এবং শুধু তোমার আত্মতৃপ্তির জন্য তুমি লর্ড ইয়ার্ডলিকে গা ছেড়ে সাত তাড়াতাড়ি শহরে আসবার জন্য টেলিগ্রাম করেছো? বড় হুজুর কিন্তু তোমার এহেন আচরণে আদৌ খুশি হবেন না।
হবেন, খুশি হবেন, পোয়ারো মুচকি হাসল, ওদের এতদিনের ঐতিহ্যবাহী দামী হরেটা যদি আমার জন্য শেষপর্যন্ত বেঁচে যায় তখন উনি সত্যিই খুশি হবেন কি আজীবন কৃতও থাকবেন।
তাহলে—তাহলে তুমি বলতে চাও ওটা খায়ো যাবার সম্ভাবনা সত্যিই আছে? আমি জানতে চাইলাম।
সেটা প্রায় নিশ্চিত, পোয়ারো জবাব দিল, ঘটনাপ্রবাহ যে ঐদিকেই যাচ্ছে তা কি তুমি নিজেও বুঝতে পারছে না?
কিন্তু কিভাবে? কেমন করে?
ব্যাস, আর একটি কথাও নয় ক্যাপ্টেন, দোহাই তোমার। অযথা কথা বলে মাথাটা ঝুলিয়ে দিয়োনা। পোয়ারো ইংল্যাণ্ডের জমিদারদের পেল্লাই কুলজীখানা বন্ধ করে আমার হাতে ফিরিয়ে দিল, নাও, বইখানা যেখানে ছিল ঠিক সেখানে রেখে দাও। থাকে থাকে ভালো করে বইগুলো রাখো তার নীচে, আয়তনে ছোট যেগুলো সেগুলো রাখো তার নীচে এইভাবে। সবকিছুতেই একটা শৃঙ্খলা থাকা দরকার। ক্যাপ্টেন হেস্টিংস যে কথাটা এর আগেও বহুবার পইপই করে শুনিয়েছি তোমায়।
ঠিক বলেছে, বলে আমি সেই বিকালে বইখানা দুহাতে তুলে নিয়ে তার আগের জায়গায় ঢুকিয়ে দিলাম।
লর্ড ইয়ার্ডলি বেশ হৈচৈ করা আমুদে স্বভাবের লোক এবং সুরসিক।
কি সব অদ্ভুত ব্যাপার ঘটছে দেখুন মঁসিয়ে পোয়ারো, যার ল্যাজা মুড়ো কিছুই খুজে পাচ্ছি ন লর্ড ইয়ার্ডলি বললেন, আশা করি শুনেছেন যে আমার গিন্নী কতগুলো উড়ো চিঠি পেয়েছেন, আবার ও একই ধরণের চিঠি পেয়েছেন মিস মার্ভেলও। আপনিই বলুন, এসবের মানে কি?
পোয়ারো সোসাইটির মাসিক পত্রিকার একটি সংখ্যা তার হাতে দিয়ে বলল, তার আগে মিঃ লর্ড, আমি জানতে চাই হীরে সম্পর্কে যা কিছু এখানে ছেপে বেরিয়েছে তা সত্যি কিনা?
একনজর তাকিয়ে খবরটুকু পড়ে তার মুখ রাগে লাল হয়ে উঠল, কাগজখানা তখুনি পায়োয়োকে ফিরিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন, এসব পুরো গাঁজাখুরি গপ্পে! হীরের পিছনে কোনও অলীক কাহিনী নেই, কোনকালে ছিলও না। এ হীরেটি এসেছে ভারত থেকে অদ্ভুতঃ আমার নিজের তাই দৃঢ় বিশ্বাস। কোনও চীনে ঠাকুর দেবতার চোখে হীরে বসানো ছিল এমন কথা কখনও শুনিনি।
তা সত্ত্বেও এ হীরেটি দ্য ষ্টার অফ দ্য ইষ্ট নামেই খাত।
বেশ, কিন্তু তাতে হল কি? শর্ডের পাল্টা প্রশ্ন শুনে বুঝলাম তিনি বেশ চটেছেন।
পায়োরার ঠোঁটে এবার ফুটে উঠল অর্থব্যঞ্জক হাসি, স্বাভাবিক সুরে সে বলল মি লর্ড, আপনি আপনার এই সমস্যাটা পুরোপুরি আমার ওপর ছেড়ে দিন। কোনরকম সঙ্কোচ না করে যদি তা করেন, তাহলে আপনার বিপদ কাটিয়ে দিতে পারব এ বিশ্বাস আমার আছে।
তাহলে আপনার মতে এসব নেহাৎ গালগপ্পে নয়, এর ভেতরে কিছুটা সত্যি আছে?
