মিঃ ক্রাকেনথর্প, বিকেল তিনটে থেকে সাতটা পর্যন্ত আপনার গতিবিধির সমর্থন কিভাবে পাওয়া যেতে পারে।
জাতীয় চিত্রশালা বা সিনেমা হাউসে–আমাকে কেউ চেনে না–কাজেই প্রমাণের সম্ভাবনা তত দেখতে পাচ্ছি না।
-ধন্যবাদ মিঃ ক্রাকেনথর্প।
এমা আবার ফিরে এলো ঘরে। উপযাচক হয়েই সে ক্রাডককে তার কুড়ি তারিখের কাজের ফিরিস্তি শোনাল। পরে জানতে চাইল, নতুন কোনো ঘটনা ঘটেছে কিনা।
ক্রাডক পকেট থেকে সেই খামখানা বার করে দেখালেন।
–মিস ক্রাকেনথর্প, লক্ষ্য করে দেখুন তো চিনতে পারেন কিনা।
-এটা…এটা তো আমরাই হাতের লেখা। এই চিঠিটাই তো আমি মার্টিনকে লিখেছিলাম। …কিন্তু..আপনি…তার খোঁজ কি পাওয়া গেছে?
-হ্যাঁ, এখন আপনি সেরকম বলতে পারেন। এই খামখানা এই বাড়িতে পাওয়া গেছে–তবে ভেতরে চিঠি ছিল না–
–আমাদের বাড়িতে? সে তাহলে সত্যিই এসেছিল এখানে?
–সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে।
–ওই পাথরের কফিনে…মার্টিনই ছিল
–সম্ভবপর বলেই মনে হচ্ছে।
.
অফিসে ফিরে এসেই আমান্ড ডেসিনের পাঠানো একটা তারবার্তা পেলেন ক্রাডক।
আন্না ট্রাভিনস্কির এক বান্ধবীর কাছে তার একটা চিঠি পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে সে এক পুরুষবন্ধুর সঙ্গে বর্তমানে জ্যামাইকায় আমোদ উপভোগ করছে।
.
উইক এন্ডের ছুটি কাটাতে রাদারফোর্ড হলে সকলের সঙ্গে মিলিত হল হ্যান্ড ও আলফ্রেড।
ছেলেদুটি চলে গেছে। ছত্রাকের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে তাদের কথাই ভাবছিল লুসি।
ওদিকে তুমুল বাদানুবাদে লাইব্রেরি ঘরের হাওয়া গরম হয়ে উঠেছে। অভিযোগের ঝড় বইছে এমাকে নিয়ে। সে নির্বোধের মতো চিঠিখানা নিয়ে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে গিয়েছিল বলেই সকলকে এখন ঝামেলা পোয়াতে হচ্ছে। পুলিস নিশ্চয় কিছু সন্দেহ করছে, নইলে ২০ তারিখটাই তাদের তদন্তের লক্ষ্য হয়ে উঠেছে কেন?
কেড্রিক এমার সমর্থনে মন্তব্য করতে গেলে ভাইদের মধ্যেও পারস্পরিক ব্যক্তিগত আক্রমণ শুরু হয়ে গেল।
বেচারী এমা চেষ্টা করেও ঘরের উত্তপ্ত আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিল না।
ডাঃ কুইম্পার এসেছিলেন বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্পকে পরীক্ষা করতে। কাজ শেষ করে তিনি এসে ঢুকলেন লাইব্রেরি ঘরে। অমনি তিনিও পড়ে গেলেন আক্রমণের মুখে।
-এমাকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন আপনি, উত্তেজিত ক্ষুব্ধ কণ্ঠে চিৎকার করে বলে উঠল হারল্ড, এসবের মানে কি?
