মেরী কৃতজ্ঞতার সুরে বলল, তার সব কিছুর মূলেই মিসেস ওয়েলম্যান।
খাটের মধ্যে বেশ চঞ্চল হয়ে উঠলেন মহিলা এবং বললেন, ঠিক তা নয়…ঠিক তা নয়.. ঠিক বুঝতে পারি না…মানুষ যথাসাধ্য করতে চায়, কিন্তু কার পক্ষে কোনটা কত ভালো সেটা বিচার করা বড় মুশকিল হয়ে ওঠে। নিজের ওপর আমার সব সময়ই যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস ছিল…
মেরী বলে উঠল, না না। আমার তো মনে হয় আপনি কখনো ভুল করেন না।
লরা ওয়েলম্যান কথাটা যেন ঠিক মেনে নিতে পারলেন না-না, আমার খুবই দুশ্চিন্তা হয়। জানো মেরী আমি দারুণ অহংকারী। আর অহংকার সবচেয়ে বড় পাপ। এলিনরেরও একই দশা।
প্রসঙ্গ পাল্টাতে মেরী মিস এলিনর আর মিঃ রডরিকের প্রসঙ্গ তুলল।
স্নেহমাখা সুরে মিসেস ওয়েলম্যান বললেন, ওরা দুজনেই আমাকে ভালোবাসে। ওদের বললেই চলে আসবে। কিন্তু ঘনঘন আসতে বলতে পারি না। অসুস্থ মানুষ মৃত্যুর পরিবেশে ওদের টেনে এনে আরও পাপের ভাগী হতে চাই না আমি।
আমার তো মনে হয় না ওঁরা ওরকম চিন্তা করতে পারেন।
খানিকটা আত্মগত ভাবে বললেন তার বিশ্বাস ওরা বিয়ে করবে। কিন্তু নিজে উপযাজক হয়ে কথাটা বলা তিনি ঠিক মনে করেননি। ওরা যখন খুব ছোট তখন তার মনে হত এলিনর রডিকে ভালোবাসে। কিন্তু রডি যে ওকে ভালোবাসে সেটা ঠিক বুঝতে পারতেন না। হেনরীও রডির মতোই ছিল অত্যন্ত চাপা, খুঁতখুঁতে…মিসেস ওয়েলম্যানকে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বিড়বিড় করে বললেন কততদিন…কতোদিন আগেকার কথা…বিয়ের পাঁচবছর পরেই ও চলে গেলোলা, ডবল নিমোনিয়ায়…বিয়েতে আমরা খুব সুখী হয়েছিলাম কিন্তু সে সুখ স্থায়ী হল না। তখন আমি অদ্ভুত শান্ত মেয়ে ছিলাম…বুদ্ধিসুদ্ধি তখনও পাকেনি, মাথায় তখন নানা চিন্তা, স্বপ্ন কল্পনার জগতে ঘুরে বেড়াই…বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না…
তার মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে হেনরী চলে যাবার পর মিসেস ওয়েলম্যান খুব নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। এখন তার বয়স ষাট। দীর্ঘদিন…তাই না? কণ্ঠস্বর ঈষৎ খাদে নামিয়ে বললেন…আর আজ এই অবস্থায় এসে পৌঁছেছি..
