একথা কি ঠিক যে ৬ই জুলাই বৃহস্পতিবার মেরী জেরার্ড উইল করেছিল?
নার্স হপকিন্স জানালেন, মেরী উইল করাটা যুক্তিযুক্ত মনে করেই করেছিল কোন মানসিক অবসাদ বা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দুঃশ্চিন্তা থেকে নয়।
নার্স হপকিন্স জানালেন, এলিনর কার্লিসল মহানুভবতা দেখিয়ে দুহাজার পাউণ্ড দিয়েছিল।
বলুন তো, মেরী জেরার্ড আর মিঃ রডারিক ওয়েলম্যানকে নিয়ে কোন গুজব গ্রামে রটেছিল?
মেরীব প্রতি উনি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।
তার কোন প্রমাণ আছে আপনার কাছে?
না, শুধু জেনেছি, শুনেছি।
ওহ! শুধু জেনেছেন–শুনেছেন, তাই না, এতে কিন্তু জুরীরা খুব একটা বিশ্বাস করবেন বলে মনে হয় না। মনে পড়ছে কি, সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আপনি একবার বলেছেন রডারিকের ব্যাপারে মেরীর কোন সম্পর্কই ছিল না, কারণ এলিনর বাগদত্তা ছিলেন, এমনকি মেরী লণ্ডনেও রডারিককে ও কথা বলেছেন।
ওই কথা ও আমাকেও বলেছিল।
মেরী জেরার্ড যখন আপনার সঙ্গে উইলে কিভাবে কিলিখতে হবে তাই নিয়ে আলোচনা করছিল, তখন কি আসামী জানালা দিয়ে দেখেছিল?
হ্যাঁ, দেখেছিলেন।
কি বলেছিলেন উনি?
উনি বলেছিলেন, তাহলে মেরী তুমি তোমার উইল করছ। ভারী মজার ব্যাপার তো, এই বলে হাসতে লাগলেন। ঐ মুহূর্তে চিন্তাটা ওর মাথায় এসেছিল। মেরীকে সরিয়ে দেবার চিন্তা। এইসময়েই খুন করার কথাটা মাথায় ঢোকে।
জজ কড়া গলায় বললেন, শুধু প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখুন।
এলিনর ভাবতে লাগল…কি আশ্চর্য,…যখন কেউ সত্যি কথা বলছে…তখন এটা বাদ দেওয়া হচ্ছে।
.
৩.২.২
এবার কাঠগড়ায় এলেন নার্স ও’ব্রায়ান।
২৯শে জুন সকালবেলায় নার্স হপকিন্স কোন কথা আপনাকে বলেছিলেন?
হ্যাঁ, উনি বলেছিলেন ওঁর ব্যাগ থেকে মরফিনের শিশি হারিয়ে গেছে।
আপনি জানতেন কি অ্যাটাচিটা সারারাত হলঘরে ছিল?
হ্যাঁ।
মিসেস ওয়েলম্যানের মৃত্যুর সময় আসামী এবং মিঃ রডারিক ওয়েলম্যান দুজনে ঐ বাড়িতে ছিলেন–অর্থাৎ ২৮শে জুন থেকে ২৯শে জুন পর্যন্ত?
হ্যাঁ।
মিসেস ওয়েলম্যানের মৃত্যুর পরের দিন–২৯শে জুন তারিখের কোন ঘটনা আপনার জানা আছে কি?
আমি মিঃ রডারিক ওয়েলম্যানকে দেখেছিলাম মেরী জেরার্ডের সঙ্গে। উনি মেরীকে বলছিলেন তাকে ভালোবাসেন।
তখন কিন্তু আসামী ওঁর বাগদত্তা ছিলেন।
হা।
তারপর কি হল?
মেরী ওঁকে বলেছিল ঐ আচরণের জন্য লজ্জা পাওয়া উচিত, যেহেতু বিশেষ করে ওঁর সঙ্গে এলিনরের বিয়ের পাকা হয়ে আছে।
মেরীর প্রতি আসামীর মনোভাব সম্পর্কে আপনার কি ধারণা?
ঘৃণা করত, এমন করে তাকাত যেন ভস্ম করে দেবে।
স্যার এডুইন বললেন, একথা কি ঠিক নয় যে নার্স হপকিন্স বলেছিলেন তার ধারণা মরফিন উনি বাড়িতে ফেলে এসেছেন?–
হ্যাঁ, বলেছিলেন মানে দেখুন। ব্যাপারটা এইভাবে…পরে…।
তখন উনি ওটার সম্বন্ধে খুব একটা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন না?
