মেরীর ব্যাপারটা রডি পরিষ্কার ভাবে জানাল এলিনরকে। বলল, আমি ওর প্রেমে পড়তে চাইনি।
…তোমাকে নিয়ে আমি বেশ সুখীই ছিলাম। তুমি অসাধারণ এলিনর। তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি আমি। এই ব্যাপারটা একটা মোহের ব্যাপার। সব কিছু গণ্ডগোল হয়ে যাচ্ছে…
এলিনর শান্ত গলায় বলল, প্রেম খুব একটা যুক্তি মেনে চলে না…
রডি জানাল, মেরীকে সে কিছু বলতেই মেরী তাকে সঙ্গে সঙ্গে থামিয়ে দেয়।
হাতের হীরের আংটিটা রডিকে ফিরিয়ে দিতে চাইল এলিনর।
মেরীর মনোভাব জানার চেষ্টা করতে বলল এলিনর। এবং একই সঙ্গে তার মনে হল মেরী যদি না থাকতো।…
.
১.৫.১
নার্স হপকিন্স ও নার্স ও’ব্রায়ান মিসেস ওয়েলম্যানের শেষকৃত্য সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন ব্লু টিট কাফেতে। নার্স হপকিন্স মিস কার্লিসলের উদারতায় মুগ্ধ। মিসেস ওয়েলম্যানের উইল করে যাওয়া উচিত ছিল বলে বললেন নার্স হপকিন্স।
উইল করে গেলে মিসেস ওয়েলম্যান কাকে সম্পত্তি দিতেন এ প্রশ্ন করতেই বেশ দৃঢ় সুরে নার্স হপকিন্স বললেন, উনি অন্ততঃ কিছু টাকা মেরীকে দিতেনই।
তার কথায় সায় দিয়ে নার্স ও’ব্রায়ান বললেন, যেদিন রাতে মিসেস ওয়েলম্যান খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন সেদিন বৃদ্ধা দুবার মেরীর নাম উচ্চারণ করেছিলেন। এবং খোলাখুলি বলেছিলেন মেরীকে কিছু দিতে হবে।
নার্স ও’ব্রায়ান জোর গলায় বললেন, উইল করে গেলে হয়তো উনি শেষ কানাকড়িটাও মেরী জেরার্ডকে দিয়ে যেতেন।
দ্বিধাগ্রস্ত নার্স হপকিন্সের মতে নিজের রক্তের লোককে না দিয়ে অন্য কাউকে সম্পত্তি দেওয়া উচিত নয়।
নিজের রক্তের লোক কথাটা শুনে বেশ রহস্য করে গাম্ভীর্য বজায় রেখে নার্স ও’ব্রায়ান বললেন, আমি গুজব ছড়াতে চাই না। আর মৃত লোককে ব্ল্যাকমেলও করতে চাই না।
নার্স হপকিন্স নার্স ও’ব্রায়ানের সঙ্গে সম্মত হলেন– চায়ে চুমুক দিয়ে ও’ব্রায়ান এবার মরপিনের শিশিটার কথা তুললেন।
নার্স হপকিন্স জানালেন মরপিনের শিশিটার অদৃশ্য হওয়াটা একটা রহস্যের মতো।
.
১.৫.২
মিসেস ওয়েলম্যানের লেখার টেবিলের সামনে বসে এলিনর সবার ইন্টারভিউ নিচ্ছিল। মিসেস বিশপের পর মেরী জেরার্ডের পালা। মেরী এসে তার আসন গ্রহণ করতে পেশাদারী নিস্পৃহতায়–এলিনর বলল, যেহেতু মাসি উইল না করেই মারা গেছেন, তাই তাঁর ইচ্ছাকে ফলবতী করার দায়িত্ব তার। মিঃ সেলডনের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং তারই উপদেশ অনুসারে চাকরদের কাজের ভিত্তিতে কিছু জেরার সিদ্ধান্ত সে নিয়েছে যদিও মেরী সেই শ্রেণীর মধ্যে পড়ে না এবং শেষদিন সন্ধ্যাবেলায় মিসেস ওয়েলম্যান মেরীর ভবিষ্যত সম্পর্কে কিছু ব্যবস্থা করার কথা বলছিলেন তাই মেরীকে সে ২০০০ পাউণ্ডের ব্যবস্থা করে দেবে। ও টাকাটা মেরী যেভাবে খুশি খরচ করতে পারবে।
মেরী এলিনরকে কৃতজ্ঞতা জানাল। এলিনর মিঃ সেলডনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে আপাততঃ কিছু টাকা যদি পাইয়ে দেওয়া সম্ভব হয় মেরীকে তার প্রতিশ্রুতি দিল। মেরী বিদায় নিল।
.