ডাঃ কুইম্পার আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করলেন। কিন্তু তার কথায় কেউ কর্ণপাত করল না। কৈফিয়তের মুখে পড়ে গেলেন তিনি। প্রচণ্ড বিরক্তি চেপে তিনি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে পড়লেন।
গাড়ির শব্দ শুনে লুসি জানালা দিয়ে তাকিয়ে কেবল ক্ষিপ্ত ক্রুদ্ধ ডাক্তারের মুখ দেখতে পেল।
বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্প আগেই লুসিকে ফরমাস করেছিলেন, তিনি আজ সুস্বাদু কারি খেতে ইচ্ছুক। লুসি তার জন্যই কারি তৈরির সমস্ত উপাদান সংগ্রহ করে নিয়ে বসেছিল। তার ইচ্ছে, আজ সে পরিবারের সকলকে ভালো ডিনার পরিবেশন করবে।
.
মিস জোস সিম্পকিনসের দুটি সবল সুস্থ যমজ শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখাবার ধকল সামলে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত ডাঃ কুইম্পার যখন তাঁর বিছানায় এলেন, তখন রাত তিনটে।
অবসন্ন দেহটাকে বিছানায় এলিয়ে দিতে পারলে এবারে স্বস্তি। তিনি হাই তুললেন।
এমনি সময়ে টেলিফোন বেজে উঠল। নিজের ভাগ্যের উদ্দেশ্যে একটু কটু মন্তব্য করে তিনি রিসিভার তুলে নিলেন।
–ডাঃ কুইম্পার? হ্যাঁ…আমি লুসি আইলেসব্যারো বলছি। বাড়ির সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
ডাঃ কুইম্পার অসুস্থতার লক্ষণগুলো জিজ্ঞেস করে জেনে নিলেন। প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে কিছু উপদেশ দিলেন।
-তুমি এগুলোর ব্যবস্থা নাও…আমি এখুনি রওনা হচ্ছি।
দ্রুত বাইরে বেরুবার পোশাক পরে নিয়ে, আপকালীন ব্যবস্থা হিসেবে কয়েকটি ওষুধ ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলেন। তারপর দ্রুত নিচে নেমে এসে গাড়ি বার করলেন।
.
ঘণ্টাতিনেক অমানুষিক পরিশ্রম করে অবস্থা আয়ত্তে আনলেন ডাঃ কুইম্পার। তাকে সমানে সহযোগিতা যুগিয়ে গেছে লুসি।
–আশা করছি, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সকলে সুস্থ হয়ে উঠবে। এবারে একটু কফি…
লুসি প্রস্তুতই ছিল। অল্পসময়ের মধ্যেই রান্নাঘরের টেবিলে সে কুইম্পারকে কফি পরিবেশন করল।
কফির শেষ তলানিটুকু পর্যন্ত নিঃশেষে কাপ থেকে টেনে নিয়ে আরামসূচক শব্দ করলেন তিনি। জড়তা আর ক্লান্তি অনেকটাই দূর হল।
–কিন্তু লুসি ভয়ানক এই ব্যাপারটা কি করে ঘটতে পারে আমি বুঝতে পারছি না। ডিনার কে রান্না করেছিল?
–আমিই করেছিলাম। বিমর্ষ কণ্ঠে জবাব দিল লুসি–
–কি কি পদ প্রস্তুত করেছিলে?
-মুরগী সংযোগে ভাত, ছত্রাকের সুপ, মুরগীর লিভার দিয়ে সিলাবাবস (দুধ মেশানো আঙুরের রস), চিকেন কারি ও সস।
–ওহ্ ছত্রাক! সুপ কি টিন থেকে ঢেলে নিয়েছিলে?
–আমিই তৈরি করেছিলাম। এর মধ্যে তো কোনো গোলমাল থাকতে পারে না। আমি নিজে খানিকটা সুপ খেয়েছি–আমি অসুস্থ হইনি।
-হ্যাঁ, তা দেখতেই পাচ্ছি।
–আপনি কি মনে করছেন–
-লুসি, তেমন হলে তুমিও রোগের ভান করে সকলের সঙ্গে ছটফট করতে। তোমার সম্পর্কে আমি জানি–অত্যন্ত সৎ তরুণী তুমি। তাছাড়া ক্রাকেনথর্প পরিবারের সঙ্গে কাজে আসার আগে তোমার কোনো যোগাযোগ ছিল না। আচ্ছা চিকেন কারি কি তুমি খেয়ে দেখেছিলে?