–সবই দেখছি ঠিকঠাক বলছে। রেলস্টেশনগুলোতে খবর নিয়েছিলে? জিজ্ঞেস করলেন ক্রাডক।
–হ্যাঁ স্যার। চার সপ্তাহ আগের ঘটনা কার কি মনে থাকবে বলুন।
এর পর কেড্রিক সম্পর্কে রিপোর্টও হারল্ডের মতই না-সূচক।
হতাশ ভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ক্রাডক।
–আলফ্রেডের রিপোর্টও কি তাই?
–আলফ্রেডের শেষ অনুচ্ছেদটা দেখুন স্যার।
সেখানে চমকপ্রদ বিবরণই পাওয়া গেল। রীতিমত চনমনে হয়ে উঠলেন ক্রাডক।
লরি থেকে চুরির একটা ঘটনার তদন্তের জন্য ২০ ডিসেম্বর রাত সাড়ে নটায় সার্জেন্ট লাকি মোতায়েন ছিলেন ওয়ার্ডিংটন-ব্র্যাকহ্যাম্পটন রাস্তার মোড়ে একটা ইটভাটার কাছে। সেই সময় পাশের একটা টেবিলে সে দেখতে পায় চিফ ইভান্স ডিকি রজার্সের দলের একজনকে। তার সঙ্গী আলফ্রেড ক্রাকেনথর্পকে সে চিনতে পারে। ডিকি রজার্সের মামলায় তাকে সে সাক্ষী দিতে দেখেছিল। একারণে সে তার ওপর নজর রাখতে থাকে।
কয়েক মিনিট পরে আলফ্রেড বাসে উঠে ব্র্যাকহ্যাম্পটনের দিকে চলে যায়।
ব্র্যাকহ্যাম্পটন স্টেশনের টিকিট কালেক্টর উইলিয়ম বেকার টিকিট ক্লিপ করার সময় আলফ্রেডকে চিনতে পারেন।
ব্র্যাকহ্যাম্পটন স্টেশনে আলফ্রেডকে যখন দেখা যায়, সেইসময় রাত এগারোটা পঞ্চান্নর প্যাডিংটনগামী ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় ছিল। সেই দিনই এক পাগলাটে বৃদ্ধা ট্রেনের মধ্যে খুন হতে দেখেছিল বলে রটনা হয়েছিল।
–তাহলে আলফ্রেড, রিপোর্টটা সরিয়ে রেখে বলে উঠলেন ক্রাডক, আলফ্রেডই সেই লোক! আশ্চর্য!
-ঘড়ির হিসেব ধরে একেবারে ঘটনাস্থলেই তাকে পাওয়া যাচ্ছে।
-তাই তো দেখছি, বললেন ক্রাডক। বোঝা যাচ্ছে, চারটে ত্রিশের গাড়িতে সে ব্র্যাকহ্যাম্পটন স্টেশনে পৌঁছেছিল। সেই গাড়িতেই খুনের কাজটা চুকিয়ে ফেলে। তারপর বাসে করে সে ইটভাটায় গিয়েছিল। সাড়ে নটা অবধি সেখানে থাকে। তারপর বাসে করে রাদারফোর্ড হলে ফিরে রেলবাঁধের তলা থেকে মৃতদেহটা পাথরের কফিনের ভেতরে ফেলে। এরপরে ব্র্যাকহ্যাম্পটন থেকে এগারটা পঞ্চান্নয় লন্ডনগামী ট্রেন ধরতে তার কোনোই অসুবিধা হবার কথা নয়। এটা কি সম্ভব যে ডিকি রজার্সের দলের কেউ তাকে মৃতদেহ স্থানান্তরের কাজে সাহায্য করেছিল?
রজার্সের দল এন্তার বেআইনী কাজ করলেও খুনখারাপির ত্রিসীমানায় থাকে না। যাইহোক, আমাদের পরিশ্রম সফল হল এটাই আনন্দের ব্যাপার। আলফ্রেড—
.
