মেরী জানাল, মিসেস ওয়েলম্যানের সঙ্গে তার কথা হয়েছে, তিনি ওকে ছাড়তে রাজী নন এখনই। মেরীর ভবিষ্যত সম্পর্কে কোন চিন্তা করতে বারণ করেছেন।
নার্স হপকিন্স বললেন, যা করবেন তা যেন লেখাপড়া করে রাখেন, কখন কি হয় বলা যায় না। মেরীকে মিসেস বিশপ যে পছন্দ করেন না এবং তার কারণ যে মিসেস ওয়েলম্যানের মেরীর প্রতি সহানুভূতি তা নার্স হপকিন্স মেরীকে জানান।
.
১.৩.১
ডাক্তার লর্ডের টেলিগ্রাম পেয়ে এলিনর আর রডি হান্টারবেরী এসে পৌঁছাল।
হান্টারবেরীতে প্রথম যাবার পর রডির সঙ্গে এলিনরের তেমন দেখাসাক্ষাৎ হয়নি। রডি সম্বন্ধে এলিনর যেন আগের তুলনায় নিরাসক্ত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু মাসির দ্বিতীয় স্ট্রোকের টেলিগ্রাম পেয়ে ওদের মধ্যে সম্পর্কটা আবার স্বাভাবিক হয়ে এল।
ট্রেনে যেতে যেতে তারা লরা মাসির সম্পর্কে নানা আলোচনা করতে লাগল। স্বভাবতই ডাঃ লর্ডের কথা উঠল। এবং ডাঃ লর্ড সম্পর্কে রডির অবিশ্বাস বেশ ভালো বোঝা গেল।
.
১.৩.২
কপালে চিন্তার রেখা ফুটিয়ে ডাক্তার লর্ড রোগিণীর জড়ানো কথাগুলোর মানে বোঝবার চেষ্টা করছিলেন এবং মিসেস ওয়েলম্যান যা যা চাইছেন, যেভাবে চাইছেন সব কাজ সেভাবেই হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিতে মিসেস ওয়েলম্যান পরম স্বস্তিতে চোখ বুঝলেন। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দুজন নার্সকে যা যা করার নির্দেশ দিলেন। তারপর নীচে নেমে এলিনর আর রডির জন্য অপেক্ষা করতেই দেখা হল মেরী জেরার্ডের সঙ্গে। উদ্বিগ্ন মুখে মিসেস ওয়েলম্যানের অবস্থার খবর নিলেন। কথার মাঝেই একটা গাড়ির শব্দ হল। ড্রইংরুমে পা দিতেই এলিনর চেঁচিয়ে উঠল, ওঁর অবস্থা কি খুবই খারাপ? রডির মুখ শুকনো, আশংকায় ভরা।
দুঃখিত হয়ে গম্ভীর সুরে ডঃ লর্ড বললেন, ওঁর পক্ষাঘাত হয়েছে। কথা প্রায় বোঝাই যাচ্ছে না। তবে উনি একটি ব্যাপারে দারুণ উদ্বিগ্ন। কাজটা কি ঠিক জানি না, তবে উকিলকে ডাকার কথা বলছেন।
এলিনর ডনাল উকিল মিঃ সেলডনকে সে চেনে। এরপর এলিনর আর ডাক্তার মিসেস ওয়েলম্যানের ঘরে গেলেন। ঝুঁকে পড়ে এলিনর দেখল লরা মাসির মুখটা সামানা বেঁকে গেছে। হঠাৎ চোখ খুলে এলিনরকে চিনতে পারলেন মিসেস ওয়েলম্যান।
অসুস্থ মহিলার গলা থেকে কতকগুলো জড়ানো শব্দ বেরিয়ে এল এবং শেষ পর্যন্ত এলিনর বুঝতে পারল যে মাসি তাঁর উইলে মেরীর জন্য কোন ব্যবস্থা করতে চান। তিনি যেমন চান তেমনই কাজ হবে প্রতিশ্রুতি দিল এলিনর।
রোগিণী স্বস্তি পেলেন। চোখের দৃষ্টিতে যে করুণ আবেদন ফুটে উঠেছিল তা ধীরে ধীরে প্রশান্তির প্রলেপে সুন্দর হয়ে উঠল।
ডঃ লর্ড আর এলিনর বাইরে এসে দেখলেন সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে মেরী জেরার্ড নার্স হপকিন্সের সঙ্গে কথা বলছে। মেরী ডাক্তারের পরামর্শ শুনে মিসেস ওয়েলম্যানের ঘরে ঢুকলো। এলিনর মাথা ঘুরিয়ে ঘরের মধ্যে মেরীকে দেখছিল। দেখল চোখে মুগ্ধতা নিয়ে ডাক্তার পূর্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে। লজ্জা পেয়ে এলিনর ডাক্তারের মুগ্ধতা কাটাল।
নার্স হপকিন্স নাক টানলেন। এলিনর বলল, দুঃখ হয় মাসির জন্য, ওর অবস্থা দেখে যা কষ্ট পেয়েছিলাম বলার নয়।
তা ঠিক, তবে আপনি ভাবভঙ্গিতে তা প্রকাশ করেননি। দারুণ সংযমের পরিচয় দিয়েছেন।
ঠোঁটে দৃঢ়তা ফুটিয়ে এলিনর বলল, মনের ভাব প্রকাশ না করার শিক্ষা আমার আছে।
ডাক্তার ধীরে ধীরে বললেন, তবে একদিন না একদিন মুখোস খুলে পড়বেই।
মুখোস?
