স্যার এডুইন জেরা করতে লাগলেন ড, অ্যালানকে। এমন কোন প্রমাণ দেখাতে পারেন কি যে মরফিয়া খাওয়া হয়েছিল বিশেষ কোন একটা খাদ্যের মাধ্যমে?
ড. অ্যালান বুঝতে না পারায় স্যার এডুইন জানতে চাইলেন যে, মরফিয়া কি মেরী মাছের পেস্ট বা রুটি বা মাখন বা চা বা দুধ কোন একটা কিছুর সঙ্গে খেয়েছিল?
ড. জানালেন, এমন কোন বিশেষ প্রমাণ নেই যা দিয়ে বলা যায় মাছের পেস্টেই বিষ ছিল বা অন্য কিছুর মাধ্যমে বিষ খাওয়ানো হয়ে থাকতে পারে, এমনকি মরফিয়ার ট্যাবলেট আলাদাভাবেও খেয়ে থাকতে পারে মেরী জেরার্ড। তবে যেভাবেই মরফিয়া খাওয়ানো হোক না কেন অন্যান্য খাবার ও চা খাওয়ার সময়েই মরফিয়া খাওয়ানো হয়েছিল এ বিষয়ে তিনি নিঃসন্দেহ।
.
৩.১.৪
এরপর শপথ নিলেন ইনসপেক্টর ব্রিল। অভ্যস্ত স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে তিনি জানালেন খবর পেয়ে বাড়িতে গিয়ে আসামীর কাছ থেকে জানেন যে, খারাপ মাছের মণ্ডের জন্য মেরীর মৃত্যু হয়ে থাকতেও পারে। বাড়ি তল্লাসী করে ঝাঁঝরির মুখে ধুয়ে মুছে সাফ করা একটা মাছের টিনের কৌটো আর একটা অর্ধেক ভর্তি মাছের টিন আর টেবিলের পাশে বেসিনের নীচে মেঝের একটা ফলকে ছোট্ট একটা মরফিন ট্যাবলেটের শিশির গায়ের কাগজপত্র এবং কাগজের টুকরো ঘটনার দিন সকালেও এসে থাকতে পারে বলে তার ধারণা জানালেন।
.
৩.১.৫
সাক্ষীর কাঠগড়ায় নার্স হপকিন্সেকে দেখে এলিনরের মনে হল ইনসপেক্টর ব্রিলের তুলনায় নার্স হপকিন্স অনেকটা মানবিক, হৃদয়বতী।
জেরা শুরু করলেন স্যার এডুইন।
গত ২৮শে জুন আপনি কোথায় ছিলেন?
নার্স হপকিন্স যথাযথ উত্তর দিলেন এবং সঙ্গের অ্যাটাচিকেসে কি কি জিনিষ ছিল তার যথাযথ বর্ণনা দিলেন।
শিশিতে কি ছিল? প্রশ্ন করলেন স্যার এডুইন।
আধ গ্রেনের কুড়িটা মরফিন হাইড্রোক্লোরাইড ট্যাবটেল ছিল।
নার্স হপকিন্স আরো জানালেন ২৮ শে জুন সন্ধ্যেবেলা অ্যাটাচিকেসটা হলঘরে রাখার। পরদিন সকাল ৯টা নাগাদ তিনি ওটার খোঁজ করেন। মরফিনের শিশিটা হারিয়ে যাবার কথা একমাত্র নার্স ও’ব্রায়ানকেই তিনি বলেন।
আপনার কেসটা হলঘরে এমনভাবে ছিল যে যাতায়াত করার সময় যে কেউ ওটার নাগাল পেতে পারতো? জিজ্ঞেস করলেন স্যার এডুইন।
নার্স হপকিন্স সংক্ষেপে জানালেন, হ্যাঁ।
স্যার স্যামুয়েল মৃতা মেরী জেরার্ডের সম্বন্ধে জানতে চাইলে নার্স হপকিন্স জানালেন, মেরী খুব ভালো মেয়ে ছিল।
মৃত্যুর সময় এমন কিছু ঘটনা ঘটেছিল কি যাতে তার সুখ শান্তি বিঘ্নিত হতে পারতো বা ভবিষ্যৎ দুঃখময় হয়ে উঠতে পারত? মানে মেরীর পক্ষে আত্মহত্যা করার তেমন কোন কারণই কি ছিল না?
