.
১.৪.১
পরদিন সকালে মিসেস বিশপ এলিনরকে জানালেন সেই শোকবার্তা। মিসেস ওয়েলম্যান তার অত্যন্ত প্রিয় মনিব ঘুমের মধ্যেই মারা গেছেন। একেবারে হঠাৎই ঘটে গেল।
একটু কড়া গলায় এলিনর বলল, একেবারে হঠাৎ নয়। উনি তো বেশ কিছুদিন ধরেই ভুগছিলেন। আমি একটা ব্যাপারে কৃতজ্ঞ যে ওকে বেশীদিন কষ্ট ভোগ করতে হয়নি।
এলিনর লরা মাসির মৃত্যুর খবর রডিকে জানাল।
গতকাল যে অবস্থায় দেখেছিলাম ওঁকে, ঐরকম বেশীদিন চললে আমার পক্ষে অসহ্য হয়ে উঠতো?
রডি যে লরা মাসিকে কাল দেখতে গেছিল একথা প্রকাশ হয়ে পড়ায় লজ্জা লজ্জা মুখে রডি জানাল, এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করলেও কাল সন্ধেবেলা একবার সে গিয়েছিল মিসেস ওয়েলম্যানের ঘরে। নার্স গরম জলের বোতল নিয়ে নীচে গেলেন সে ফাঁক পেয়ে ঢুকে পড়েছিল। কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে মিসেস গাম্পকে সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসতে দেখে চট করে বেরিয়ে পড়েছিল।
মিসেস ওয়েলম্যান চলে গিয়ে যে একপ্রকার উনি মুক্তিই পেয়েছেন এলিনর আর রডি এই নিয়ে আলোচনা করছিল।
.
১.৪.২
নার্স হপকিন্স উত্তেজিত মুখে গত সন্ধ্যায় হলঘরে ফেলে যাওয়া অ্যাটার্চি কেসটাকে পাগলের মতো হাতড়াচ্ছিলেন। এমন একটা কাজ তিনি যে কিভাবে করতে পারেন তা ভেবে নিজেই নিজের উপর বিরক্ত হচ্ছিলেন। নার্স ও’ব্রায়ানের প্রশ্নের জবাবে নার্স হপকিন্স জানাল পেটে টিউমারের দরুণ এলিজা রাইকিনকে সকালে বিকেল মরফিন ইনজেকশন দিতে হয়। কাল একটা নতুন বাক্স কিনে ব্যাগে রেখেছিলেন। কিন্তু আজ সকাল সেটা তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না।
নার্স হপকিন্স বললেন, এই হলঘর ছাড়া অন্য কোথাও তিনি কেসটা রেখে যাননি। আর এখানে তুলে নেওয়ার মতো কেউই নেই। তাকে অনেকটা পথ গিয়ে আবার মরফিন কিনতে হবে।
এরপর নার্স ও’ব্রায়ান এবং নার্স হপকিন্সের মধ্যে মিসেস ওয়েলম্যান সম্পর্কে কথা শুরু হল। নার্স ও’ব্রায়ান বলল, ডাঃ ওঁর রোগীদের সম্বন্ধে সবসময়েই একটু বেশী আশাবাদী।
নার্স হপকিন্স জানাল, ডঃ লর্ডের অভিজ্ঞতা অনেক কম এবং বয়েসটাও কম তাই তিনি একটু বেশীই আশাবাদী।
.
১.৪.৩
নার্স ও’ব্রায়ান ডঃ লর্ডকে খবরটা দিলেন। ডাঃ লর্ড চমকে উঠলেন খবরটা শুনে এবং কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করে হঠাৎই একটু গরম জল আনতে বললেন। নার্স ও’ব্রায়ান চমকে উঠলো। কিন্তু বিনা বাক্যব্যয়ে চলে গেল ডাক্তারের হুকুম তামিল করতে।
.