ওয়েলম্যান ও’ব্রায়ানের প্রশংসা করে বললেন, মেরীকে সবসময় পান বলে তিনি খুব সুখে আছেন। সে কাছে থাকলে তার বেশ ভালো লাগে।
হঠাৎ মিসেস ওয়েলম্যান মেরীকে বললেন, মেরীর ভবিষ্যতের ব্যাপারটা তার ওপরই থাক। তিনি এমন ব্যবস্থা করবেন যে, মেরীকে কারুর গলগ্রহ হয়ে থাকতে হবে না। যে কোন পেশা সে ইচ্ছা করলেই নিতে পারবে। তারপর বললেন তার কাছে মেরীর থাকাটার দাম অনেক বেশী।
মেরীকে তিনি বললেন যে তুমি আমার মেয়ের মতো মেরী। এই হান্টারবেরীতে তোমাকে ছোট্ট অবস্থা থেকে বড় হতে দেখেছি, তোমার জন্য আমার গর্ব হয়। আমার একমাত্র আশা, তোমার যাতে মঙ্গল হয় তা যেন করতে পারি।
মেরী জানাল সে মিসেস ওয়েলম্যানের কাছে কৃতজ্ঞ। সে কখন উপার্জন করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তার কারণ কেউ যেন মনে না ভাবে যে সে মিসেস ওয়েলম্যানকে শুষছে।
লরা ওয়েলম্যানের মেরীকে আশ্বস্ত করে বললেন যে, এ প্রশ্ন কখনই ওঠেনি আর ভবিষ্যতে উঠবেও না। তিনি আর বেশীদিন নেই।
মেরী তাকে আশ্বস্ত করে বলল, ডাঃ লর্ড বলেছেন তিনি আরো বেশ কয়েক বছর বাঁচবেন। মিসেস ওয়েলম্যান বললেন, তিনি ডাক্তারকে বলেছিলেন কোন ওষুধ দিয়ে তাকে শেষ করে দিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আর ঐ অভদ্র ছোকরা ডাক্তার তাকে বলে, মিসেস ওয়েলম্যানের জন্য উনি ফাঁসিতে ঝোলবার ঝুঁকি নিতে পারেন যদি তিনি তার সব সম্পত্তি তার নামে লিখে দেন।
মিসেস ওয়েলম্যান বললেন, ডাক্তার দুর্বিনীত হলেও ওকে তাঁর ভালো লাগে। ওষুধের চেয়ে ডাক্তারের উপস্থিতিই তার বেশী উপকার করে।
মেরী সম্মতি জানাল।
কথা বলতে বলতে হঠাৎ গাড়ির শব্দ শোনা গেল জানালার বাইরে। মেরী জানালা দিয়ে দেখল মিস এলিনর আর মিঃ রডরিক এসেছেন।
.
১.২.২
মিসেস ওয়েলম্যান, বোনঝি এলিনর আর রডির ব্যাপারটায় খুব খুশী। তারা একসাথে এসেছে দেখে তিনি খুব খুশী হলেন।
বৃদ্ধা ওয়েলম্যান এলিনরকে বললেন, তিনি মনে করেন এলিনর রডিকে একটু বেশী মাত্রায় পছন্দ করে কিন্তু এলিনরের জবাব শুনে খুশী হয়ে বললেন, রডি চায় না ভালোবাসার নামে কেউ ওকে পুরোপুরি কজা করে নিক। আর এলিনরের তুলনায় রডি তাকে বেশী পছন্দ করলেই তারা সুখী হবে বলে মনে করেন মিসেস ওয়েলম্যান।
এলিনর মনে করে ছেলে বন্ধুকে সব সময়ে ধাঁধার মধ্যে রাখা ভালো। এলিনর লরা মাসিকে প্রশ্ন করে ভালোবাসা জিনিসটা কি সত্যিই সুখের?
লরা মাসি এলিনরকে জানান অন্য কোন মানুষকে সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে চাইলে আনন্দের চেয়ে দুঃখই বেশী হয়। তবে এই অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি বাদ দিয়ে মানুষ বাঁচতে পারে না। যে কোন দিন প্রেমে পড়েনি, সে কোনদিন সত্যিকারের জীবন উপভোগ করেনি।
এলিনর মাথা নেড়ে সায় দিয়ে লরা মাসিকে কিছু প্রশ্ন করতে যাচ্ছিল এমন সময় নার্স ও’ব্রায়ান এসে জানাল ডাক্তারবাবু এসেছেন।
.
১.২.৩
ডাক্তার লর্ডের বয়স বছর বত্রিশ। চুলের রং বালি-বালি, মুখে ব্রনোর চিহ্ন, চেহারা খুব ভালো না হলে দেখতে মন্দ নয়। চওড়া চোয়াল। চোখের দৃষ্টি-তীক্ষ্ণ, চোখের তারা হাল্কা নীল রঙের, সব কিছু যেন ভেদ করে দেখতে চায়।