আমি যা বলছি, বুঝেসুঝেই বলছি।
.
৩.৩.৮
এডওয়ার্ড জন মার্শাল আপনি বেশ কয়েকবছর নিউজিল্যাণ্ডের থাকার পর সম্প্রতি ১৪নং রেন স্ট্রীট, ভেন্টফোর্ডে বাস করছেন?
হা।
আপনি মেরী ড্রেপারকে চেনেন কি?
নিউজিল্যাণ্ডে বহু বছর ধরে আমরা পরস্পরকে চিনতাম।
ওঁকে কি আজ আপনি আদালতে দেখেছেন?
দেখেছি। উনি নিজের নাম বললেন, জেসি হপকিন্স, অথচ উনি যে মিসেস ড্রেপার তাতে কোন সন্দেহ নেই।
জজ মাথা তুললেন, সুস্পষ্ট অথচ শান্ত গলায় বললেন, আমার মনে হয়, সাক্ষী জেসি হপকিন্সকে আবার ডাকাটাই ঠিক হবে।
কারুর মুখে কথা নেই, মৃদু গুঞ্জন…মাই লর্ড জেসি হপকিন্স কয়েক মিনিট আগে আদালত ছেড়ে চলে গেছেন।
.
৩.৩.৯
কাঠগড়ায় উঠলেন এরকুল পোয়ারো।
মঁসিয়ে পোয়ারো এই কাগজটা আপনি চিনতে পারছেন?
নিশ্চয়ই।
কিভাবে এটা আপনার হাতে আসে?
জেলা নার্স মিসেস হপকিন্স আমাকে দিয়েছিলেন।
স্যার এডুইন বললেন, আপনার অনুমতি নিয়ে মাই লর্ড আমি এই কাগজটা জোরে জোরে পড়ব, তারপর জুরীদের দেব।
.
৩.৪.১
আসামী পক্ষের শেষ সওয়াল :
জুরী মহোদয়গণ, এবার দায়দায়িত্ব সব আপনাদের, এলিনর কার্লিসল মুক্তি পাবে কি পাবে না, সেটা আপনারই বলবেন। সব সাক্ষ্যপ্রমাণ শোনার পর যদি মনে করেন এলিনর কার্লিসল মেরী জেরার্ডকে বিষ দিয়েছিল, তবে তাকে আপনারা দোষী সাব্যস্ত করবেন।
কিন্তু যদি মনে করেন যে অন্য কারুর বিরুদ্ধে সমপরিমাণ প্রমাণ আছে, এবং সম্ভবত অনেক বেশী জোরদার প্রমাণ সেটা, তবে আদৌ দ্বিধা করবেন না মিস কার্লির্সলকে মুক্তি দিতে। এতদিন আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে গোড়ার দিকে ঘটনাটা যা মনে হয়েছিল এখন তা আর মনে হচ্ছে না।
গতকাল এরকুল পোয়ারার নাটকীয় সাক্ষ্যের পর আমি অন্য সাক্ষীদের ডেকে নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে সমর্থ হয়েছি যে এই মেয়েটি, মেরী জেরার্ড আসলে লরা ওয়েলম্যানের অবৈধ কন্যা। এবং কথাটা সত্যি বলে, স্বভাবতই অনুমান করা যেতে পারে, এবং মহামান্য জজসাহেব নিশ্চয়ই আমাদের সেইমত বলবেনও যে মিসেস ওয়েলম্যানের নিকটতম আত্মীয় তার বোনঝি এলিনর কার্লিসল নয়, বরং তার অবৈধ কন্যাসন্তান মেরী জেরার্ড। এবং মিসেস ওয়েলম্যানের মৃত্যুতে তার বিশাল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়েছিল মেরী জেরার্ড। জুরী মহোদয়গণ এটাই হল সমগ্র পরিস্থিতির সারমর্ম। প্রায় ২ লক্ষ পাউণ্ডের সম্পত্তির মালিক হয়েছিল মেরী জেরার্ড। কিন্তু একথা সে নিজে অবহিত ছিল না। এমনকি মিসেস হপকিন্সের পরিচয়ও সে জানতো না। আপনারা হয়তো মনে করতে পারেন যে মেরী রাইলি বা মিসেস ড্রেপারের যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ থেকে থাকতে পারে নিজের নাম হপকিন্স পাল্টে নেবার। যদি তাই হয়, তবে সেই কারণটা উনি জানালেন না কেন?
