হ্যাঁ, পাবিক সুর বজায় রেখে বললাম, অর্থাৎ কিছুক্ষণ হল উনি গেছেন। তা যা বলছিলাম, জোড়া হীরের একটি ওঁর কাছে আছে আর তাকে কেন্দ্র করেই উনি যখন বারবার ভয় দেখানো রহস্যময় চিঠি পাচ্ছেন তখন অন্য হীরেটি যার হেলাতে আর সেই আপনিও নিশ্চয়ই একই ধরণের কিছু উড়ো চিঠি পেয়েছেন। এটা কত সহজ ও সরল ব্যাপার তা দেখলেন ত? তাহলে বলুন, আপনিও ঐরকম কয়েকটি ভয় দেখানো চিঠি পেয়েছেন?
মুহুর্তের জন্য তিনি দ্বিধা করলেন যা দেখে মনে হল আমাকে বিশ্বাস করে কিছু বলা ঠিক হবে কি না তা বুঝতে পারছেন না, কিন্তু পরক্ষণেই হেসে বিনীতভাবে আনালেন, আপনি ঠিকই ধরেছেন।
কি ভাবে পেয়েছেন চিঠিগুলো, প্রশ্ন করলাম, কোনও চীনে যুবক এসে কি হাতে হাতে দিয়ে গেছে?
আজ্ঞে না, লেডি ইয়ার্ডলি বললেন, চিঠিগুলো সব ডাকে পেয়েছি। আচ্ছা বলুন না, মিস মার্ভেলের বেলাতেও কি একই রকম সব ঘটনা ঘটেছে?
আমি সকালবেলায় যা যা ঘটেছে সব তাকে জানালাম, লেডি ইয়ার্ডলি সব কিছু মন দিয়ে শুনে বললেন, দেখতে পাচ্ছি আমাদের দুজনের বেলায় একই রকম ঘটনা ঘটেছে, ওঁকে যে চিঠিগুলো পাঠানো হয়েছে আমাকেও পাঠানো চিঠিগুলো তাদেরই প্রতিলিপি। একটাই তফাৎ যে উনি হাতে হাতে চিঠিগুলো পেয়েছেন আর আমি পেয়েছি ডাকে। আরেকটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করেছি তাহল আমি যে চিঠিগুলো পেয়েছি তাদের সবকটায় মিশে আছে একরকম অদ্ভূত কড়া গন্ধ, যেমন গন্ধ পাওয়া যায় ধূপকাঠি জ্বালালে। এই গন্ধ পাবার পরে আমার মনে হচ্ছে চিঠিগুলো পূবের কোনও দেশ থেকে হয়ত এসেছে। কিন্তু এ সবের মানে কি বলতে পারেন!
সেটাই ত আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, তার প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে বললাম, চিঠিগুলো আপনি সঙ্গে এনেছেন? ডাক টিকিটের ওপর যে শীলমোহর পড়েছে তা দেখে আমরা হয়ত কিছু খুঁজে পেতাম।
খুবই দুর্ভাগ্যের ব্যাপার যে খাম সমেত সবগুলো চিঠি আমি আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলেছি, লেডি ইয়ার্ডলি জানালেন, গোড়ায় আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে কেউ নিছক মজা পাবার জন্য আমায় এমনি ভয় দেখিয়ে চিঠি লিখছে। একদল চীনে বদমাস সত্যিই ঐহীরে দুটো যোগাড় করতে উঠে পড়ে লেগেছে একথা বিশ্বাস করতে কি মন চায়? কোন সু বুদ্ধিসম্পন্ন লোকের কাছে এই ধারণা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হবে বলতে পারেন?
