হপকিন্স এক অদ্ভুত আনন্দে চিন্তান্বিত স্বরে বললেন, ধারে-কাছে ঐ নামের কোন লোককে তিনি চেনে না।
ও’ব্রায়ান মনে করিয়ে দিলেন যে, ব্যাপারটা অনেকদিন আগেকার। সম্মতি জানিয়ে হপকিন্স বললেন, তিনি মাত্র কয়েক বছর হল এখানে এসেছেন, তবে
ও’ব্রায়ান বললেন, লিউইস দারুণ রূপবান পুরুষ। দেখলে মনে হয় ঘোড়সওয়ার বাহিনীর একজন বড় অফিসার।
হপকিন্স চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার তো।
চটুল গলায় ও’ব্রায়ান বললেন, হয়তো ওঁরা পরস্পরকে ভালোবাসতেন, বাবা-মা হয়তো ওদের পথের কাঁটা হয়েছিলেন।
হপকিন্স বিষাদের সুরে বললেন, হয়তো যুদ্ধে মারাও গিয়ে থাকতে পারেন।
.
১.১.৩
ডিউটি সেরে হপকিন্স যখন বাড়ি ফিরছেন, তখন মেরী ছুটে এসে বলল, আমি কি আপনার সঙ্গে গ্রাম পর্যন্ত যেতে পারি?
সিস্টার সম্মতি জানাতে মেরী জানাল তার সঙ্গে কথা বলা তার একান্তই দরকার। সব বিষয়ে তার খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে।
একুশ বছরের মেরী জেরার্ড। শাঁখের মতো সুন্দর গলা, হালকা সোনালী চুল, একরাশ ঢেউ খেলানো চুল তার রূপকে আরও মিষ্টি করে তুলেছে। চোখের তারা নীল।
মেরী জানাল যে, সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। এভাবে নিজেকে নষ্ট হতে দেওয়া তার একেবারেই উচিত নয়। সে মিসেস ওয়েলম্যানকে অনেকবার সেকথা বোঝাবার চেষ্টা করে পরাজিত। তিনি খালি বলেন, এতো ব্যস্ততার কি আছে।
হপকিন্স মেরীকে মনে করিয়ে দিলেন যে, মিসেস ওয়েলম্যান অসুস্থ।
লজ্জিত হয়ে মেরী বলল, সে চুপচাপ বসে না থেকে কিছু একটা করতে চায়, কিন্তু কোন কিছুর ট্রেনিং নিতে গেলে অনেক খরচপত্র করতে হবে। অসুস্থ মানুষকে সেবা করতে তার ভালো লাগে। তাই তার ইচ্ছা হাসপাতালে সে নার্সের চাকরী করবে।
হপকিন্স বললেন, তার জন্য শরীর স্বাস্থ্যকে একেবারে পাথরের মতো করা দরকার।
মেরী জানাল সে নার্সিং ভালোবাসে। ওর মাসি নার্স ছিলেন। অতএব ওর পক্ষে কোন অসুবিধা হবে না।
হপকিন্স মেরীকে নরল্যাণ্ডে গিয়ে ম্যাসেজ করা শিখতে পরামর্শ দিলে মেরী বলল, সেও ওকথা চিন্তা করেছিল, কিন্তু তাতে অনেক খরচ। মিসেস ওয়েলম্যান তার জন্য যথেষ্ট খরচ করেছেন।
হপকিন্স মেরীকে মাস্টারি করার পরামর্শ দিলে মেরী বলল, না, অতো মাথা আমার নেই। হপকিন্স বললেন যে, তার দৃঢ় বিশ্বাস মেরীর যাতে চলে যায় তার জন্য মিসেস ওয়েলম্যান কিছু না কিছু করবেনই। ওয়েলম্যান মেরীকে এত স্নেহ করেন যে, তাকে কাছ ছাড়া করতে চান না। পক্ষাঘাতে একটা অঙ্গ তার পড়ে গেছে। তুমিই যা একটু গল্পগুজব করে ওঁকে সঙ্গ দাও। নিজের চারপাশে তোমার মতো এমন একটা তরতাজা মেয়েকে সবসময় দেখতে পেলে মন বেশ আনন্দে ভরে থাকে। তাছাড়া রোগীর সামনে তার আচরণেরও প্রশংসা করলেন হপকিন্স।
