ফলে জুন মাসের ঐ সন্ধ্যেবেলায় নার্স ও’ব্রায়ান যখন ওকে বললে যে মিসেস ওয়েলম্যান উকিল ডাকছেন উইল করার জন্য, হপকিন্স আর দেরী করল না। মিসেস ওয়েলম্যানকে উইল না করেই মরতে হবে। যাতে তার অবৈধ মেয়ে সব সম্পত্তি পায়। ইতিমধ্যে মেরী জেরার্ডের সঙ্গে খুব ভাব জমিয়ে নিয়েছে হপকিন্স, এবং প্রায় হাতের মুঠোয় পুরে ফেলেছে স্নেহ ভালোবাসা দেখিয়ে। তারপরের কাজ হল বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মেরী জেরার্ডকে দিয়ে উইল করানো, যাতে সে তার সম্পত্তি মাসিকে দিয়ে যায়, এমনকি উইলের কথাগুলো পর্যন্ত নিজের ইচ্ছামত করে লিখিয়ে নিল। সম্পর্কের কোন উল্লেখ করা হল না, শুধু লেখা হল–স্বৰ্গত এলিজা রাইলির বোন মেরী রাইলি। একবার ওতে সই হবার পর মেরীর ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেল। তারপর শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকা। আমার অনুমান, খুন করার পুরো প্ল্যানটা ও এঁটে ফেলেছিল। নিজেকে বাঁচাবার জন্য অ্যাপোমরফিন ব্যবহার করবে তাও ঠিক করে রেখেছিল। হয়তো ঠিক করেছিল এলিনর আর মেরীকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে। কিন্তু যখন এলিনর আউট হাউসে এসে স্যাণ্ডউইচ খাবার নেমন্তন্ন করল তখন ঐ সুবর্ণসুযোগটাকে হাতের কাছে পেয়ে ও কাজে নেমে পড়ল। পরিস্থিতি এমনই ছিল যে এলিনর শাস্তি পেতই।
ধীরে ধীরে ড. লর্ড বললেন, আপনি না থাকলে এলিনরের শাস্তি হতই।
সঙ্গে সঙ্গে পোয়ারো বললেন, না বন্ধু, ওঁর উচিত আপনার কাছে কৃতজ্ঞ হওয়া।
আমি? আমি তো কিছুই করিনি। আমি চেষ্টা করেছিলাম…।
বাকীটা ড. লর্ড বললেন, না, পোয়ারো হেসে বললেন, হ্যাঁ, বন্ধু, আপনি প্রচণ্ড চেষ্টা করেছিলেন, তাই না? আপনি অধৈৰ্য্য হয়ে উঠেছিলেন, কিছুই করতে পারছি না দেখে। আপনার মনে ভয়ও হচ্ছিল উনি দোষী প্রমাণিত না হয়ে যান। ফলে চরম অধৈৰ্য্য হয়ে গিয়ে আপনিও আমাকে মিথ্যে কথা বললেন। ভবিষ্যতে আপনার উচিত হবে জ্বর-জ্বালার চিকিৎসার মধ্যেই নিজেকে আবদ্ধ রাখা। খুনের কিনারা করতে চেষ্টা করবেন না। ড. লর্ড লজ্জায় লাল হয়ে উঠলেন–আপনি বুঝতে পেরে গিয়েছিলেন…মানে প্রথম থেকেই? আপনি আমার হাত ধরে ঝোঁপের আড়ালে নিয়ে গেছেন। আপনার নিজেরই জার্মান দেশলাই বাক্স খুঁজে পেতে সাহায্য করলেন আমায়। একেবারে ছেলেমানুষী ব্যাপার।
ড. লর্ড এড়াতে চাইলেন প্রসঙ্গটা। পোয়ারো বলেই চললেন, মালীর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দিলেন আপনি এবং ওকে দিয়ে বললেন, যে ঐ দিন সকালে রাস্তার ওপরে ও আপনার গাড়িটা দেখেছে। অথচ আমাকে বোঝাতে চাইলেন ওটা আপনার গাড়ি নয়। অন্য কেউ এসেছিল, উদ্দেশ্য আমি যাতে বিশ্বাস করি ওখানে বাইরের লোক এসেছিল।
আমি একটা গাধা, বললেন ড. লর্ড।
ওদিন সকালে হান্টারবেরীতে কেন গিয়েছিলেন আপনি?
