ডাক্তার মিসেস ওয়েলম্যানকে সুপ্রভাত জানালেন। প্রত্যুত্তরে মিসেস লরা ওয়েলম্যান ডাক্তারকে সুপ্রভাত জানিয়ে তার বোনঝির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন এবং হাত বাড়িয়ে ডাক্তার এলিনরের সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয় সারলেন।
এলিনর ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করলে ডাক্তার রোগীকে পরীক্ষা করার জন্য বিছানার দিকে এলেন। কতকগুলো রুটিনমাফিক পরীক্ষা আর প্রশ্নোত্তরের পর ডঃ পিটার লর্ড জানালেন মিসেস ওয়েলম্যান এখন অনেক সুস্থ।
মিসেস ওয়েলম্যান জানতে চাইলেন যে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তিনি হেঁটে চলে বেড়াতে পারবেন কিনা।
ডঃ লর্ড বললেন, বেঁচে থাকাটা মানুষের এক স্বাভাবিক অনুভূতি। আমরা যখন মনে করি ঐ লোকটার মরে যাওয়াই ভালো তখন কিন্তু সে লোকটা আদৌ মরতে চায় না। আবার বেঁচে থাকার সব উপকরণ যার হাতের মুঠোয়, দেখা যায় হঠাৎ সেই লোকটা দুম করে মরে গেল।
ডাঃ বললেন, মিসেস ওয়েলম্যান ঐ শ্রেণীর মানুষের মধ্যে পড়েন যারা মরতে ভয় পায়।
কথার মোড় ফিরিয়ে মিসেস ওয়েলম্যান জিজ্ঞেস করলেন, জায়গাটা তার কেমন লাগছে। সে ডাক্তারীতে আরও পড়াশুনা করে স্পেশালাইসড হতে চায় কিনা?
ডঃ লর্ড জানালেন, তার কোন উচ্চাভিলাষ নেই। সাধারণ মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক অসুখবিসুখ সারাতে তার ভালো লাগে। চলতি চিকিৎসাতে কোন পরিবর্তন আনা যায় কিনা তার জন্য হাতে-কলমে গবেষণাও তার ভালো লাগে। সে এখানে থেকেই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে চায়।
ডঃ চলে যাবার উদ্যোগ নিলে মিসেস ওয়েলম্যান তাকে জিজ্ঞেস করলেন তার বোনঝিকে ডাক্তারের কেমন লাগল। একথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে।
মিসেস ওয়েলম্যান বললেন, এবার তোমার বিয়ে করা উচিত ডাক্তার।
.
১.২.৪
বাগানে ঘুরতে ঘুরতে রডির মনে হল এলিনরের সঙ্গে ওর সম্পর্কটা বোঝা তার পক্ষে বেশ কষ্টকর। এলিনর তার মনের কথা ঠিকমতো প্রকাশ করে না। আবার এলিনরের চরিত্রের এই দিকটাই রডির ভালো লাগে। রডি চিন্তা করে দেখল এলিনরের আচরণ বা ব্যবহারের ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায় না, বা মনে আঘাত লাগে না। এলিনর দেখতে সুন্দর, বুদ্ধিমতী। ওকে পেয়ে সে সত্যিই সুখী, সৌভাগ্যবান। এলিনরের মতো মেয়ে কি করে ওকে বিয়ে করতে রাজী হল রডি তাই ভাবে।
মানুষ নিজের অবস্থা সঠিকভাবে মানতে পারলে সুখীই হয়। রডি ভাবল এলিনর যদি বিয়েটা পিছিয়ে না দেয় তবে ওদের শীগগির বিয়েটা হবে। প্রথম দিকে টানাটানি চললেও পরে প্রচুর টাকা হাতে আসবে তার। রডির ইচ্ছা হল ওয়েলম্যান কত টাকা রেখে গেছেন। আর কিভাবেই বা কাকে কি দিয়ে গেছেন।
