ম্যানেজারের কথা যোগ হতে পোয়ারো আর আমি দুজনেই দুজনের মুখের দিকে তাকালাম-গোটা ব্যাপারটা যেন অতিপ্রাকৃতিক, অবিশ্বাস্য।
এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল অথচ আমি কোনও কাজে এলাম না; পোয়ারো আক্ষেপের সঙ্গে মন্তব্য করল, আচ্ছা, মিঃ রলফ আপনার স্ত্রীর সঙ্গে একবার দেখা করতে পারি?
আমার আপত্তি করার কিছু নেই, রলফ জানালেন, তবে এতবড় একটা ঘটনা ঘটার পরেও মানসিক দিক থেকে খুব বড় আঘাত পেয়েছে, বেচারী এখন শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে, তাই বলছিলাম—
থাক, বুঝেছি, পোয়ারো হাত তুলে তাকে বাধা দিল, তাহলে আপনার সঙ্গে কয়েকটা কথা বলার ছিল, আপনার অসুবিধে নেই ত?
কোনও অসুবিধা নেই। রলফু বললেন, আসুন আমার কামরায়।
পোয়ারো গ্রেগরী রলফের সঙ্গে গেল আবার পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফিরে এল।
চলো, ক্যাপ্টেন হেস্টিংস, পোয়ারো বলল, এবার একবার পোস্ট অফিসে যেতে হবে, একটা টেলিগ্রাম করতে হবে।
কাকে?
লর্ড ইয়ার্ডলিকে, পোয়ারো আমার হাত ধরে টানতে টানতে বলল, চলো, আর দেরী করার মত সময় নেই। তুমি মনে মনে কি ভাবছো তা আমি বুঝতে পারছি, আমার জায়গায় থাকলে তুমি হয়ত মুখ বুজে থাকতে পারতে না ও নিয়ে আমার মনে করার কিছু নেই। ওসব বাদ দাও, চলো এবার গিয়ে লাঞ্চ খেয়ে আসা যাক।
লাঞ্চ খেয়ে পায়োরার সঙ্গে তার বাড়িতে যখন ফিরে এলাম তখন বিকেল প্রায় চারটে বাজে। জানালার পাশে একটি লোক একা বসেছিল, আমাদের ঢুকতে দেখেই উঠে দাঁড়াল লর্ড ইয়ার্ডলি। মুখের দিকে তাকালে বোঝা যায় প্রচণ্ড মানসিক ঝড়ে কি নিদারুণ বিপর্যস্ত হয়েছেন তিনি।
আপনার তার পেয়েই ছুটে এসেছি, লর্ড ইয়ার্ডলি কোনরকম ভূমিকা না করে বললেন, এদিকে আরেক রহস্য দানা বেঁধেছে—আপনার এখানে আসবার আগে আমি হফবার্নের সঙ্গে দেখা করেছি, ওর মুখ থেকেই শুনলাম গত রাতে ওদের দালাল হিসেবে যে লোকটি আমাদের বাড়িতে গিয়েছিল তাকে ও চেনে না, এছাড়া আমায় কোনও টেলিগ্রামও পাঠায় নি? এই হল ব্যাপার এখন বলুন আপনার–
মাফ করবেন! হাত তুলে পোয়ারো তাকে থামালো, ঐ টেলিগ্রাম আমিই আপনাকে পাঠিয়েছিলাম আর হফবার্নের দালাল বলে যে আপনার কাছে গিয়েছিল সেও আমারই লোক, ওকেও আমিই পাঠিয়েছিলাম।
আপনি! এসব আপনার কীর্তি তাহলে? লর্ড ইয়ার্ডলি পোয়ারোর স্বীকারোক্তি শুনে হোচট খেলেন, কিন্তু এসবের অর্থ কি?