নিশ্চয়ই না।
এলিনরের মনে হল, সব জিনিষটাই সত্যি…নার্স হপকিন্স ওটা বিশ্বাস করেন, উনি দ্বিমত নন যে কাজটা আমি করেছি। তাছাড়া উনি যা বলেছেন তা বর্ণে বর্ণে সত্যি। আর সেই কারণেই ব্যাপারটা ভয়াবহ।
সাক্ষীকে মরফিন লেবেলের টুকরোটা একটা ছোট পিচবোর্ডের ওপর সেঁটে দেখান হল এবং সাক্ষী জানাল টুকরোটা তার হারিয়ে যাওয়া শিশিরই লেবেলের মতোই যদিও জোর দিয়ে বলা অসম্ভব।
.
৩.২.১
স্যার এডুইন বামার এবার নার্স হপকিন্সকে জেরা শুরু করলেন। অ্যাটাচিকেস শুধু মিস কার্লিসলের নাগালের মধ্যেই ছিল, না, কি যে-কোন চাকর, বা ড. লর্ড, বা মিঃ ওয়েলম্যান বা নার্স ও’ব্রায়ান যে কেউ পেতে পারতো বা মেরীর ব্যাগে যে মরফিরা আছে তা জানা মিস কার্লিসলের পক্ষে সম্ভব ছিল কিনা বা ড. লর্ড বা মেরী জেরার্ডের পক্ষে তা সম্ভব ছিল না ইত্যাদি।
এডুইন বামার প্রশ্ন করলেন, সকালে আপনি নার্স ও’ব্রায়ানকে বলেছিলেন যে মরফিয়ার শিশি হারিয়েছে?
হা।
কিন্তু আমি আপনাকে বলছি যে, আপনি আসলে যা বলেছিলেন তা হল: মরফিন আমি বাড়িতে ফেলে এসেছি, ওটার জন্য আবার বাড়ি ফিরতে হবে।
নার্স হপকিন্স জানালেন, শিশিটা খুঁজে না পেয়ে ওই ধরনের মন্তব্য তিনি করেছিলেন। আসলে ওষুধটা নিয়ে কি করেছেন সেটাই আপনার খেয়াল ছিল না।
না, মনে আছে ওটা কেসের মধ্যে ভরেছিলাম।
তাহলে ২৯শে জুন সকালে কেন আপনি বলেছিলেন ওটা বাড়িতে ফেলে এসেছেন?
কারণ মনে হয়েছিল আমি তাই করেছি।
যেদিন মেরী জেরার্ড মারা যায়, সেদিন ২৭শে জুলাই গোলাপ গাছের কাটায় আপনার খোঁচা লেগেছিল–এমন কথা কি আপনি বলেছিলেন?
নার্স হপকিন্স বললেন, হ্যাঁ।
একটু সময় নিয়ে স্যার এডুইন প্রশ্ন করলেন, আপনি এখনও জোর দিয়ে বলছেন যে ২৮শে জুন আপনি যখন হান্টারবেরীতে আসেন তখন আপনার অ্যাটচিকেসে মরফিনের শিশি ছিল?
হা ছিল।
ধরুন যদি এখন নার্স ও’ব্রায়ান কাঠগড়ায় গিয়ে বলেন যে, আপনি বলেছিলেন সম্ভবত ওটা বাড়িতে ফেলে এসেছেন?
ওটা আমার কেসের মধ্যেই ছিল, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
কৃত্রিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্যার এডুইন বললেন, মরফিয়ার শিশি খুঁজে না পেয়ে আপনার একটুও অস্বস্তি হয়নি?
না…অস্বস্তি…না তো?
ও, তাহলে আপনি কোন রকম উদ্বিগ্নও হননি, যদিও মরফিয়ার মত বিপজ্জনক ওষুধ অতোটা হারিয়ে গেছে?
আমি ভাবিইনি ওটা কেউ নিয়েছে।
বুঝেছি, ঠিক সেই মুহূর্তে আপনার মনে পড়েনি ওটা কোথায় রেখেছিলেন?
মোটেই না। অ্যাটাচির মধ্যেই ছিল।
কুড়িটা আধ গ্রেনের ট্যাবলেট, অর্থাৎ দশ গ্রেনের মত মরফিয়াতে অনেকগুলো মানুষ মারা যায় সে কথাটা ভেবে উদ্বিগ্ন হননি? আপনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেওয়া উচিত ছিল না কি? আইনের চোখে এই অসাবধানতা কিন্তু অপরাধ।