ক্রাডককে সঙ্গে নিয়ে ছেলেরা পেছনের দরজা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে গেল।
রান্নাঘরে লুসি প্যাস্ট্রি পাকাচ্ছিল। ব্রায়ান ইস্টলি পাশে দাঁড়িয়ে বকবক করছে।
ক্রাডক বললেন, মিঃ কেড্রিকের সঙ্গে একটু কথা বলতে এলাম।
–ভেতরে থাকার তো কথা, আমি দেখছি। ব্রায়ান ভেতরে চলে গেল।
–আলেকজান্ডার, খাবার আলমারীতে জিঞ্জার কেক খানিকটা রয়েছে, তোমরা খেয়ে নাও গে। বলল লুসি। ছেলেরা অমনি দাপাদাপি করে ছুটল।
ক্রাডক খামখানা পকেট থেকে বার করে লুসিকে দেখালেন। সন্দেহ মুক্ত হলেন, ছেলেদের সঙ্গে মজা করার জন্য সে এই নকল সূত্রের অবতারণা করেনি।
ব্রায়ান এসে খবর দিল, কেড্রিক লাইব্রেরি ঘরে তার জন্য অপেক্ষা করছে। ক্রাডকের প্রশ্নে: উত্তরে কেড্রিক বলল, দু-এক দিনের মধ্যেই আমি ইডিজাতে ফিরে যাচ্ছি।
–তাহলে সময় মতোই আপনাকে ধরা গেছে, বললেন ক্রাডক, আমি জানতে এসেছি ডিসেম্বর ২০ তারিখ শুক্রবার আপনি কোথায় ছিলেন, কি করছিলেন?
চকিতে ক্রাডকের মুখে তাকিয়ে নিল কেড্রিক। পরে বলল, আমি তো বলেছি আগেই
-হ্যাঁ, ২১শে ডিসেম্বর আপনি ইডিজা ছেড়েছিলেন আর সেই দিনই ইংলন্ডে পৌঁছেছিলেন।
এইসময় পাশের ছোটঘর থেকে এমা বেরিয়ে এল।
–এমাই তো ঠিক ঠিক বলতে পারবে, বলল কেড্রিক, এমা বল তো আমি তো ক্রিস্টমাসের আগের দিন শনিবার এখানে পৌঁছেছিলাম, তাই না?
এমা বিস্মিত হয় বলল, হ্যাঁ, লাঞ্চের সময় এখানে পৌঁছেছিলে।
-ইনসপেক্টর, আপনার ধন্দ ঘুচল?
–কিন্তু আমাদের কাছে যে খবর আছে তা আপনার বক্তব্য সমর্থন করে না। আপনার পাসপোর্টটা একবার দেখি–
-ওই জিনিসটাই তো সকাল থেকে খুঁজে পাচ্ছি না। অথচ কুকসের অফিসে পাঠানো দরকার।
–পেয়ে যাবেন নিশ্চয়ই, বললেন ক্রাডক, নথিপত্রে দেখতে পাচ্ছি, আপনি এদেশে প্রবেশ করেছেন ১৯ তারিখ সন্ধ্যাবেলা। আমি আশা করব সেই সময় থেকে ২১ ডিসেম্বর লাঞ্চের সময় পর্যন্ত আপনার গতিবিধির ঠিক ঠিক বিবরণ জানাবেন।
–হাজারো ফর্ম পূরণের এই হলো গেরো, ক্রুদ্ধস্বরে বলল কেড্রিক, বুঝলাম, তা ২০ ডিসেম্বর নিয়ে আপনি এত মেতে উঠলেন কেন?
-হত্যাকাণ্ডটা সেই দিনই ঘটেছিল। বললেন ক্রাডক।
–কেড্রিক, বিষয়টা গুরুতর, বলল এমা, ইনসপেক্টরের প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া তোমার উচিত। আপনারা কথা বলুন, আমি যাচ্ছি।
এমা ঘর ছেড়ে গেলে কেড্রিক বলল, ইনসপেক্টর, আপনি ঠিকই বলেছেন, ১৯ তারিখে এক বান্ধবীর সঙ্গে ইডিজা ছেড়ে সেইদিনই আমরা লন্ডনে পৌঁছেছিলাম। আমরা উঠেছিলাম কিংসওয়ে প্যালেসে। সন্ধান নিলেই আপনার লোকেরা সত্যাসত্য জানতে পারবে।
–কুড়ি তারিখের বিবরণটা আমাকে বলুন।
সকালবেলাটা গড়াগড়ি করে হোটেলেই কেটে যায়। বিকেলে জাতীয় চিত্রশালায় গিয়েছি, একটা ওয়েস্টার্ন ছবি দেখেছি, পরে বার ঘুরে হোটেলে ফিরে আসি। রাত দশটার পর বান্ধবীকে নিয়ে জাম্পিং ফ্রগ নামের একটা প্রমোদউদ্যানে গিয়েছিলাম। ইনসপেক্টর, কুড়ি তারিখে এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই