতে দেখাবার চেষ্টা করত।
-হ্যাঁ, যুক্তিসঙ্গত কথাই বলেছেন। তাহলে পরিবারের অসুস্থদের মধ্যেই এমন কেউ রয়েছে যে নিজেকে সন্দেহের বাইরে রাখবার চেষ্টা করছে।
-এই ব্যাপারটা পরিষ্কার করবার জন্যই আপনাকে বিষয়টা জানাতে এসেছি। তবে আমার মনে হয়, কেউ এমন পরিমাণ খায়নি যাতে মারা যেতে পারে। যাইহোক, আমি একজন নার্সকে আপাততঃ ওখানে পাঠিয়ে দিয়েছি।
-মারা যাবে না বলছেন, তাহলে বিষপ্রয়োগের উদ্দেশ্যটা কি ছিল?
–আমার ধারণা, সামান্য পরিমাণ আর্সেনিক কারিতে মেশানোর উদ্দেশ্য ছিল যাতে বিষক্রিয়ার লক্ষণ প্রকাশ পায় আর ছত্রাকের ওপরে সকলের দৃষ্টি পড়ে। কেননা, সাধারণতঃ ছত্রাক থেকেই বিষক্রিয়া ঘটতে দেখা যায়। আর এই সুযোগে একজনের ওপরেই মাত্রার পরিমাণটা বাড়ানো যাতে শেষ পর্যন্ত সে মারা যায়।
ইনসপেক্টর মাথা নেড়ে ডাক্তারের বক্তব্য সমর্থন করলেন।
এইসময়ে টেবিলের ওপর টেলিফোন বেজে উঠল। রিসিভার তুলে নিয়ে বেকন বললেন, ডাঃ আপনার নার্স ফোন করেছে।
ডাক্তার ফোন ধরলেন। তাঁকে জানানো হল, আলফ্রেড মারা গেছে।
রিসিভার নামিয়ে রেখে দুঃসংবাদটা তিনি বেকনকে জানালেন।
.
রিসিভার কানে তুলেই চমকে উঠলেন ক্রাডক।
–কিন্তু আমি যে আলফ্রেডকেই হত্যাকারী সাব্যস্ত করেছিলাম। তদন্তের সব রিপোর্টই তার বিরুদ্ধে ছিল। এখন বুঝতে পারছি আমাদের কোথাও হিসেবে ভুল হয়েছিল।
একমুহূর্ত নীরব থেকে টেলিফোনের অপর প্রান্তের বক্তব্য শুনলেন।
–আশ্চর্য হচ্ছি, একজন অভিজ্ঞ নার্স বুঝতে ভুল করল?
–তার কিছু করার ছিল না স্যার। পাঁচজন রোগীকে তাকে একা সামলাতে হচ্ছিল। বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্পকে দেখে এসে সে আলফ্রেডকে গ্লুকোজ মেশানো চা দিয়েছিল। সেটা পান করার সঙ্গে সঙ্গেই সে মারা পড়ে।
তার মানে দ্বিতীয়বার আর্সেনিক প্রয়োগ করা হয়েছিল।
–ডাঃ কুইম্পার সেরকমই মনে করছেন। সার্জেন জনস্টনও তাঁর সঙ্গে একমত।
–কিন্তু আলফ্রেড কেন, তার মৃত্যুতে কারোর লাভবান হবার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই।
-আপনি কি বলতে চাইছেন, খুনীর আসল লক্ষ্য আলফ্রেড ছিল না? চা-টা বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্পের জন্যই নির্দিষ্ট ছিল–আর কেউ ভুল করে
-হ্যাঁ, কেন না, বৃদ্ধের মৃত্যুতে সকলেই লাভবান হত। আচ্ছা, চায়ের মধ্য দিয়েই বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল বলে ডাক্তাররা নিশ্চিত হয়েছেন?
–হ্যাঁ, কেন না আনুষঙ্গিক জিনিসগুলো নার্স ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে নিয়েছিল।
-তার মানে, বেকন, রোগীদের মধ্যেই কেউ এমন রয়েছে যে অন্যদের মতো অসুস্থ নয়। সেই সুযোগ বুঝে বিষপ্রয়োগের কাজটা সেরেছে।
–আমরা এখন আরও সতর্ক হয়েছি। আরও দুজন নার্সকে আমি রেখেছি। মিস আইলেসব্যারো তো রয়েইছেন। আপনি কি একবার এখানে আসছেন?
–কিছুক্ষণের মধ্যেই যাচ্ছি।
.
ইনসপেক্টর ক্রাডকের ডাক পেয়ে লুসি হলঘর ছেড়ে এল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার মুখ শুকিয়ে অতটুকু হয়ে গেছে।
–ভাবতে পারছি না ইনসপেক্টর বেকন, বড় ভয় ধরে গেছে।
শুষ্ক কণ্ঠে বলল লুসি।
–ওই কারিটা যত বিপত্তির কারণ।
–আর্সেনিক যদি কারির মধ্যেই পাওয়া গিয়ে থাকে, তাহলে এ কাজ পরিবারেরই কেউ করেছে।
বাইরের কারুর পক্ষে সম্ভব ছিল না বলছেন?
-বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্প কারি খেতে চেয়েছিলেন। আমার অন্যরকম প্রস্তুতি ছিল। তাই অনেক দেরিতে সেটা তৈরি করতে হয়েছিল। এজন্য নতুন কারি পাউডারের টিন খুলতে হয়েছিল। তার মধ্যে কোনো কারচুপি করা সম্ভব ছিল না।
-রান্না করার সময়ে
-হ্যাঁ, আমি যখন ডাইনিং রুমে টেবিল সাজাচ্ছিলাম, তখন যদি কেউ রান্না ঘরে চুপি চুপি ঢুকে থাকে
-বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্প আর এমা ছাড়া বাড়িতে আর কে কে ছিল?
-কেড্রিক ছিলেন। লন্ডন থেকে বিকেলে আসেন হারল্ড ও আলফ্রেড। ব্রায়ান ছিল, তবে সে ডিনারের আগেই কার সঙ্গে দেখা করবে বলে চলে গিয়েছিল।
কুইম্পারের ধারণা, ক্রিসমাসের সময়ে বৃদ্ধ আর্সেনিক ঘটিত কারণেই অসুস্থ হয়েছিলেন, কাল রাতে সবাইকে কি সমান অসুস্থ মনে হয়েছিল?
–বেশি অসুস্থ হয়েছিলেন বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্প। তবে বেশি অস্থিরতা ছিল কেড্রিকের মধ্যে।