১.৫.৩
এলিনর রডিকে জানাল মিসেস বিশপকে পাঁচশো, রাঁধুনিকে একশো, মিলি আর ওলিবকে পঞ্চাশ করে আর অন্যদের পাঁচ পাউণ্ড করে, মালী স্টিভেনকে ২৫ পাউণ্ড দেওয়া সে ঠিক করেছে। তবে মেরীর বাবার জন্য কিছুই আপাততঃ ঠিক করেনি। তবে এলিনর মনে করে জেরার্ডের জন্য পেনসনের ব্যবস্থা করতে হবে। মেরীকে দুহাজার পাউণ্ড দেবার সিদ্ধান্তের কথাও রডিকে জানাল এবং আইনগতভাবে রডিওর কিছু প্রাপ্য জানাল।
রডির লম্বাটে মুখ রাগে সাদা হয়ে গেল, বলল, এলিনর, তুমি ভাবলে কি করে যে তোমার কাছে আমি হাত পাতবো?
এলিনর রডিকে শান্ত করার চেষ্টা করল। রডি জানতে চাইল মেরী কি করতে চায়? এলিনর জানাল ও ম্যাসাজ করার ট্রেনিং নেবে বলছে।
এলিনর রডিকে বলল, মেরীর সঙ্গে কোন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার আগে তার উচিত মাস কয়েকের জন্য কোথায় বেড়িয়ে আসা। তাহলেই সে বুঝতে পারবে প্রকৃতই মেরীকে যে ভালোবাসে না সেটা তার মোহ।
রডি এলিনরকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার পরামর্শ মেনে নিল।
.
১.৫.৪
কয়েকদিন পরে মেরী নার্স হপকিন্সকে তার সৌভাগ্যের কথা জানাতেই তিনি খুশী হয়ে বললেন এলিনর খুব ভালো মেয়ে আর মেরীর ভাগ্য সত্যিই ভালো। মেরী বলল, তার ধারণা এলিনর তাকে বিশেষ পছন্দ করে না।
নার্স হপকিন্স বললেন, সঙ্গত কারণ আছে তার। মিঃ রডরিক মনে হয় গভীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। এবার বলো তো মেয়ে তোমার ব্যাপারটা কি? তুমিও কি ওঁকে মন-টন দিয়েছে নাকি?
মেরী একটু ইতস্ততঃ করে বলল, মানুষটি ভারী চমৎকার।
নার্স হপকিন্সকে মেরী জিজ্ঞেস করল তার বাবার ব্যাপারে সে কি করবে? তার থেকে সে কিছু তার বাবাকে দেবে কিনা।
নার্স হপকিন্স বললেন, না না, ওসব কিছু করতে যেও না। মিসেস ওয়েলম্যান নিশ্চয়ই তোমার বাবাকে ওই টাকাটা দিতে চাননি।
মিসেস ওয়েলম্যান কেন উইল করে যাননি। এই নিয়ে নার্স হপকিন্স আর মেরীর মধ্যে কথাবার্তা চলছিল। হঠাৎ নার্স হপকিন্স মেরীকে উইল করার প্রস্তাব দিলেন এবং পোস্ট অফিস থেকে ফর্ম এনে নার্সের কটেজে ওরা কথা বলছিল। মেরী তার মাসি মেরী রাইলির নামে উইল করবে বলে স্থির করল।
নার্স হপকিন্সের কথা মতো মেরী ফর্মে লিখল আমি আমার সব কিছু মেরী রাইলিকে দিয়ে যাচ্ছি, যিনি আমার মা, হান্টারবেরীর স্বর্গত এলিজা জেরার্ডের বোন। ফর্ম ভর্তি করে হঠাৎ মুখ তুললেই চমকে উঠল মেরী। জানলার সামনে দাঁড়িয়ে এলিনর কার্লিসল তাকে প্রশ্ন করছে এত মন দিয়ে কি করছে মেরী?