নার্স হপকিন্স জানাল, মেরী তার উইল করছে। হপকিন্সের কথা শুনে এলিনর এক বিচিত্র হাসি হেসে উঠল এবং নার্স হপকিন্স অবাক হয়ে এলিনরকে দেখতে লাগলেন।
.
১.৫.৫
পাঁচ-ছ পা এগিয়েছে, হাসির ধমক তখনও থামেনি, কে যেন এলিনরের কাঁধে হাত রাখল। চমকে ফিরে তাকাতেই দেখল ডঃ লর্ড কপালে কুঞ্চন রেখা ফুটিয়ে বিরক্তভাবে ওর মুখের দিকে চেয়ে আছেন।
ডঃ লর্ড জিজ্ঞেস করলেন, কি দেখে হাসছিলেন এত? এলিনর জানাল মেরী জেরার্ডকে উইল করতে দেখে তার হাসি পেয়েছে কিন্তু কেন তা তার মাথায় আসছে না।
কড়া গলায় ডঃ লর্ড বললেন, পারছেন না, না? বিশ্বাস করুন, আমার দিক থেকে এটা খুবই খারাপ, মনে হয় খুব নার্ভাস লাগছে।
ডঃ লর্ড এলিনরকে জানাল, এলিনর কোন কথা গোপন করছে।
আমি কোন কিছুই গোপন করছি না, আর এর মধ্যেও আমি নেই।
ডঃ লর্ড শান্ত সুরে বললেন, আপনি আছেন এবং বড্ড বেশীভাবে ভাবছেন। এরপর লর্ড জিজ্ঞেস করলেন আপনি কি এখানে আরো কিছুদিন থাকছেন?
এলিনর জানাল, কালই সে চলে যাচ্ছে এবং ভালো দাম পেলে সে বাড়িটা বিক্রি করে দেবে।
তাচ্ছিল্যের সুরে লর্ড বললেন, তাই নাকি? হ্যাঁণ্ডশেক করার জন্য এলিনর হাত বাড়াতেই ডঃ লর্ড আবার একই প্রশ্ন করলেন। উত্তরে এলিনর একই জবাব দিল। মেরী জেরার্ডকে উইল করতে দেখে সে হাসি চাপতে পারেনি।
ড. লর্ড বললেন আপনি? আপনি উইল করেছেন কি? উত্তরে এলিনর বলল, না, তবে এবার গিয়েই মিঃ সেলডনকে বলব।
পিটার লর্ড বললেন, বলবেন।
.
১.৫.৬
লাইব্রেরী বসে মিঃ সেলডনকে চিঠি লিখল এলিনর :
প্রিয় মিঃ সেলডন,
আমার জন্য একটা উইলের খড়সা তৈরী করে রাখবেন, আমি গিয়ে সই করবো। খুব সাধারণ উইল। আমার যাবতীয় সম্পত্তি আমি রডারিক ওয়লেম্যানকে দিয়ে যেতে চাই।
আপনার একান্ত
এলিনর কার্লিসল
ওপরের ঘর থেকে ডাকটিকিট আনতে গিয়ে দেখল রডি জানালার সামনে দাঁড়িয়ে। রডিকে প্রশ্ন করল এলিনর, এটা যদি বিক্রি হয়ে যায় তোমার কি কষ্ট হবে?
রডি জানালা বিক্রি করে দেওয়াই ভালো। চিঠিটা শেষবারের মতো পড়ে নিয়ে খামে ভরে মুখটা আঁটলো এলিনর। তারপর টিকিট লাগাল।
.
