না, মশিয়ে পোয়ারো, মিস মার্ভেল বললেন, এটা শুধু আপনাকে দেখানোর জন্য আজ গলায় পরে এসেছি। অন্য সময় এটা আমার গয়নার বারে থাকে আর সেটা থাকে হোটেলের সেফ ডিপোজিট ভস্টে। আমরা ওখানে দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট হোটেল উঠেছি, ওখানে যে ভল্ট আছে, এটা সেখানেই রাখা থাকে।
তাহলে আপাতত এটা আপনি আমার কাছেই রাখছেন, তাই ত? পোয়ারো জানতে চাইলো।
আপনি আমায় ভুল ভুঝবেন না মঁসিয়ে পোয়ারো, মিস মার্ভেল হেসে হেসে বললেন, আসলে মুসকিল হয়েছে আসছে শুক্রবার আমরা ইয়ার্ডলি চেজ যাচ্ছি, লর্ড আর লেডি ইয়ার্ডলির কাছে কিছুদিন থাকব আমরা তাই এটা এক্ষুণি আপনার কাছে রেখে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
ইয়ার্ডলি চেজ-সর্ড আর লেডি ইয়ার্ডলি! নাম দুটো যেন আগেও শুনেছি বলে আমার মনে হল, কিন্তু কবে, কোথায়, কার মুখে, কি প্রসঙ্গে শুনেছি তা তখনই মনে করতে পারলাম না। মনটা তখনকার মত অন্যদিকে ঘুরিয়ে ভাবতে লাগলাম। একটু ভাবতেই মনে পড়ল আমার কয়েক বছর আগের ঘটনা যা সেইসময় এক বিরাট কেচ্ছার আকার নিয়েছিল। সংক্ষেপে ব্যাপারটা হল, বছর কয়েক আগে লর্ড আর লেডি ইয়ার্ডলি একসঙ্গে আমেরিকায় গিয়েছিলেন, সেখানে লেডি ইয়ার্ডলির নাম ক্যালিফোর্নিয়ার এক নামী চলচ্চিত্রাভিনেতার নামের সঙ্গে জড়িয়ে কেচ্ছা রটেছিল। কি আশ্চর্য বিদ্যুৎ ঝলকের মত সেই অভিনেতার নাম আমার মনে পড়ে গেল— গ্রেগরী বি রলফ, অর্থাৎ মিস মেরী মার্ভেলকে যিনি বিয়ে করেছেন বলে জেনেছি, সেই ভদ্রলোক।
একটা খুবই গোপনীয় বিষয় আমি আপনাকে জানাচ্ছি, মঁসিয়ে পোয়ারো, মিস মার্ভেল মুখে হাত চাপা দিয়ে বললেন, লর্ড ইয়ার্ডলির সঙ্গে আমাদের একটা ব্যবসায়িক চুক্তির কথাবার্তা চলছে, ওর পূর্বপুরুষেরা যেখানে দিন কাটাতেন সেই জায়গায় আমরা একটা ছবির স্যুটিং করব ভাবছি, অতীতের ইয়ার্ডলি নাইট আর জমিদারদের কেন্দ্র করেই ঐ ছবি তোলা হবে।
তার মানে আপনি ইয়ার্ডলি চেজের কথা বলছেন, আমি বিস্ময় চাপতে না পেরে চেঁচিয়ে বললাম, ইংল্যাণ্ডে যত দেখার মত জায়গা আছে ইয়ার্ডলি চেজ তাদের মধ্যে একটি।
ঠিকই ধরেছেন, মিস মার্ভেল ঘাড় নেড়ে সায় দিলেন, পুরো ব্যাপারটার জন্য লর্ড চেঞ্জ প্রচুর দাম হাঁকছেন, আমি এখনও জানিনা শেষ পর্যন্ত কাজটা আদৌ হবে কিনা। তবে গ্রেগ একটু বেপরায়ো গোছর লোক, তাছাড়া ব্যবসায় মধ্যে কিছু আমোদ প্রমোদ টেনে আনা ওর বরাবরের শখ।
কিন্তু আমি আমতা আমতা করে বললাম, আমার অধিকারের পীর মধ্যে থেকেই বলছি, আপনার ঐ দামী হীরেটা সঙ্গে নিয়ে ইয়ার্ডলি চেজ কি আপনার না গেলেই নয়?
