সবই ত বুঝলাম, পোয়ারো থামতে জানতে চাইলাম, কিন্তু তুমি রলকে এমন কি বলেছে যাতে ভয় পেয়ে উনি হীরেটা তোমার হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন?
তেমন কিছুই বলিনি, পোয়ারো বলল, শুধু বললাম লেডি ইয়ার্ডলি ওঁর অতীতের পা ফসকানোর ঘটনা তার স্বামীকে খুলে বলেছেন এবং ইয়ার্ডলি পরিবারের ঐতিহ্যবিজড়িত হীরেটা ফেরৎ নিতেই যে তিনি আমায় পাঠিয়েছেন তাও বললাম, আর হ্যাঁ সেই রলফকে এও বললাম যে হয় ভালোয় ভালোয় তিনি হীরে ফেরৎ দিন, নয়ত পুলিশ এসে ওকে উদ্ধার করবে এবং তার নামে মামলা রুজু করা হবে। এরকম আরও কয়েকটা মিছামিছি ভয় দেখাতেই রলফের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল, হীরটা তিনি আমার হাতে তুলে দিলেন।
কিন্তু ভেবে দ্যাখো, একটু চুপ করে থেকে বললাম, তোমার এই সাফল্যের ফলে কি মেরী মার্ভেলের ওপর খুব অন্যায় অবিচার করা হল না? বিনাদোষে বেচারীকে নিজের হীরেটা খোয়াতে হল।
ভুল করছ, পোয়োরা বলল, ওর সঙ্গে ত একখানা জলজ্যান্ত বিজ্ঞাপন সবসময় ঘুরে বেড়াচ্ছে, বাইরে অন্য কোনদিকে ওর মন নেই, চিন্তা-ভাবনাও নেই।
অর্থাৎ এখানেও সেই গ্রেগরী রল, পোয়ারোর ইঙ্গিত ধরতে পেরে বললাম, এখন আমার সন্দেহ হচ্ছে রলফ নিজেই ওকে উড়ো চিঠি লিখতেন।
হতে পারে, পোয়ারো আমার বক্তব্যে গুরুত্ব না দিয়ে বলল, আমি লেডি ইয়ার্ডলির কথা ভাবছি, সে কী ক্যাভেণ্ডিসের উপদেশ মেনে উনি নিজের সঙ্কট সমাধানের উদ্দেশ্যে এসেছিলেন আমার কাছে। ঘটনাচক্রে আমি তখন বাড়ি ছিলাম না। ওকে শুনিয়ে দিল যে মেরী মার্ভেলেও এখানে এসেছেন সঙ্কট মোচনের উদ্দেশ্যে। মেরী মার্ভেলকে লেডী ইয়ার্ডলি নিজের শত্রু বলে ভাবেন, তিনিও এখানে এসে হাঞ্জির হয়েছেন জেনেই তিনি নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টালেন, ততক্ষণে তোমার মুখ থেকে তিনি জেনেছেন জল কতদূরে গড়িয়েছে। তোমায় প্রশ্ন করেই জেনেছি। ভয় দেখানো চিঠি মিস মার্ভেলের মত উনিও পাচ্ছেন কিনা একথা তোমার মুখ থেকেই বেরিয়েছে, উনি গোড়ায় নিজে থেকে এ বিষয়ে তোমাকে কিছুই বলেন নি। তোমার কথা শুনেই উনি একটা সুযোগ নেবার সিদ্ধান্ত নেন।
দুঃখিত তোমার সঙ্গে আমি একমত নই। পোয়ারোর কথার প্রতিবাদ করে বললাম, তুমি নিজে মনস্তত্ব নিয়ে চর্চা করো না এটা খুবই দুঃখের বিষয়, পায়োরা বলল, চিঠিগুলো পুড়িয়ে ছাই করে ফেলেছেন একথা লেডি ইয়ার্ডলি তোমায় বলেন নি? হায় বুদ্বুরাম, মেয়েরা প্রকৃতপক্ষে কখনও কোনও চিঠি নষ্ট করে না; এমনকি যদি সেটা তার পক্ষে অমঙ্গলজনক হয় তবুও না!
আমার ভেতরে রাগ ক্রমেই বাড়ছে টের পাচ্ছি, বহু কষ্টে তা চেপে বললাম, তুমি নিজে ত দিব্যি জিতে গেলে, আর এদিকে আমি, আমার অবস্থা কি হল? এই কেসের গোড়া থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত তুমি আমাকে বোকা বানিয়ে ছাড়লে। এরও একটা সীমা থাকা দরকার।
কিন্তু নিজের বোকামিটুকু ত তুমি গোড়া থেকে উপভোগ করছিলে, বন্ধু, পোয়ারো তার চিরাচরিত ভাল মানুষের মত মুখ করে নিরীহ গলায় বলল, তোমার বোকামি আর মূর্ধামির সেই স্বর্গ নিজের হাতে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে তোমাকে ব্যথা দিই কি করে বললা?
ওসব বোল না। ওতে আমায় ভোলানো যাবে না, আমি বললাম আমাকে বোকা বানাবার বরাবরের খেয়ালটা এবার তুমি মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে!
আহা, অত রাগ করছ কেন? পোয়ারো প্রবোধ দেবার স্বরে বলল রাগ করার মত এমন কিই বা হয়েছে শুনি?
আমারও ধৈর্যের একটা সীমা আছে! চেয়ার ছেড়ে উঠে দরজাটা পায়োয়োর মুখের ওপর বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে এলাম। পোয়ারো অন্যান্যবারের মত এবারেও তার বুদ্ধির সূততা ছিড়ে গেছে আর আমি দিব্যি সেই সূততা গিলে শেষপর্যন্ত এক বিশ্ব ভোদাইয়ে পরিণত হয়েছি। কিন্তু বারবার এই খেলায় বাজি জিতে যাবে পোয়ারো? না? ঢের হয়েছে, এবার ওকে এমন শিক্ষা দেব যা নাকি বহুদিন মনে থাকবে। ভেতরে ভেতরে আমার রাগ এমন বেড়েছে টের পাচ্ছি যে কিছু সময় না কাটলে পোয়ারোকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারব না! বারে গোয়েন্দা পোয়ারো, এমন তো আমায় দিয়ে গেলে যে নিজের বোকামির ফাঁদে আমাকে নিজেকেই জড়িয়ে পড়তে হল।
[অনুবাদ – শুভদেব চক্রবর্তী]