কথাগুলো শুনে মেরী খুব খুশি হয়ে বলল, মিসেস ওয়েলম্যানকে তার ভীষণ ভালো লাগে। ওঁর জন্য সে সব কিছু করতে পারে।
হপকিন্স শুকনো গলায় বললেন, তাহলে তোমার উচিত যেখানে আছ সেখানেই থাকা, বেশী দিন লাগবে না…
একথা শুনে মেরী ভয়ে ভয়ে বলল আপনি কি বলতে চান…
হপকিন্স মাথা নেড়ে বললেন, এসব কেসে কি কি হয় তা তার অজানা নয়। বেশ ভালোই লড়ে গেছেন উনি, কিন্তু আর বেশীদিন নয়। এরপরে দ্বিতীয় তারপর তৃতীয় স্ট্রোক হবে। যদি শেষ কটা দিন মেরী বুড়িকে সুখে রাখতে পারে, তবে বাকীগুলোও ঠিকমত হয়ে যাবে।
এই কথা শুনে মেরী কিছু উত্তর দেবার আগেই হপকিন্স বললেন, ঐ তোমার বাবা আসছেন।
নার্স হপকিন্স বেশ হাসি ঝরিয়ে মিঃ জেরার্ডকে সুপ্রভাত জানালেন। প্রত্যুত্তরে ক্রাইম জেরার্ড মুখ দিয়ে একটা বিরক্তিসূচক শব্দ করলেন।
নার্স হপকিন্স বললেন, আজ আবহাওয়াটা বেশ ভালোই, কি বলেন? উত্তরে মিঃ জেরার্ড বললেন আপনার পক্ষে ভালো হতে পারে, আমার জন্য নয়। আমার রাতের ব্যথাটা খুবই কষ্ট দিচ্ছে।
নার্স হপকিন্স প্রত্যুত্তরে কিছু বলতেই তিনি চটে গেলেন এবং নার্সদের আচরণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে লাগলেন। আর মেরীকে লক্ষ্য করে বললেন, নার্স হবার চিন্তা ছেড়ে অন্য কিছু করা যায় কি না চিন্তা করতে।
মেরী কষ্ট করে বলে উঠলো, হাসপাতালের নার্স হতে পারলে তার পক্ষে ভালোই হবে।
একথার জবাবে মিঃ জেরার্ড মেরীকে অহংকারী অলস বললে মেরী বলল, একথা বলার কোন অধিকার তার নেই।
পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য হপকিন্স বেশ ভারী গলায় হালকা সুরে বললেন, মেরী বাবা হিসাবে তাকে যথেষ্ট ভালোবাসে।
এক বিজাতীয় ঘৃণার দৃষ্টি নিয়ে আপাদমস্তক মেরীকে দেখে নিয়ে জেরার্ড বলল, মেরীর ফরাসী বুকনী, ইতিহাস পড়া আর চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলা তার ভালো লাগে না। বলেই আধা-হাউসের ভিতরে ঢুকে গেল।
গল্পে গল্পে অনেকটা সময় কেটে গেছে। মেরীর কাছে বিদায় নিয়ে নার্স হপকিন্স ফিরে চললেন। এক নিঃসঙ্গতাবোধ আচ্ছন্ন করল মেরীকে। মেরী ভাবতে লাগল তাহলে কি করবে।
.
১.২.১
আধশোয়া অবস্থায় শুয়ে ছিলেন মিসেস ওয়েলম্যান। ওঁর চোখ জোড়া, গাঢ় নীল, নাকটা বেশ খাড়া, বেশ মোটা ভারী মহিলা, অহংকার ও দৃঢ়তার মূর্ত প্রতীক। সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দৃষ্টি নেমে এল আর জানালার ধারে বসা মেরীর উপর পড়ল। সামান্য থেমে মেরীকে ডাকলেন। মেয়েটি চমকে উঠে একটু লজ্জিত হয়ে পড়ল। মিসেস ওয়েলম্যান বললেন, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। আমার সেবাযত্ন তুমি খুব করো…