অর্থ একটাই—পুরো ব্যাপারটা আমি একটা জায়গায় নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম, পোয়ারো জানালা এছাড়া অন্য কোনও উদ্দেশ্য আমার ছিল না।
পুরো ব্যাপারটা এক জায়গায় নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন, হা ঈশ্বর! পায়োয়োর মন্তব্যের অর্থ যে লর্ড ইয়ার্ডলি বুঝতে পারছেন না তা তার কথাতেই ফুটে বেরোল।
আমার উদ্দেশ্য সফল হয়েছে, মি লর্ড, পোয়ারো খোশমেজাজে বলে উঠল, আর তাই আপনার জিনিস আপনাকে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি, বলে পকেট থেকে কি একটা জিনিস বের করে নাটকীয় ভঙ্গিতে সে মেলে দিল লর্ড ইয়ার্ডলির দিকে। ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম জিনিসটি বড় আকারের একটি হীরে।
এইতো আমার সেই চুরি যাওয়া হীরে, বলতে গিয়ে লর্ড ইয়ার্ডলির গলা কেঁপে গেল, দ্য স্টার অফ দ্য ইস্ট! কিন্তু আমি এখনও ভেবে পাচ্ছি না..
সত্যিই পাচ্ছেন না? পায়োরা মুচকি হাসল, অবশ্য তাতে কিছুই যায় আসে। কিন্তু বিশ্বাস করুন এই হীরেটা চুরি যাওয়া খুব দরকার ছিল। আমি আপনাকে বলেছিলাম আপনার জিনিস আপনার কাছেই গচ্ছিত থাকবে মনে পড়ে? আমি আমার সেই কথা রেখেছি। কি ভাবে এটা উদ্ধার করেছি তা একান্ত গোপনীয়, এবং অনুগ্রহ করে তা জানতে চাইবেন না। যাক লেডী ইয়ার্ডলিকে আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাবেন এবং এও জানাবেন যে তার হারানো মাণিক তাকে ফেরৎ দিতে পেরে আমি নিজেও এত খুশি হয়েছি যা ভাষায় বলে বোঝানো যায় না। বিদায়, মিল।
লর্ড ইয়ার্ডলিকে এক বিশাল ধাধার মধ্যে পেলে আমার বাঁটকুল গোয়েন্দা বন্ধু এরকুল পোয়ারো হাসতে হাসতে তাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিল। তিনি বেরিয়ে যেতে দরজা বন্ধ করে সে আবার এসে ঢুকল ঘরে।
পোয়ারো, আমি খুব শান্ত সুরে বললাম, তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে?
না, বন্ধু, পোয়ারো জবাব দিল, এ মাথা আমার খারাপ হয়নি, আসলে তুমি মানসিক দিক থেকে ধোঁয়াশার মধ্যে পথ হাতড়ে বেড়াচ্ছো।
হীরেটা তুমি কোথা থেকে পেলে?
মিঃ গ্রেগরী রলফের কাছ থেকে।
মিঃ রল! কি বলছ তুমি?
পায়োরের কথা শুনে মনে হল এবার আমার মাথা সত্যিই খারাপ হয়েছে। হ্যাঁ ক্যাপ্টেন হেস্টিংস, একজন চীনে মিস মার্ভেলকে ভয় দেখিয়ে চিঠি লিখছে, তাছাড়া সোসাইটি গসিপ মাগাজিনের লেখা। এসব যার উর্বব মস্তিষ্কের ফসল তিনি হলেন মিঃ গ্রেগরী রলফ দুটো হীরে হুবহু একই রকম দেখতে, একটা আরেকটার জোড়া কিন্তু এসব নিছক গুল ছাড়া কিছু নয়। আসলে হীরে একটাই আর তা আছে ইয়ার্ডলি পরিবারে অন্যান্য দামী বত্নেব সঙ্গে, মনে বেশখা এই একটা হীবে তিন বছর ছিল গ্রেগরী রলফের কাছে। আজ সকালবেলা নিজের দুচোখের কোণে সামান্য চর্বির মেকাপ লাগিয়ে চেহারাটা পাল্টে নিয়েছিলেন তিনি যাতে চোখদুটো দেখাবে চীনেদের মত। নাঃ হেস্টিংস যাই বলল না কেন, রল লোকটা জাত অভিনেতা বলতে হয়, দেখতে হবে ফিল্মে ওকে কেমন দেখায়!
কিন্তু রলফ ওঁর নিজের হীরে কেন চুরি করবেন তা ত বুঝলাম না। কিছু বুঝতে না পেরে জানতে চাইলাম।