ফি মার্ভেকে অভ্যর্থনা জানাতে পোয়ারো আর আমি দুজনেই উঠে দাঁড়িয়েছি আর তখনই এসব তথ্য আমার মনে পড়ল।
বাচ্চা মেয়ের মত দেখতে ছোটখাটো মিস মেরী মার্ভেলের বড় বড় নীল টি চোখে অপার সরলতা মিশে আছে পোয়ারো নিজেই একটা চেয়ার এগিয়ে দিল তার সামনে।
আপনি সব শুনে আমায় পাগল বা যা খুশি ভাবতে পারেন মঁসিয়ে পোয়ারো। মিস মার্ভেল চেয়ারে বসেই কোন ভূমিকা না করেই শুরু করলেন, তবু বুক ভরা বিস নিয়েই আমি ছুটে এসেছি। এই তো গতকাল রাতে লর্ড ক্রনশ আমায় কবিনে ওঁর ভাইপোর মৃত্যুর রহস্য কি অসাধারণভাবে আপনি সমাধান করেছেন, তখনই মনে হল একবার আপনার শরণ নিই, উপদেশ শুনি। আমার স্বামী গ্রেগরীর মতে গোটা ব্যাপারটা নিছক প্রতারণা, কিন্তু আমার মন সে কথা কেন জানিনা মানতে চাইছে না। বিশ্বাস করুন, এই ভাবে দিনরাত দুশ্চিন্তা করলে শীগগিরই আমার মৃত্যু হবে! এইটুকু বলেই থেমে গেলেন মিস মার্ভেল, হাঁ করে বার বার দম নিতে লাগলেন।
অত ঘাবড়ে গেলে ত চলবে না মাদাম, পোয়ারো আশ্বাস দেবার সুরে বলল, বুঝতেই পারছেন, সব কিছু খুলে না বললে রহস্য আমার কাছে অজানাই থেকে যাবে।
এই চিঠিগুলো আমি পেয়েছি, মিস মার্ভেল তার হাতব্যাগ খুলে তিনটে খাম বের করে তুলে দিলেন পোয়ারোর হাতে।
খুব শক্ত কাগজ, থামগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে পোয়ারো মন্তব্য করল, নাম ঠিকানা খুব সাবধানে ছাপানো হয়েছে। দেখা যাক ভেতরে কি আছে। বলে প্রথম খাম খুলে একটুকরো কাগজ টেনে বের করল সে। পোয়ারোর ঘাড়ের ওপর দিয়ে দেখলাম কাগজে কি যেন লেখা হয়েছে। সহজ সেই বাক্যটি তর্জমা করলে যা পড়ায় তা এরকম :
বড় হরেটি দেবতার বা চোখে বসানো ছিলো, অবিলম্বে তা যথাস্থানে ফিরিয়ে দেবার নির্দেশ দেয়া হল।
দ্বিতীয় চিঠির ভাষা প্রায় একই তাতে অন্য কোনও বৈশিষ্ট্য নেই। তৃতীয় চিঠিতে লেখা :
তোমায় হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছিল কিন্তু তুমি তাতে কান দাওনি। এবার হয়েটি তোমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হবে। আগামী পূর্ণিমায় দেবতার বা আর ডান চোখে সানো হীরে দুটি তার কাছে আবার ফিরে আসবে এই ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে।
প্রথম চিঠিটা পেয়ে ধরেই নিয়েছিলাম কেউ নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে মজা করছে মিস মার্ভেল নিজে থেকেই বললেন, দ্বিতীয়, তৃতীয় চিঠিটা পাবার পরে ভাবনায় পড়লাম। গতকাল তৃতীয় চিঠিটা পেয়ে মনে হল আমি নিজে গোড়ায় ব্যাপারটাকে যত হালকা ভেবেছি আসলে তা নয় বরং তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চিঠিগুলো ক মারফৎ আসেনি দেখছি, পোয়ারো বলল।
না, মিস মার্ভেল বললেন।
এক চীনে যুবক ওগুলো দিয়ে গেছে আর সেই কারণেই আমি ভয় পাচ্ছি।
কেন?
