.
১২.
–ডাঃ কুইম্পার, একটা ব্যাপারে একটু খোলাখুলি কথা বলতে চাই আপনার সঙ্গে, তবে অবশ্যই ঘরোয়া ভাবে।
–আপনাদের ওই ঘটনার সঙ্গে আমার তো কোনো সম্পর্ক নেই, ইনসপেক্টর।
-না, সেসব বিষয় নয়। জানতে পারলাম ক্রিসমাসের সময় বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্প একটু বাড়াবাড়ি রকমের অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন?
–হ্যাঁ, সত্যি কথা।
–হজমের গোলমাল বলে আপনি সন্দেহ করেছিলেন
–ঠিকই বলেছেন।
ডাক্তার কুইম্পারের মুখভাব সহসা কঠিন হয়ে উঠল। ক্রাডক লক্ষ্য করলেন।
-আমি আরও জেনেছি, বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্পের খাদ্য ও পানীয় সম্পর্কে আপনি এমন খুঁটিনাটি প্রশ্ন সেদিন জিজ্ঞেস করেছিলেন যাতে মনে হতে পারে, আপনি খাদ্যে বিষ প্রয়োগের সম্ভাবনা আঁচ করেছিলেন। আমার জিজ্ঞাসা হল, আপনি সত্যিই কি সে ধরনের কিছু সন্দেহ করেছিলেন?
–আপনি যখন ঘরোয়া ভাবেই জানতে চাইছেন, ইনসপেক্টর আমি খোলাখুলিই বলতে পছন্দ করব, সেদিন বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্পের মধ্যে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেয়েছিল, তাতে গ্যাস্ট্রো এন্টারাইটিসের চেয়ে আর্সেনিক প্রয়োগের চিহ্নই বেশি প্রকট ছিল।
–ডাক্তার আপনার জানা থাকতে পারে, পরিবারের ছেলেমেয়েরা সকলেই আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে। বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্পের মৃত্যুতে তাদের সকলেরই লাভবান হবার সম্ভাবনা।
–আপনি কি বলতে চাইছেন বুঝতে পারছি। তবে এমাকে আপনার সন্দেহের বাইরে রাখবেন। সকলে যখন একসঙ্গে হয়, তখনই বৃদ্ধের ওপর এধরনের আক্রমণ হয়। আগেও দু-একবার এমন হয়েছে। কিন্তু এমা আর বৃদ্ধ একা যখন থাকে তখন কিছু হয় না।
-খুবই লক্ষণীয়। যদি ধরে নেওয়া যায় যে আর্সেনিক প্রয়োগ হয়েছিল, তাহলে ক্রাকেনথর্প যে বেঁচে গেলেন তার কারণ কি?
–সূক্ষ্মমাত্রার প্রয়োগ। বললেন ডাক্তার, আমি অনেক ভেবেছি, কিন্তু বিষপ্রয়োগকারী প্রতিবারেই মাত্রাটা কেন চেপে রাখছে বুঝতে পারছি না। অবশ্য যদি সত্যি সত্যি একজন বিষপ্রয়োগকারী থেকে থাকে। এমনও হতে পারে সবটাই আমার চিন্তার বাড়াবাড়ি।
-খুবই ভাবনার ব্যাপার হল। বললেন ক্রাডক।
.