বাগানের লাগোয়া জঙ্গলে অজস্র-ডাফোডিল ফুটে আছে। মুহূর্তের জন্য তাকে এক চঞ্চলতা গ্রাস করল। ওর মনে হতে লাগল কোথায় কিসের যেন অভাব তার রয়ে গেছে, কি যেন চেয়েছিল, আজও পায়নি সে। আর ঐটাই সে যেন চায়, ভীষণ ভাবে চায়।
সোনালী সবুজ আলো আর মিষ্টি বাতাসের নরম স্পর্শে তার নাড়ীর স্পন্দন বেড়ে গেল। তার সমস্ত-সত্ত্বা চঞ্চল হয়ে উঠল। হঠাৎই তার সামনে একটি অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে এসে দাঁড়াল। আর স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে পড়ল রডি, চোখের সামনে সমগ্র জগৎ যেন ঘূর্ণির মতো পাক খেতে লাগল, কিছুক্ষণ বাদে মেয়েটি নিজের পরিচয় দিয়ে জানাল সে মেরী জেরার্ড।
রডি এতই সম্মোহিত হয়ে পড়েছিল যে এলিনরের পায়ের শব্দ তার কানেই গেল না। এলিনর জানাল, ও’ব্রায়ান মেরীকে খুঁজছে মিসেস ওয়েলম্যানকে তুলতে সাহায্য করার জন্য। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে মেরী ছুটে গেল হরিণীর মতো।
রডি বলল, ঠিক যেন অ্যাটল্যান্টা…
এলিনর জবাব না দিয়ে বলল, লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে, তাদের ফেরা দরকার। তারা ফেরার জন্য পা বাড়াল।
.
১.২.৫
গ্রেটা গার্বোর ছবি দেখবার নিমন্ত্রণ জানাল টেড, কিন্তু মেরী জানাল কিছুতেই সে এখন সিনেমায় যেতে পারবে না।
টেড রাগ দেখিয়ে বলল, মেরী জার্মানী থেকে পড়ে আসার পর অনেক বদলে গেছে।
মেরী জানাল, সে কিছুমাত্র বদলায়নি।
টেড ও মেরীর কথোপকথনের মাঝখানে হঠাৎ এক মহিলা আবির্ভূত হয়ে তীব্র দৃষ্টিতে দুজনকে দেখলেন। টেড দুপা পিছিয়ে মিসেস বিশপকে গুড আফটারনুন জানাল। মিসেস বিশপও প্রত্যুত্তরে টেড ও মেরীকে গুড আফটারনুন জানালেন।
মিসেস বিশপ চলে যেতে মেরী ও টেড আবার কথা শুরু করল। মেরীর মতে ভদ্রমহিলা তাকে অপছন্দ করেন। তাকে দেখলেই বেশ কড়া কথা শুনিয়েছেন।
টেড তাকে আশ্বস্ত করতে বলল যে, বহুদিন মিসেস বিশপ ঘর-সংসারের দেখাশোনা করছেন। সবাইকে হুকুমে রেখেছেন। বুড়ি ওয়েলম্যান এখন মেরীকে সুনজরে দেখছেন বলে মিসেস বিশপ তাক ঈর্ষা করেন।
ঈর্ষা জিনিসটা বড্ড-বাজে, মেরী বলল।
একথার জের টেনে টেড কিছু বলতে শুরু করলে মেরী তাড়াতাড়ি নার্স হপকিন্সের বাড়িতে চা-এর নিমন্ত্রণের কথা জানিয়ে বিদায় নিল। টেড রাগত দৃষ্টিতে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
.
১.২.৬
নার্স হপকিন্স গ্রামের একপ্রান্তে একটি কটেজে থাকেন। মেরী সেখানে পৌঁছে দেখল নার্স হপকিন্স সবেমাত্র কটেজে ফিরেছেন। এটা-ওটা কথার পর হপকিন্স টেড বিগল্যাণ্ডের কথা তুললেন এবং মেরীকে বললেন, ছেলেটা খুবই ভালো, গ্যারেজের কাজকর্মও ভালোই শিখেছে। আর অন্যান্য চাষীদের তুলনায় ওর বাবার চাষবাসও ভালোই হয়। তবে তোমাকে টেড বিগল্যাণ্ডের বৌ হিসাবে মানাবে না। তোমার জায়গায় আমি হলে সুযোগ পেলে ম্যাসাজের কাজ শিখে নিতাম।