না, কারণ তার মনে হয়েছিল, ওটা তিনি বাড়িতে ফেলে এসেছেন, উনি ভাবতে পারেননি কেউ ওটা নিয়েছে।
ঠিক তাই, মরফিয়ার প্রয়োগে মেরী জেরার্ড মারা যাবার পরেই ওঁর কল্পনাশক্তি কাজ করতে লাগল।
জজ বাধা দিলেন, স্যার এডুইন আমার মনে হয় আগের সাক্ষীকে আপনি এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন করেছেন।
ধর্মবতারের মর্জি…বাও করলেন স্যার এডুইন, তারপর ঘুরে প্রশ্ন করলেন, মেরীর প্রতি আসামীর আচরণের কথা হচ্ছিল, আচ্ছা ওদের মধ্যে কখনও ঝগড়া হয়েছে?
না, ঝগড়া হয়নি।
মেয়েটির প্রতি এলিনর কার্লিসল সবসময় খুশি ছিলেন?
হা, ঐ দৃষ্টিতে উনি তাকে দেখতেন।
বেশ, বেশ, বেশ…কিন্তু ঐ ধরনের উত্তরে আমাদের কাজ হবে না। আপনি তো আয়রল্যাণ্ডের লোক, তাই না?
হা।
এবং আয়ারল্যাণ্ডের লোকেরা খুবই কল্পনাপ্রবণ হয়, তাই না?
নার্স ও’ব্রায়ান উত্তেজনায় চেঁচিয়ে উঠলেন, আমার প্রতি কথা সত্যি।
.
৩.২.৩
মুদিখানার মালিক মিঃ অ্যাবট কাঠগড়ায় এলেন। বেশ উত্তেজিত অনিশ্চয়তার ভাব (আবার একটু রোমাঞ্চিত নিজের মর্যাদা বৃদ্ধিতে), সংক্ষিপ্ত সাক্ষ্য দিলেন। তাকে জেরা করা হয়নি।
.
৩.৩.১
আসামীপক্ষের সওয়াল :
জুরী মহোদয়গণ, আপনাদের সমক্ষে আমার বলা অনুচিত হবে না, এবং আমি চাইলেও বলতে পারি আসামীর বিরুদ্ধে প্রকৃতপক্ষে কোন কেই নেই। অভিযোক্তারা বারবার একটি কথা বলেছেন, যে এলিনর কার্লিসল মরফিন সংগ্রহ করার পর (সেটা হাতিয়ে নেবার সুযোগ ঐ বাড়িতে উপস্থিত সকল ব্যক্তির পক্ষে সমান ছিল, এবং বিষটা যে বাড়িতেই ছিল এ সম্বন্ধেও সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়ে গেছে), মেরী জেরার্ডকে বিষ খাওয়াতে এগিয়ে গিয়েছিল। বাদীপক্ষ এখানে যে ঘটনার উপর সবিশেষ জোর দিয়েছেন তা হল সুযোগ। উদ্দেশ্য প্রমাণ করতেও তারা পারেননি। তার কারণ হল যে, কোন উদ্দেশ্য ছিল না। বিবাহের সম্পর্কে ভেঙ্গে যাবার বিষয়টিকে বাদীপক্ষ উদ্দেশ্য হিসাবে দেখাতে চেয়েছেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন-বাগদান করার পর বিয়ে ভেঙে যাওয়াই যদি উদ্দেশ্য হয় তাহলে পৃথিবীতে শতশত খুন হত। আর এখানে এই বিবাহ সম্পর্কটি কোন চিত্তবৃত্তিঘটিত আবেগের অর্থাৎ প্রায় ভালোবাসার ব্যাপার নয়, সম্পূর্ণভাবে এক পরিবারিক বন্ধন। আমি প্রমাণ করতে চাই এই আকর্ষণটা এত গভীর ছিল না। (ওহ রডি…রডি…প্রেমের উত্তাপ নাকি তত তীব্র ছিল না। তাছাড়া, এই বিবাহ সম্পর্কে ছেদ টেনেছিল স্বয়ং আসামী। বৃদ্ধা মিসেস ওয়েলম্যানকে খুশি করাই ছিল এলিনর কার্লির্সল ও রডারিক ওয়েলম্যানের মধ্যে বাগদানের উদ্দেশ্য। উনি মারা যাবার পর এরা দুজনেই মনে করেছিল বিবাহিত হবার পক্ষে যতোটা আকর্ষণ থাকা দরকার তার তাদের মধ্যে নেই। অবশ্য তারা পরস্পরের কাছে পরম মিত্র হয়ে থাকবে। মাসির সম্পত্তি পাবার পর সহৃদয়া এলিনর কার্লির্সল বেশ মোটা টাকা দিতে মনস্থ করেছিলেন মেরী জেরার্ডকে, আর সেই মেয়েটিকেই কিনা খুন করার অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত। এর চেয়ে পরিহাসের আর কি হতে পারে।