কারণ তিন বছর আগে গ্রেগরী সান ফ্রানসিসকোতে এক চীনে যুবকের কাছ থেকেই ঐ হয়েটি কিনেছিল।
মাদাম, পোয়ারো গম্ভীর গলায় বলে উঠল, চিঠিতে যা উল্লেখ করা হয়েছে আপনি দেখছি সেই–
দ্য ওয়েস্টার্ণ স্টার, পায়োরাকে বাধা দিলেন মিস মার্ভেল, আমার স্পষ্ট মনে আছে হীরেটা কেনার পরে গ্রেগরী বলেছিল ওর সঙ্গে এক পুরোনো কাহিনী জড়িয়ে আছে, কিন্তু ঐ চীনে যুবকটি ঐ হীরে বিক্রী করেছিল সে কিছু বলেনি। গ্রেগরী এও বলেছিল লোকটা যে কোন কারণেই হোক ভয়ানক ঘাবড়ে গিয়েছিল এবং মনে হয়েছিল কোনও মতে জিনিসটা গছিয়ে দিতে পারলে সে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। আর হয়ত এই কারণে হীরেটির যা আসল দাম লোকটি তার দশভাগ শুধু দাম হিসেবে দাবী করেছিল। গ্রেগরী বিয়েতে ঐ হীরেটা আমায় উপহার দিয়েছিল।
আপনার মুখ থেকে সব শুনে আর চিঠিগুলো পড়ে যা বুঝলাম তা এক অবিশ্বাস্য গল্পকথা। পোয়ারো বলল, তা হলেও-কে জানে? ক্যাপ্টেন হেষ্টিংস ছোট পাঁজিটা একবার হাত বাড়িয়ে দাও।
পোয়ারোর নির্দেশ মত হোট পঞ্জিকাটা বের করে হাতে তুলে দিলাম।
এই ত পেয়েছি, কয়েকটা পাতা উল্টে পোয়ারো আপন মনেই বলে উঠল, এই শুক্রবারেই পূর্ণিমা, তার মানে হাতে আর তিন দিন সময় আছে। শুনুন মাদাম, আপনি এখানে এসে আমায় উপদেশ চেয়েছিলেন? এবার সেই উপদেশ আমি দিচ্ছি, মন দিয়ে শুনুন। যে অলীক ইতিহাস আপনার হীরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তা হয়ত সত্যি, হয়ত নয়! আমি তাই বলছি, এই শুক্রবার পর্যন্ত আপনি হীরেটা আমার হেপাজতে রাখুন। ঐ দিনটা কেটে গেলে আমরা আমাদের পছন্দমত যেকোন পথ ধরে এগোতে পারব।
পোয়ারোর প্রস্তাব কানে যেতেই মিস মার্ভেলের সুন্দর ফর্সা মুখের ওপর নেমে এল কালো মেঘের ছায়া, মুখে বললেন, মনে হচ্ছে সেটা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।
তার মানে ওটা এখন এই মুহুর্তে আপনার কাছেই আছে? পোয়ারো মিস মার্ভেলকে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে বলে উঠল।
কোনও উত্তর না দিয়ে মিস মার্ভেল তার গলা থেকে খুলে আনলেন একটি পাতলা চেন, সেটা মুঠোয় ধরে তিনি এগিয়ে এলেন। পোয়ারোর চোখের সামনে এনে হাত খুললেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার দুচোখ ধাধিয়ে গেল, দেখলাম তার ভান হাতের পাতায় রাখা একখণ্ড সাদা আগুন প্ল্যাটিনামে সেট করাশ্য ওয়েস্টার্ণ স্টার! সেই চোখ ধাঁধানো একখণ্ড সাদা আগুনের দিকে তাকিয়ে পোয়ারো আওয়াজ তুলে শ্বাস নিল। বিড়বিড় করে বলল, মাফ করবেন মাদাম, একটু ছুঁয়ে দেখছি। বলে হীরেটা দু আঙ্গুলে তুলে নিল সে, খোলা চোখে এক পলক যাচাই করে আবার সেটা তার হাতের মুঠোয় ফিরিয়ে বলল, খটি বেদাগ হীরে, এমন একটা দামী জিনিস আপনি সব সময় গলায় ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন? কি সর্বনাশ।