১.৪.৪
রডারিক ওয়েলম্যান মিঃ সেলডনকে বললেন, আপনি কি বলতে চান মিসেস ওয়েলম্যান উইল করে যাননি, না কি আদৌ কোন উইল করেননি উনি।
মিঃ সেলডন জানালেন সত্যিই তিনি কোন উইল করেননি। রডি জানতে চাইল আপনি কখনও ওঁকে উইল করার কথা বলেনি, বোঝননি যে এটা করে রাখা ভালো। মিঃ সেলডন বললেন, লোকেরা মনে করে তারা অনেকদিন বাঁচবে, আর উইল করলেই মৃত্যু এগিয়ে আসে। মিসেস ওয়েলম্যানকে তিনি বহুবার উইল করার কথা বলেছেন কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। হয়তো মনস্থির করে উঠতে পারেননি, সম্পত্তি কাকে কিভাবে দিয়ে যাবেন।
এলিনর বলল, কিন্তু প্রথম স্ট্রোক হয়ে যাবার পর নিশ্চয়ই…
মিঃ সেলডন বললেন, মিসেস ওয়েলম্যান হয়ত মরার কথা চিন্তা করতেন, সেই সঙ্গে এটাও ভাবতেন যে উনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন। আর হয়তো এই আশাতেই তিনি উইল করাটাকে অশুভ বলে মনে করেছিলেন। তবে তিনি উইল করবেন না একথা কখনোই বলেননি।
ডঃ বললেন, মানুষ যখন কোন অপছন্দের বিষয়কে এড়িয়ে যেতে চায় তখন কিভাবে এড়ায় জানেন?
মিসেস ওয়েলম্যান সবসময় উইল করার জন্য পরের কোন একটা দিনকেই প্রশস্ত দিন বলে মনে করতেন।
ধীরে ধীরে এলিনর বলল, তার জন্যই কি তিনি কাল রাতে আপনাকে আসবার জন্য বলেছিলেন?
নিঃসন্দেহে–তাই।
উকিলবাবু জানালেন, যেহেতু উইল না করেই মিসেস ওয়েলম্যান মারা গেছেন তাই তার সব সম্পত্তির অধিকারী হবে মিস এলিনর কার্লিসন। সরকার একটা অংশ কেটে নেবে। যেহেতু সম্পত্তির ব্যাপারে কোন সেটেলমেন্ট বা ট্রাস্ট করা হয়নি অতএব সবকিছু সোজা মিস এলিনরের হাতে এসে পড়ছে। ডেড ডিউটি প্রভৃতি ট্যাক্সগুলো দিয়েও যা টাকা থাকবে সেটার পরিমাণ খুব কম নয়। মিঃ সেলডন জানালেন রডারিক ওয়েলম্যান সম্পত্তির কিছু পাবেন না কারণ তিনি মিসেস ওয়েলম্যানের স্বামীর ভাইপো। তার সঙ্গে কোন রক্তের সম্পর্ক রডারিকের নেই।
রডি মিঃ সেলডনের কথায় সম্মতি জানাল।
.
১.৪.৫
মিঃ সেলডন চলে যাবার পর মুখোমুখি হল এলিনর আর রডারিক। প্রায় মিনতির সুরে এলিনর বলল, তাতে কিছু আসবে যাবে না, তাই তো রডি? লণ্ডনে তো আমরা দুজনে মিলে ঠিকই করেছিলাম আমাদের যে কেউই সম্পত্তি পাক না কেন, চিন্তার কোন কারণ নেই, কারণ আমরা তো বিয়ে করতে যাচ্ছি।
রডিকে নিরুত্তাপ দেখে এলিনর বলল, কিন্তু আমরা কি বিয়ে করতে যাচ্ছি রডি?
আমার তো মনে হয় সেই রকমই কিছু একটা ঠিক ছিল। রডির কথার মধ্যে বেশ উপেক্ষা ও রুক্ষতার ভাব। তবে এখন যদি তুমি অন্যকিছু ভেবে থাকো?
এলিনর প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, তোমার কাছ থেকে কি একটুও আন্তরিকতা আশা করতে পারি না?
রডি বলল, স্ত্রীর পয়সায় খেতে আমার খুব ভালো লাগবে বলে তো মনে হয় না।
এলিনর সাদা মুখে রুক্ষভাবে বলল-আসল ব্যাপারটা তাই নয়, ব্যাপারটা মেরী? তাই না?