উঁহু, মিস মার্ভেলের ছেলেমানুষী ভরা চাউনী নিমেষে ধূর্ততার কাঠিন্যে মিলিয়ে গেল, কিছুটা শক্ত গলাতে তিনি বললেন, এটা গলায় পরেই আমি ওখানে যাব।
তাহলে তাই যান, আমিও সঙ্গে সঙ্গে নিজের সুর পাল্টে বললাম, লর্ড ইয়ার্ডলির কাছেও শুনেছি এমন প্রচুর দামী রত্ন আছে যাদের পেছনে আছে কোনও কোন ঐতিহাসিক ঐতিহ্য, এছাড়া একটা বড় হীরেও তাদের কাছে আছে শুনেছি। ঠিকই শুনেছেন, মিস মার্ভেল সংক্ষেপে বললেন।
তাহলে লেডি ইয়ার্ডলির সঙ্গে আপনার ইতিমধ্যেই পরিচয় হয়েছে।
পোয়ারো প্রশ্ন করল, নাকি আপনার পতিদেবতা ওকে আগেই চিনতেন?
লেডি ইয়ার্ডলি তিনবছর আগে আমেরিকায় গিয়েছিলেন, একমুহূর্ত দ্বিধা করে কি ভেবে উত্তর দিলেন মিস মার্ভেল, তখন ওঁদের চেনাজানা হয়েছিল। ইয়ে-মানে আপনারা কেউ সোসাইটি গসিপ কাগজটা পড়েন?
পোয়ারো আর আমি দুজনেই তার প্রশ্ন শুনে লজ্জায় মুখ নীচু করলাম।
জানতে চাইছি তার কারণ এ হপ্তায় ঐ কাগজে বিখ্যাত প্রচীন রত্ন সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ ছেপেছে আর ওটা সত্যিই পড়ে দেখার মত বলেই তিনি চুপ করে গেলেন।
আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম, এককোণে রাখা সেই কাগজটা নিয়ে আবার ফিরে এলাম। কাগজটা চোখে পড়তেই মেরী আমার হাত থেকে প্রায় ছিনিয়ে নিলেন, নির্দিষ্ট প্রবন্ধটি খুঁজে বের করে জোরে জোরে পড়তে লাগলেন।
…অন্যান্য বিখ্যাত প্রাচীন রত্নের মধ্যে আছে ষ্টার অফ দ্য ইস্ট নামে একটি বড় বেদাগ হীরে যা বহু বছর ধরে ইয়ার্ডলির জমিদার পরিবারের হেপাজতে আছে। বর্তমানে লর্ড ইয়ার্ডলির কোনও এক পূর্বপুরুষ চীন থেকে ঐ হরেটি নিয়ে এসেছিলেন, এর সঙ্গে এক অলীক কাহিনী জড়িত তা হল, কোনও এক মন্দিরের বিগ্রহের ডান চোখে বসানো ছিল ঐ হীরে। হুবহু ঐরকম আরেকটি হীরে বসানো ছিল ঐ বিগ্রহের বাঁ চোখে, এবং কথিত আছে, এই হীরেটিও চুরি হবে। একটি হীরে যাবে পশ্চিমের কোন একটি দেশে, অন্যটি যাবে পূর্বদিকে। ভবিষ্যতে ঐ দুটি হীরে ফিরে আসবে সেই মন্দিরের বিগ্রহের কাছে। এটা নিছক কাকতলীয় যে বর্তমানে ঐরকম একটি হীরের নাম শোনা গেছে বা স্টার অফ দ্য ওয়েস্ট অথবা দ্য ওয়েস্টার্ণ স্টার নামে পরিচিত আপাততঃ বিখ্যাত চিত্রতারকা মিস মেরী মার্ভেলের হেপাজতে ঐ হীরেটি আছে। দুটি রত্নের মধ্যে সাদৃশ্য ওজনগত তুলনা সত্যিই যথেষ্ট কৌতুহল জাগাবে।
ও এই হল ব্যাপার, পোয়ারো নিজের মনে বলে উঠল প্রথম প্রেমের ফল। পরমুহুর্তে মেরীর দিকে তাকাল সে, গম্ভীর গলায় বলল, এসব পড়েও আপনি এক ভয় পান না মাদাম? ধরুন, কোনও চীনে বদমাশ শেষপর্যন্ত সত্যিই ওখানে আপনার সামনে এসে হাজির হল তারপর দুটি হীরে একসঙ্গে ছিনিয়ে নিয়ে সে চলে গেল তার দেশ চীনে, তখন কি করবেন আপনি?