তাঁ, মানুষের মুখ মোটামুটিভাবে একটা মুখোস ছাড়া আর কি হতে পারে?
তার আড়ালে?
তার আড়ালে আছে আদিম নারী-পুরুষ। কোন কথা না বলে দ্রুত পায়ে এলিনর নীচে নেমে এল।
রডি উদ্বেগের সঙ্গে খবর জানতে চাইল।
এলিনরের পরেই নীচে নেমে এসেছিল ডঃ লর্ড।
এলিনরকে জানাল তার আর করবার কিছু নেই। সকালের দিকে তিনি একবার আসবেন।
ডঃ লর্ডের করমর্দনের স্পর্শে এক অদ্ভুত আশ্বাসের ধ্বনি সঞ্চারিত হল এলিনরের দেহে-মনে। এলিনরের মনে হল ডাক্তার ওর জন্য দুঃখ বোধ করছে।
ডাক্তার চলে যেতে রডি জিজ্ঞেস করল, উনি কি বিশেষ কিছু করতে চাইছেন?
এলিনর জানাল, লরা মাসি কোন কাজের ব্যাপার হয়তো চিন্তায় আছেন। আপাততঃ ওঁকে বুঝিয়ে শান্ত করে এসেছি যে মিঃ সেলডন কাল সকালেই আসছেন।
রডি প্রশ্ন করল, উনি কি কোন নতুন উইল করতে চান?
উনি কি বললেন…প্রশ্নটা করতে করতে মেরীর দিকে রডির দৃষ্টি নিবদ্ধ হল এবং কথা মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গেল।
কড়া গলায় এলিনর বলল, কি যেন প্রশ্ন করছিলে তুমি? রডি দরজার দিকেই হাঁ করে তাকিয়ে রইল।
রডির হাবভাব দেখে এলিনর এমনভাবে হাতের মুঠো বন্ধ করল যে তালুতে নখ বসে গেল তার। মনে মনে বলল, এ আমার সহ্যের অতীত, এতোটা আমি সহ্য করতে পারি না…এটা কি বাজে ভাবনা নয়, সত্যিই…রডি…রডি…আমি কিছুতেই তোমাকে হারাতে পারবো না।…
এদিকে আবার এলিনরের মনে অন্য এক চিন্তার জাল ছড়িয়ে পড়ল। ঐ লোকটা…ঐ ডাক্তার…দোতলায় কি দেখছিল ও আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে…।
হায় ভগবান কি অসহ্য এই জীবন কি এক বিশ্রী ভাবনা আমাকে পেয়ে বসেছে। কিছু একটা বলো বোকা হাঁদা। নিজেকে সামলাও…?
এলিনর স্বাভাবিক ভাবে বলল, তার খিদে পায়নি। মনে মনে চিন্তা করল ওর সঙ্গে একা বসে সে আর খেতে পারবে না, জোর করে আগের মতো স্বাভাবিক ব্যবহার করতে বা কথা বলতে পারবে না। তারপরেই চঞ্চল হয়ে উঠে বলল, কাজগুলো আমায় নিজের মতো করে করতে দাও।