আমরা যেটুকু জেনেছি তা হল: নার্স হপকিন্সের প্ররোচনায় মেরী জেরার্ড উইল করে এবং তার যাবতীয় সম্পত্তি এলিজা রাইলিকে দিয়ে যায়। আমরা এও জানি যে, নিজের পেশার দিক দিয়ে মরফিন ও আপোমরফিন সহজেই পেতে পারেন এবং কোন ওষুধের কি গুণ সেটা তিনি ভালোভাবেই জানেন। তাছাড়া এটাও প্রমাণিত হয়েছে, যে নার্স হপকিন্স মিথ্যা সাক্ষ্যও দিয়েছেন, যখন তিনি বলেছেন কাটাহীন গোলাপ গাছের কাঁটাও তার কব্জিতে দাগ হয়েছে। ইনজেকশনের সঁচের দাগটার জন্য একটা অজুহাত দেখাতে গিয়ে তাড়াতাড়িতে ঐ মিথ্যে কথাটা বলে ফেলেছেন উনি। একথা মনে রাখবেন যে, শপথ নিয়ে সাক্ষ্য দেবার সময় আমার বলেছিলেন যে, নার্স হপকিন্স যখন ভাড়ার ঘরে বাসনপত্র ধোবার জন্য তার কাছে এসেছিলেন তখন নার্সকে করুণ, অসুস্থ লাগছিল–পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল একটু আগে যেন তিনি খুব অসুস্থ হয়েছিলেন।
আর একটা বিষয়ের উপর জোর দিতে চাই–যদি মিসেস ওয়েলম্যান আরও ২৪ ঘণ্টা বাঁচতেন তবে তিনি নিশ্চয়ই উইল করতেন এবং খুব সম্ভব মেরী জেরার্ডের জন্য উপযুক্ত বন্দোবস্ত করতেন। তবে প্রচুর সম্পত্তি নিশ্চয়ই দিতেন না, কারণ মিসেস ওয়েলম্যান নিশ্চয়ই চাইতেন যে তার পরিচয় না দেওয়া মেয়েটি নিজের জগতে নিজস্ব পরিচয় নিয়েই সুখে থাক।
অপর এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমার কিছু বলার নেই, শুধু বলতে চাই যে ঐ অপর ব্যক্তিটিরও সমান সুযোগ ছিল এবং খুন করার উদ্দেশ্য আরও গভীর ছিল।
এই দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিচার করলে জুরী মহোদয়গণ, আপনাদের কাছে নিবেদন করছি যে মিস এলিনর কার্লিসলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে…।
.
৩.৪.২
জুরীদের মামলার বিষয় বোঝাতে গিয়ে মিঃ জাস্টিস বেডিংফিল্ড বললেন,…নিজেদের যুক্তি বিচারে আপনাদের নিঃসন্দেহ হতে হবে যে প্রকৃতপক্ষে এই আসামীই ২৭শে জুলাই তারিখে মেরী জেরার্ডকে বিপজ্জনক ডোজের মরফিয়া খাইয়ে দিয়েছিল। যদি সম্পূর্ণভাবে নিঃসন্দেহ না হন তবে আসামীকে মুক্তি দেবেন।
সরকারী পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে মেরী জেরার্ডকে বিষ দিতে পারার সুযোগ একমাত্র ছিল আসামীরই। আসামী পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়েছে বিকল্প প্রমাণ করার। মেরী জেরার্ডের আত্মহত্যার তত্ত্বও উপস্থাপিত হয়েছে, এবং এই তত্ত্বের সমর্থনে প্রমাণ হিসাবে বলা হয়েছে মারা যাবার অনতিকাল আগে মেরী জেরার্ড উইল করেছিল। তবে সে যে নিজের সম্বন্ধে বীতশ্রদ্ধ হয়েছিল, বা তার মনে কোন অশান্তি ছিল সে সম্বন্ধে আদৌ কোন প্রমাণ নেই। এটাও প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে যে, এলিনর কার্লির্সল যখন আউট হাউস থেকে মেরীদের ডাকতে গিয়েছিল, সেই অবসরে ভাড়ার ঘরে ঢুকে স্যাণ্ডউইচে মরফিন মিশিয়ে দিয়েছে। তা যদি সত্য হয় তবে উদ্দেশ্য ছিল এলিনর কার্লির্সলকে খুন করা, ভুলবশতঃ মেরী জেরার্ড সেটা খেয়ে মারা গেছে। তৃতীয় বিকল্পটি হল এই যে, মরফিন মেশাবার সুযোগ আর একজনেরও ছিল, এবং সেটা মেশানো হয়েছিলো চায়ের সঙ্গে, স্যাণ্ডউইচে নয়। এই তত্ত্বের সমর্থনে আসামীপক্ষ থেকে সাক্ষী হিসাবে ডাকা হয়েছে মিঃ লিটনডেনকে, তিনি শপথ গ্রহণ করে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে ভঁড়ার ঘরের মেঝেতে ফাটলে যে লেবেলের টুকরো পাওয়া গেছে সেটা মরফিনের, যা হল বমি করার জোরালো ওষুধ। দুধরনের লেবেলের নমুনা আপনাদের দেখানো হয়েছে। আমার মতে লেবেলের বাকী অংশটুকু খোঁজার চেষ্টা না করে এবং তাড়াতাড়ি ওটা যে মরফিনের লেবেল এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে পুলিশ মাত্রাতিরিক্ত অসাবধানতার দোষে দোষী।