যে সব ঘটনা ঘটেছে তাই নিয়ে আমরা দুজনে আরও কিছুক্ষণ কথা বললাম কিন্তু তাতে রহস্যের সামানতম সমাধানও হল না। সেখানে লেডি ইয়ার্ডলি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, মনে হচ্ছে মঁসিয়ে পোয়ারোর জন্য আর অপেক্ষা করে আমার লাভ হবে না। আমি যেজন্য এসেছিলাম আশাকরি সে সবই আপনি ওঁকে বুঝিয়ে বলতে পারছেন, কেমন? যথেষ্ট ধন্যবাদ আপনাকে, ইয়ে কি যেন আপনার নাম
ক্যাপ্টেন হেস্টিংস, হ্যাঁ, এইবার মনে পড়েছে। ক্যাভেণ্ডিসরা আপনার খুব চেনা, তাই না? মেরী ক্যাভেণ্ডিসই আমায় দিয়ে পোয়ারোর কাছে পাঠিয়েছিলেন।
পোয়ারো ফিরে এলে আমি তার অনুপস্থিতিতে যিনি এসেছিলেন তার নাম এবং তার কাছ থেকে যা যা জেনেছি সবকিছু খুলে বললাম, সব শুনে সে লেডি ইয়ার্ডলির সঙ্গে আমার যা কথাবার্তা হয়েছে সেগুলো খুঁটিয়ে জানার জন্য যেভাবে একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়তে লাগল তা রীতিমত জেরার পর্যায়ে পড়ে।
পোয়রোর জেরার ধরণ শুনে স্পষ্ট বুঝতে পারলাম যে কিছুক্ষণ আগে বাইরে যেতে হয়েছিল বলে এখন তার ক্ষোভ হয়েছে, লেডি ইয়ার্ডলির সঙ্গে দেখা না হওয়ায় মোটেই খুশি হয়নি সে। আমার ক্ষমতাকে খাটো করে দেখাটা এখন তার স্বভাবে পরিণত হয়েছে, আর সেই সঙ্গে এখনও মনে হচ্ছে যে আমার বুদ্ধির কোনও সমালোচনা করার পথ না পেয়ে ও ভেতরে ভেতরে খুবই ক্ষেপে উঠেছে। ব্যাপারটা উপলব্ধি করে আমি ভেতরে ভেতরে যথেষ্ট আত্মপ্রসাদ অনুভব করলাম, কিন্তু সেকথা মুখ ফুটে বললে পাছে খ্যাক করে ওঠে সেই ভয়ে চুপ করে রইলাম। যতই খিটখিটে মেজাজ আর বজ্জাতি বুদ্ধি থাকুক না কেন তবু এই বাঁটকুল ও মহা ধুরন্ধর বন্ধুর সঙ্গে আমি সর্বদা একাত্ম হয়ে থাকি।
তাহলে মতলব মতই সব এগোচ্ছে, অনেক্ষণ অত চাউনী মেলে তাকিয়ে থেকে পোয়ারো মন্তব্য করল, হেস্টিংস, ঐ ওপরের তাকে ইংল্যাণ্ডের জমিদারদের কুলজীখানা রাখা আছে, কষ্ট করে ওটা একটু পেড়ে আনোত।
এই তো, পেয়েছি। জমিদারদের কুলজীর কয়েকটা পাতা পরপর উন্টে এক জায়গায় ও থামল, ইয়ার্ডলি জমিদার বংশ…এখন যিনি জমিদার তিনি ঐ বংশের দশম ভাইকাউন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার যুদ্ধে একটি ব্রিটিশ বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯০৭ সালে ব্যারণ বংশের চতুর্থ কন্যা শ্রীমতি মড স্টপারটেনকে বিয়ে করেন… হুম….! দুই মেয়ের বাবা একজন ১৯০০, আরেকজন ১৯১০ সালে জন্মেছে। এইসব ক্লাবে যাতায়াত আছে..নিবাস..না, এখানে যা জানতে চাইছি তা নেই। তবে হেস্টিংস, আগামীকাল সকালে আমরা ইয়ার্ডলির এই হুজুরের কাছে যাচ্ছি!
কি?
হ্যাঁ, ঐ যা বললাম। যাচ্ছি বলে আমি ওকে টেলিগ্রাম পাঠিয়েছি। আমি ত ভেবেছিলাম এই কেস তুমি করবে না স্থির করেছে, আমি বললাম।
তোমার ভাবনাটা কি পুরোপুরি ঠিক হয়নি, পোয়ারো বলল, মিস মার্ভেল আমার উপদেশ মানতে চাননি তাই আমি ওঁর হয়ে কাজ করব না। তবু আমি এই কেসের তদন্ত চালিয়ে যাব, আর তা শুধু আমার নিজের—এরকুল পোয়ারোর আত্মতৃপ্তির জন্য। নাচতে নেমে আর ত পিছিয়ে যাওয়া যায় না ভাই।