অনেকগুলো কারণে, পায়োরা জবাব দিল, যার মধ্যে একটি হল লেডিইয়ার্ডলি যিনি ভয়ানক ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন।
লেডি ইয়ার্ডলি?
হ্যাঁ, উনি যে কিছুদিন ক্যালিফোর্নিয়ায় ছিলেন সেকথা আশাকবি মনে আছে, ঐ সময় ওঁর পতিদেবতা অর্থাৎ লর্ড ইয়ার্ডলি অন্য কোনও মহিলার সঙ্গে ফুর্তি করে দিন কাটাচ্ছিলেন যার ফলে লেডি ইয়ার্ডলি সবদিক থেকে হয়ে পড়েন নিঃসঙ্গ। সেই সময় তার জীবনে এসে আবির্ভূত হলেন হলিউডের সুন্দর ও সুপুরুষ অভিনেতা গ্রেগরী রল। রলফের চেহারা আর ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে লেডি ইয়ার্ডলি নিজেকে সঁপে দিলেন তার কাছে। ঐ সুযোগে রল লেডি ইয়ার্ডলিকে চূড়ান্তভাবে উপভোগ করলেন। রলফ কিন্তু সেখানেই থামলেন না, লেডি ইয়ার্ডলিকে তিনি ব্ল্যাকমেল করতে লাগলেন। সেদিন ইয়ার্ডলি চেজে গিয়ে লেডি ইয়ার্ডলিকে আমি এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে উনি মুখ ফুটে স্বীকার করেছেন। লেডি ইয়ার্ডলি এই প্রসঙ্গে যা বলেছেন তার অর্থ তিনি খুবই অসর্তক ছিলেন যে কারণে ঐ ঘটনা ঘটেছিল, ওঁর বক্তব্য আমি পুরোপুরি বিশ্বাস করেছি। কিন্তু এটাও ঘটনা যে লেডি ইয়ার্ডলি একসময় নিজের হাতে কিছু প্রেমপত্র লিখেছিলেন রলফকে। এবং তিনি ঐগুলো ফাঁস করে দেবেন বলে ভয় দেখান মহিলাকে। রলফের ব্ল্যাকমেলিংয়ে ঘাবড়ে গেলেন লেডি ইয়ার্ডলি। প্রেমপত্রের কথা জানাজানি হলে তার ভাবমূর্তি বিকৃত হবে এবং লর্ড ইয়ার্ডলি ইচ্ছে করলেই তাকে ডিভোর্স করবেন যার পরিণতি হিসেবে প্রাণের চাইতেও প্রিয় সন্তানদের ছেড়ে তাকে চলে যেতে হবে। এইসব ভেবে তিনি রলফের হাতের পুতুল হয়ে দাঁড়ালেন। লেডি ইয়ার্ডলির নিজের জমানো টাকাকড়ি বলতে কিছুই ছিল না জেনেই রল তাকে নিজের ইচ্ছেমত চালাচ্ছিলেন, এমনকি শেষপর্যন্ত রলফের নির্দেশে আঠার সাহায্যে নিজের দামী হীরেটির একটি হুবহু নকলও তিনি বানাতে বাধ্য হন এবং আসলটি তুলে দেন অলফের হাতে। দুটি হীরেই কেড়ে নেওয়া হবে এবং দ্য ওয়েস্টর্ণ স্টার নামে হীরেটিকে পুনরুদ্ধার করা হবে এই ব্যাপারটাই প্রথম সন্দেহ তোলে আমার মনে। লর্ড ইয়ার্ডলি ঝামেলা মোর্টেই পছন্দ করেন না, তিনি সবকিছু মিটিয়ে ফেলার জন্য তৈরী হচ্ছিলেন এমন সময় হীরে বিক্রী করার সিদ্ধান্ত লেডি ইয়ার্ডলির কাছে আরেক সমস্যা হয়ে দেখা দিল—কারণ আসল হীরেটি রল তার কাছ থেকে আগেই হাতিয়ে নিয়েছে, তার নিজের কাছে যা আছে তা হল আঠা দিয়ে তৈরী ঐ হীবের একটি নকল যা বিক্রী দূরে থাক, যাচাইয়ের সময় ঠিক ধরা পড়ে যাবে। গ্রেগরী রলফ তখন সবে ইংল্যান্ডে এসে পৌঁছেছেন সেইসময় লেডি ইয়ার্ডলি নিজের সমস্যা জানিয়ে তাকে চিঠি লিখলেন এবং এ ব্যাপারে সাহায্য কবার অনুরোধ করলেন। রলফ লেডি ইয়ার্ডলিকে সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিলেন এবং তারপর জোড়া ডাকাতির এক পরিকল্পনা করলেন। এভাবে তিনি তার একদা প্রেমিকার মুখ বন্ধ করতে পারবেন যিনি তার সঙ্গে নিজের অতীতের কেলেঙ্কারীর কথা বিশ্বাসযোগ্যভাবে জানাবেন তার স্বামীকে কিন্তু তাতে আমাদের ব্ল্যাকমেলার রলফের কি লাভ হবে? লাভ হবে বইকি-বীমার ক্ষতিপূরণজনিত বীমার টাকা বাবদ তিনি পাবেন নগদ পঞ্চাশ হাজার পাউণ্ড আবার একই সঙ্গে হীরেটা থেকে যাবে তারই দখলে। ঘটনা যখন এতদুর এগিয়েছে ঠিক তখনই মঞ্চে আরেকজনের আবির্ভাব তার নাম এরকুল পোয়ারো। এই আমি, এ হীরে যাচাই করার নোক আসছে শুনেই লেডী ইয়ার্ডলি তার গলার হীরে ঝােলানো হীরে ছিনতাই হবার এক নাটক করে বসলেন আর চমৎকার অভিনয়ের ফলে নাটকটা সফল হল! কিন্তু এরকুল পোয়ারোর চোখের নজর ঠেকায় এমন সাধ্য কার আছে? বাস্তবে কি ঘটনা? লেডি ইয়ার্ডলি নিজেই দরজার পিছনের সুইচ টিপে ঘরের আলো নেভালেন, ঘরের লাগায়ো দরজার পাল্লাটা খুলে জোর আওয়াজ তুলে বন্ধ করলেন, গলা থেকে নেকলেসটা খুলে দরজার চৌকাঠের সামনে ছুঁড়ে ফেলে বেইস হবার ভান করে মেঝের ওপর কিছুক্ষণ পড়ে রইলেন। এই নাটক করার আগেই যে উনি ওঁর নেকলেস থেকে হীরের আদলটা বের করে নিয়েছিলেন আশাকরি তা নতুন করে বলার দরকার নেই।
কিন্তু ঘটনা ঘটার আগে ওঁর গলায় যে নেকলেস ছিল তা আমি নিজে দেখেছি। বাধা দিয়ে বলে উঠলাম।
আমার কথা এখনও শেষ হয়নি, বন্ধু, পোয়ারো হাত তুলে বলল, আগে ধৈর্য ধরে সবকথা শোন। নেকলেসটা উনি যে হাত দিয়ে ছুঁয়েছিলেন তা আশাকরি এখনও তোমার মনে আছে। হীরের আদলটা খুলে নেবার সঙ্গে সেই ফাকা জায়গাটা উনি আসলে হাত দিয়ে কৌশলে ঢেকে রেখেছিলেন, এই হল ব্যাপার। এরপর আসে রেশমী কাপড়ের টুকরোর ব্যাপার যেটা পরে লাগায়ো দরজার ওপাশে পাওয়া গিয়েছিল। ক্যাপ্টেন হেস্টিংস, এমন একটি নাটক করার পরিকল্পনা যার মাথা থেকে বেরিয়েছে এক টুকরো রেশমী কাপড় ঐখানে ফেলে রাখা কি তার পক্ষে এমন আর কি কঠিন কাজ। তারপরে কি ঘটনা জানতে চাইছে? খবরের কাগজে লেডি ইয়ার্ডলির বাড়িতে তার বিখ্যাত হীরে ছিনতাই হয়েছে ও খবর পড়েই আসল নাটের গুরু গ্রেগরী রলফ নিজেও নাটক করার লোভ সামলাবেনই বা কি করে? লেডি ইয়ার্ডলির মত তিনিও চুরি বলল, ডাকাতি বলল, ছিনতাই বলল, ঐ সাজানো নাটকে বেড়ে অভিনয় করলেন। অভিনেতা হিসেবে মেকাপের কারুকার্য রল ভালই জানেন, দুচোখে এমন চর্বি লাগালেন যাতে দেখলে তাকে চীনে বলে যে কেউ ভেবে বসে। হোটেল থেকে বেরিয়ে চোখের চাউনি পাল্টে আবার তিনি ফিরে এলেন কিছুক্ষণের মধ্যে, তারপর হীরে চুরির দ্বিতীয় সাজানো নাটকে অভিনয় করলেন।