১.৬.১
নার্স হপকিন্সকে লেখা নার্স ও’ব্রায়ানের চিঠি :
১৪ই জুলাই
লাবোরা কোর্ট
প্রিয় হপকিন্স,
কয়েকদিন ধরেই লিখবো লিখবো করছি। বাড়িটা চমৎকার কিন্তু হান্টারবেরীর মতো নয়। আমার রোগীটি খুব শান্ত, ভদ্র। ডবল নিমোনিয়া হয়েছে, এখন ক্রাইসিস কেটে গেছে একটা কথা শুনলে বেশ মজা পাবেন। এ বাড়িতে ড্রয়িংরুমের পিয়ানোর ওপর রূপোর ফ্রেমে বাঁধানো একটা ফটো আছে যেটা অবিকল লিউইস সই করা ফটোটার মতো, সেটা মিসেস ওয়েলম্যান আলমারী থেকে বের করতে বলেছিলেন। বাড়ির পুরনো চাকরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানলাম ফটোটা লেডী র্যাটেরীর দাদা স্যার লিউইস রাইক্রফটের। যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন। চাকরের কাছ থেকে কথায় কথায় জানতে পারলাম বিয়ে করেছিলেন তবে লেডী রাইক্রফটকে পাগলা-গারদে বিয়ের অল্প পরেই যেতে হয়েছিল। এবং তিনি তখনও বেঁচে ছিলেন। আমরা কতো উল্টো-পাল্টা ভাবতাম, তাই না? মিসেস ওয়েলম্যান আর লিউইস বোধহয় পরস্পরকে ভালোবাসতেন, কিন্তু বউ পাগলা-গারদে ছিল বলে বিয়ে করতে পারেন নি। ভদ্রলোক মারা গিয়েছিলেন ১৯১৭ সালে। দারুণ রোমান্টিক ব্যাপার তাই না? এত বছর ধরে স্মৃতির মণিকোঠায় সযত্নে লালন করা, মরবার আগে ঐ ভাবে ফটোর দিকে তাকিয়ে থাক?
সব খবর দিয়ে চিঠি দেবেন।
ইতি
আইলিন ও’ব্রায়ান
নার্স ও’ব্রায়ানকে লেখা নার্স হপকিন্সের চিঠি :
১৪ই জুলাই
রোজ কটেজ
প্রিয় ও’ব্রায়ান,
এখানে সব কিছু আগের মতোই চলেছে। হান্টারবেরীর বাড়িতে বিক্রির নোটিশ ঝুলছে। মিসেস বিশপ খুবই বিচলিত। ওঁর বিশ্বাস ছিল মিস কার্লিসল মিঃ রডারিককে বিয়ে করে এই বাড়িতেই থেকে যাবে। এলিনর লণ্ডনে চলে গেছে। মেরী জেরার্ডকে দুহাজার পাউণ্ড দিয়ে গেছে। মেরীও ম্যাসাজ করা শিখতে গেলে লণ্ডনে। দু-একদিন আগে মিসেস স্ট্যালরীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল (উনি ড. রনসমের বাড়ি দেখাশোনা করতেন, ড. লর্ডের আগে এখানকার ডাক্তার ছিলেন ড. রনসম) লিউইসের নাম করতেই বললেন তিনি ফরবেস পার্কে থাকতেন এবং উনি যুদ্ধে মারা যান। মিসেস ওয়েলম্যানের সঙ্গে তাঁর খুবই ঘনিষ্ঠতা ছিল। ওঁরা বিয়ে করতে পারেনি তার কারণ রাইক্রফটের স্ত্রী ছিলেন পাগলা-গারদে। ডির্ভোস কত সহজেই পাওয়া যায় সুতরাং পাগলামীর কারণে ডিভোর্স না পাবার কোন কারণ ছিল না।
টেড বিগল্যাণ্ড বলে ছোকরা মেরীর লণ্ডনের ঠিকানা নিতে এসেছিল। সি. আর. ডবলু মেরীর দিকে একটু বেশীই ঝুঁকেছেন। শুনেছি মনে খুব দুঃখ নিয়ে এলিনর চলে গেছে। এলিনর এত সম্পত্তি পেল। তারপর তাদের মধ্যে বিয়ের সম্পর্ক ইতি ঘটল। ব্যাপারটা আমার কাছে হেঁয়ালি।
বুড়ো জেরার্ডের শরীর খুব খারাপ। যদিও তার আচরণ একবারেই বদলায়নি। একদিন বলছিল, মেরী ওর মেয়ে নয়। বুড়োর বউ বিয়ের আগে মিসেস ওয়েলম্যানের খাস ঝি ছিল।
গত সপ্তাহে দি গুড আর্থ দেখলাম।
ইতি–
একান্ত আপনার
জেসী হপকিন্স
নার্স ও’ব্রায়ানকে লেখা নার্স হপকিন্সের পোস্টকার্ড :
মনে হচ্ছে দুজনেই দুজনই এক সঙ্গে চিঠি লিখছি। আবহাওয়াটা খুবই খারাপ।