একেবারে ঠিক ধরেছ। পোয়ারো সপ্রশংসক গলায় বলে।
নিঃসন্দেহে। যথেষ্ট মিল আছে। যথেষ্টই মিল। বেশ কৌতূহলজনক ব্যাপার। যদিও, আমার মনে হয় না, যথেষ্ট সন্দেহ আছে এটা মাদাম রাইসের লেখা বলে। উত্তরে আমি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনি দরজায় করাঘাতের শব্দ হল। কম্যান্ডার শ্যালিঙ্গার ঘরে ঢুকলেন অসময়ে আপনাদের বিরক্ত করলাম হয়তো। আসলে আমি এখান দিয়েই যাচ্ছিলাম, ভাবলাম একবার ঢু মেরে যাই। তদন্তের আর কোন অগ্রগতি হল কি না খোঁজ নিয়ে যাই।
Probleui, অগ্রগতি কি বলছেন মশাই? এ এক জব্বর মামলা। আমার তো মনে হচ্ছে দিনে দিনে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছি আমি।
সেটা হলে খুবই বিশ্রী একটা ব্যাপার ঠিকই, কিন্তু আমি তা বিশ্বাস করছি না। আপনার অনেক কীর্তি কাহিনি আমি শুনেছি। আমি জানি আপনি একজন অসধারণ ক্ষমতাবান মানুষ।
না-না, সেরকম কিছুই নয়। পোয়ারো বিনীত গলায় বলে।
আপনি কখনও ব্যর্থ হতে পারেন না। আপনি এই অপরাধের রহস্যও ভেদ করে ফেলেছেন। ঠিক কিনা?
পোয়ারো একটু ইতস্তত করে, দ্বিধার গলায় বলে, ঠিক সেরকম কিছু নয়। তবে হ্যাঁ অবশ্যই দুজনকে সন্দেহ করছি, বলা ভাল অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করে ফেলেছি।
আমি তাদের নাম জিজ্ঞাসা করলেও আপনি নিশ্চয়ই সেটা বলবেন না আমাকে?
পোয়ারো বিনীত ভঙ্গিতে হাসে। আমার সেটা বলা উচিত নয়। বুঝতেই পারছেন, আমার হয়তো ভুল হতে পারে। তারপর কয়েকমুহূর্ত স্থির পলকহীন চোখে কম্যান্ডার শ্যালিঙ্গার-এর দিকে তাকিয়ে থাকে পোয়ারো, তারপর হঠাৎ বলে, আপনি সে রাতে ৪.৩০-এর একটু পরে ডাভেনপোর্ট থেকে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু, আপনি এখানে এসে পৌঁছেছিলেন ১০টার ৫ মিনিট পর। ৩০ মাইল আসতে আপনার পৌনে দু ঘণ্টা সময় লাগল কেন? নাহ, আপনার অ্যালিবাইটাও কিন্তু একেবারেই পাকাপোক্ত নয়।
উ-ম-ম, আসলে…… কম্যান্ডার শ্যালিঙ্গার স্পষ্টতই আমতা আমতা করতে থাকেন।
অ্যালিবাই-এর প্রসঙ্গ যদিও বাদও দিই……… পোয়ারো মাখন মাখানো হাসে। আমি সব বিষয়েই খোঁজখবর নিয়েছি। আপনি মাদাম জোয়েল নিক-কে বিয়ে করতে চান। তাই তো?
কম্যান্ডারের মুখ রক্তবর্ণ হল। আমি সবসময়েই ওকে বিয়ে করতে চেয়েছি। মৃদুগলায় বলেন তিনি।
হুম। অথচ তিনি অন্য একজন পুরুষের বাগদত্তা সেক্ষেত্রে………..’
নিক তাহলে সত্যি মাইকেল সেটনের বাগদত্তা ছিল? আমি ব্যাপারটা গুজবই ভাবতাম।
আপনি কিছু সন্দেহ করেননি কখনও?