আরে ওটা নেহাতই বোকামী আমার…আমি শুনেছিলাম উনি এসেছেন, একবার দেখার জন্য ওখানে গিয়েছিলাম। গিয়ে যে কথা বলব তার জন্য কিন্তু যাইনি। আমি..আমি শুধু একবার চোখে দেখবার জন্য গিয়েছিলাম। ঝোঁপের ধার থেকে ওঁকে স্পষ্ট দেখলাম মাখন আর রুটি কাটছেন… ।
সেই শার্লোট আর কবি ওয়ারদারের মতো…তারপর বন্ধু…
আর বলার কিছু নেই। ঝোঁপের ধারে দাঁড়িয়ে যতক্ষণ উনি ছিলেন, দেখলাম।
প্রথম দর্শনেই কি এলিনর কার্লিসলের প্রেমে পড়েছিলেন?
মনে হয় তাই।…
যাই হোক উনি এবং রডারিক ওয়েলম্যান এরপর সুখেই থাকবেন আশা করি।
বন্ধু হে, ও ধরনের কোন আশাই আপনার করা উচিত হবে না।
কেন নয়। মেরী জেরার্ডের ব্যাপারটার জন্য উনি নিশ্চয়ই রডারিক ওয়েলম্যানকে ক্ষমা করবেন। ওটা সাময়িক উন্মত্ততা মাত্র।
ব্যাপারটা অত সহজ নয় বন্ধু, ফাটলটা অনেক গভীরে সৃষ্টি হয়েছে। অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে ব্যবধানের মত। মৃত্যুর উপত্যকা পার হয়ে এসে কেউ আর অতীতে ফিরতে চায় না, নতুন ভাবে শুরু করতে চায়। অতীত সেখানে কোন কাজ লাগে না…
নতুন জীবন…সেই জীবনই এলিনর কার্লিসল শুরু করতে চলেছেন..আর আপনিই ওকে নতুন জীবন দিয়েছেন।
না, আমি নয়।
হ্যাঁ, আপনার ইচ্ছাশক্তি, আপনার গোঁয়ারতুমির ফলেই আমি বাধ্য হয়েছিলাম যেমনটি বলেছিলেন সেই মতো কাজ করতে। স্বীকার করুন এখন, আপনার প্রতিই উনি কৃতজ্ঞ তাই না?
হ্যাঁ, উনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, এমনকি প্রায়ই যেতে বলেছেন ওঁর কাছে..।
হ্যাঁ, আপনাকে ওঁর খুবই প্রয়োজন।
ড. লর্ড, ওঁর কাছে রডারিকের যতো প্রয়োজন ততটা নয়।
রডারিক ওয়েলম্যানের প্রয়োজন উনি কখনই অনুভব করেননি। উনি ওকে ভালোবাসতেন, মনের অনিচ্ছা সত্ত্বেও খানিকটা মরিয়া হয়ে।
উনি কখনোই আমাকে ওর মতো ভালোবাসতে পারবেন না–শান্তভাবে পোয়ারো বললেন, হয়তো না। কিন্তু আপনাকে ওঁর খুবই দরকার, আপনাকে ঘিরেই উনি নতুন জগৎ গড়তে পারবেন আবার। পোয়ারো শান্তস্বরে বললেন, বাস্তবকে মেনে নিতে পারেন না? উনি রডারিক ওয়েলম্যানকে ভালোবাসতেন, তাতে কি হয়েছে? আপনাকে পেলে উনি তো সুখী হতে পারেন…।