-স্যার, আমরা একটা সূত্র খুঁজে পেয়েছি।
ক্রাডক সবে দরজায় বেল বাজাতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় আলেকজান্ডার আর স্টডার্ড ওয়েস্ট সামনে এসে দাঁড়াল।
ক্রাডক একটু কৌতুক বোধ করলেন। বললেন, খুব ভালো কথা। চল বাড়ির ভেতরে গিয়ে দেখব।
–ভেতরে নয় স্যার, অলেকজান্ডার বলল, সবার সামনে বলা ঠিক হবে না, চলুন একটা গোপন জায়গায় গিয়ে আপনাকে বলব।
ক্রাডক কৌতুক বোধ করলেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি ছেলেদুটির সঙ্গে চললেন।
আস্তাবলের উঠোনের প্রান্তে ঘোড়ার সাজসরঞ্জাম রাখার একটা ছোট ঘর। ভারি দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল আলেকজান্ডার। হাত বাড়িয়ে সুইচ টিপে আলো জ্বালল। ক্রাডক ঘরে ঢুকে দেখলেন, বাগান করার মরচে ধরা যন্ত্রপাতি, ঘেঁড়াখোঁড়া, স্প্রীংয়ের গদি, ছেঁড়া টেনিস নেট, এমনি নানা পরিত্যক্ত জিনিসে ঘর বোঝাই। তার মধ্যেই একপাশে খানিকটা ফাঁকা জায়গা–সদ্য সাফ করা হয়েছে বোঝা যায়। পরিত্যক্ত গাছগুলো পেতে বসার ভালো জায়গা করে নেয়া হয়েছে।
-স্যার, আমরা আঁতিপাতি করে, সব জায়গায় খুঁজেছি–বলল আলেকজান্ডার, পরে এমন একটা জিনিস পেয়েছি, ঠিক বলছি একটা মোক্ষম সূত্র
-আজ সন্ধ্যাবেলায়ই এটা পেয়েছি আমরা। বলল স্টডার্ড।
-বয়লার হাউসে হিলম্যান একটা মস্ত গামলা রেখেছে, বাজে কাগজে ভর্তি–সেই কাগজের স্কুপে
আলেকজান্ডার একটা ফটো রাখার ফোল্ডারের ভেতর থেকে সাবধানে তুলে ধরল একটা দোমড়ানো ধূলি মলিন খাম।
ক্রাডক বেশ মজা অনুভব করছিলেন। তার মনে কি কোনো সম্ভাবনার প্রত্যাশার ইশারাও ছিল না?
খামটা হাতে নিয়ে তিনি বুঝতে পারলেন, খামটা ফাঁকা, তবে ডাক মারফত এসেছে। ওপরের ঠিকানাটা দেখে চমকে উঠলেন, মিসেস মার্টিন ক্রাকেনথর্প, ১২৬, এলভার্স ক্রেসেন্ট, এন-১০।
-নামটা চিনতে পারছেন, এডমান্ড কাকার ফরাসি স্ত্রী, তাকে নিয়েই তো সবাই হৈ চৈ করছে। এটা থেকে বোঝা যায় তিনি এখানে এসেছিলেন। চিঠিখানা হয়তো কোথাও পড়ে গেছে
–পাথরের কফিনে এরই মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে, তাই মনে হচ্ছে না স্যার? বলল স্টডার্ড।
-চলে যাওয়ার আগে আমরা একটা দারুণ কাজ করলাম বলুন? আলেকজান্ডার বলল।
–তোমরা চলে যাচ্ছ?
–হ্যাঁ, কালই চলে যাচ্ছি স্টডার্ডের বাড়ি। ছুটি শেষ হলে ওখান থেকেই স্কুলে চলে যাব।
ক্রাডক ক্রমেই অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন। খামের ওপর ডাকঘরের সিল যথাযথ আছে। ছেলেদের খুশি করার জন্য লুসি যে গোপনে কোনো কারচুপি করেনি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবু নিঃসন্দেহ হতে পারছিলেন না তিনি। চিঠিটা যদি সত্যি সত্যি ছেলে-ঠকানো কিছু না হয় তাহলে ঘটনার ওপরে নিঃসন্দেহ একটা নতুন আলোকপাত হবে।
-সত্যি, দারুণ কাজ করেছ তোমরা। অনেক উপকার হবে। চলো এবারে বাড়ি যাওয়া যাক।
দুই বন্ধুর পিঠ চাপড়ে দিলেন ক্রাডক।
.
১৩.
সার্জেন্ট ওয়েদারবলের তদন্তের রিপোর্টের ওপর চোখ বোলাচ্ছিলেন ক্রাডক।
হ্যারল্ড ক্রাকেনথর্পের ২০ ডিসেম্বর তারিখের অ্যালিবি হল সেদিন বিকেলে তাকে সোথবিতে দেখা গিয়েছিল। সেখানে অল্পসময় ছিলেন। রাসেলের সেই চায়ের দোকানের তিনি নিয়মিত খদ্দের নন। তাই ফটোগ্রাফ কেউ চিনতে পারেনি। ডিনারের পোশাক পরার জন্য কার্ডিগান গার্ডেনসের বাড়িতে এসেছিলেন পৌনে সাতটায়। বাড়ির ভৃত্যের সমর্থন পাওয়া গেছে। সে অবশ্য বলতে পারেনি রাতে তার মনিব কখন ফিরে এসেছিল। গাড়ি রাখার গ্যারেজে এমন কেউ ছিল না যার কাছ থেকে গাড়ির মালিক সম্পর্কে কিছু জানা যায়। ক্যাটারার্স ডিনারেও উপস্থিত ছিলেন হারল্ড। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে গিয়েছিলেন।