না, ওকে সন্দেহ করার কথা আমি ভাবতেই পারি না। দিন দুয়েক আগেই নিক আমাকে প্রথমবার সরাসরি জানিয়েছিল যে সে কারও বাগদত্তা। কবে থেকে স্পষ্ট করে জানায়নি সে সময়।
হ্যাঁ, তিনি নিঃসন্দেহেই মাইকেল সেটনই। তবে একটা কথা আমি জোর দিয়েই বলতে পারি মাদাম জোয়েল নিক আপনাকে যথেষ্টই পছন্দ করেন।
শ্যালিঙ্গার কথাগুলো শোনেন। কয়েক মুহূর্ত নীরবে কি যেন ভাবেন। তারপর প্রায় স্বগতোক্তি করার মত বিড়বিড় করেন, যদি তাই হয়………. ঠিক সেই সময়েই দরজায় টোকা পড়ে। এবার স্বয়ং ফ্রেডরিকা রাইস হাজির হলেন।
আমি তোমাকেই খুঁজছি। শ্যালিঙ্গারের দিকে তাকিয়ে বললেন তিনি, আমার হাতঘড়িটা কি দোকান থেকে এনেছ?
ওহ, হ্যাঁ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। শ্যালিঙ্গার তার প্যান্টের পকেটে হাত ঢোকালেন। ঘড়ি বের করে মিসেস রাইসের হাতে তুলে দিলেন।
মাদাম জোয়েল রাইস মৃদু হাসেন, বলেন–আমি আপনাদের কোন জরুরি আলোচনায় বিঘ্ন ঘটালাম নাতো?
না-না মাদাম, আমরা নিছকই গল্পগুজব করছিলাম একটু। আপনি বসুন না। আসলে আমি ওনাকে বলছিলাম কি দ্রুত এসব খবর ছড়িয়ে পড়ে। ফ্রেডরিকা একটা চেয়ারে বসেন তারপর ঠাণ্ডা চোখে পোয়ারোর দিকে তাকান, কোন খবরের কথা হচ্ছে?
এই যে মাদাম জোয়েল নিক যে মাইকেল সেটনের বাগদত্তা ছিলেন। নিমেষে ফ্রেডরিকার দুচোখে তীক্ষ্ণ একটা ঝিলিক খেলে যায়। যেন নিজেকে আপ্রাণ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন, তাহলে নিক সত্যিই মাইকেল সেটনের সঙ্গে বাগদত্ত হয়েছিল? বেশ বিস্ময়ের রেশ ওনার গলায়।
আপনি অবাক হচ্ছেন মাদাম জোয়েল? পোয়ারো বিনীত গলায় প্রশ্ন করে।
হ্যাঁ, তা একটু হয়েছি বইকি। গত শরতে ওরা মেলামেশা করেছিল কিছুটা। কিন্তু তারপর, বড়দিনের সময় থেকে ওদের আর দেখা সাক্ষাৎ হয়েছিল বলে জানতাম না।
ব্যাপারটা ওরা নিখুঁতভাবে গোপন রাখতে পেরেছিলেন।
সেটা স্যার ম্যাথুর জন্যে। উনি ব্যাপারটার প্রবল বিরোধ করতেন জানতে পারা মাত্র।
ফ্রেডরিকার কথাটা শুনে পোয়ারো আগ্রহী গলায় বলে, আপনি তো ওনার প্রিয়তম বন্ধু ছিলেন। সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। আপনি কিছু সন্দেহ করেননি কখনও?
নিক খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে ছিল। তবে এখন আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি কেন ইদানিং ও এত উদ্বিগ্ন থাকত। কয়েক মুহূর্ত পরই ফ্রেডরিকা পোয়ারোর দিকে ফিরে তাকায় প্রবলরকম আগ্রহভরা চোখে, মিঃ পোয়ারো আমাকে একটা কথা……… আচমকাই সে থেমে যায়। তার দীর্ঘ দোহারা চেহারাটা মৃদু কেঁপে ওঠে, মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে। মাঝের টেবিলটার দিকে ওর দুচোখ স্থির হয়ে আটকে থাকে।
মাদাম, আপনি কি, অসুস্থ বোধ করছেন? পোয়ারো ফ্রেডরিকার কাঁধে হাত রাখে। সামান্য নড়ে মাথাটা, বিড়বিড় করে উনি বলেন, আমি ঠিক আছি। দুহাতের পাতায় মুখটা ঢেকে উনি সামনে ঝুঁকে পড়েন। আমরা সবাই অবাক হয়ে মিসেস রাইসের এই অদ্ভুত আচরণটা লক্ষ্য করতে থাকি। কয়েক মিনিট মাত্র। তারপরই উনি আবার সোজা হয়ে বসেন। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে বলে ওঠেন, আরে এত দুশ্চিন্তা করতে হবে না, আমি সুস্থ আছি। এখন কিছু উত্তেজক কথাবার্তা হোক। যেমন, খুন। মিঃ পোয়ারো আপনি আমাকে বলুন, কতটা এগোলেন আপনি?