আপনি আমার কথামত কাজ করবেন? নিশ্চয়ই করব, কিন্তু
তাহলে আপনার অনুমতি নিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন করছি, আশাকরি সদুত্তর দেবেন। ইয়ার্ডলি ষ্টেজে স্যুটিং করার ব্যাপারে আপনি কি মিঃ রফের সঙ্গে চুক্তি করেছেন?
ও উনি আপনাকে এ বিষয়ে সব বলেছেন, তাই না? না, এখনও পর্যন্ত পাকাপাকিভাবে তেমন কিছু হয়নি, সামান্য ইতস্ততঃ করলেন লর্ড ইয়ার্ডলি। তার মুখের পোড়া রং ইটের মত লালচে হয়ে উঠেছে দেখে বুঝলাম ভেতরে ভেতরে উত্তেজিত হয়েছেন।
মঁসিয়ে পোয়ারো, জীবনে বহুবার আমাকে ঠকতে হয়েছে–কাল পর্যন্ত দেনায় ড়ুবে আছি আমি কিন্তু আমি সব ঝেড়ে ফেলে আবার উঠে দাঁড়াতে চাই। আমি আমার সন্তানদের ভালবাসি, সেইসঙ্গে যা কিছু ঝামেলা সব চুকিয়ে ফেলতে চাই, তাছাড়া আমার পৈত্রিক জমিদারীতেই জীবন কাটাতে চাই। গ্রেগরী রলফ আমায় প্রচুর টাকা দিতে চাইছেন। আমার ধার দেনা মিটিয়ে আবার নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতে যে টাকা দরকার, ওঁর অফার করা টাকার পরিমাণ তার চাইতে অনেক বেশী। কিন্তু এ টাকা নিতে আমার মন চাইছে না—বাড়ির ভেতরে স্যুটিং হচ্ছে, ভীড়ের গাদাগাদি হৈচৈ, চেঁচামেচি, এসব ভাবতেও আমার ঘেন্না হয় কিন্তু হয়ত আমাকে তাই মেনে নিতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না- এইটুকু বলেই থেমে গেলেন লর্ড ইয়ার্ডলি।
পোয়ারো এতক্ষণ তীক্ষ্ণ্ণ চাউনী মেলে দেখছিল তাঁকে, তিনি থামতেই সে বলে উঠল।
তাহলে আপনার হাতে আরও একটি বিকল্প আছে? সেটা কি দ্য স্টার অফ দ্য ইষ্ট? আপনি কি ঐ হীরেটা বিক্রী করার কথা বলছেন?
ঠিকই ধরেছেন, ঘাড় নেড়ে সায় দিলেন লর্ড ইয়ার্ডলি, গত কয়েক পুরুষ ধরে ঐ হীরেটা আমাদের পরিবারে আছে। মজার ব্যাপার দেখুন, পূর্বপুরুষেরা কেউ ওটাকে দেবত্র সম্পত্তি করে যাননি যার ফলে ওটা বিক্রী করার অধিকার আমার পুরোপুরি আছে। তাহলেও এমন দুর্লভ হীরে কিনবে এমন খাঁটি সমঝদার খদ্দেরই বা কোথায় কজন আছে? হ্যাটন গার্ডেন কোম্পানীর দালাল আছে হফবান, ভাল খদ্দের খুঁজে বের করার কথা ওকে অনেক বলে দেখেছি। কিন্তু তেমন খদ্দের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে খুজে বের করতে হবে নয়ত আমায় শেষকালে জলের দরে এটা বেচে দিতে হবে।
আর একটা প্রশ্ন, মি লর্ড, পোয়ারো প্রশ্ন করল, আপনি যা করতে চাইছেন তাতে লেডি ইয়ার্ডলির মত আছে?
উনি হীরেটা বিক্রী করতে মোটেই চান না, লর্ড জবাব দিলেন, মেয়েমানুষের স্বভাবের কথা আপনাকে আর কি বলব। উনি চান আমাদের বাড়িতে ছবি তোলা হোক, বড় বড় তারকারা আসুন স্যুটিং করুন, এইসব।