পোয়ারো বললেন, তাহলে দেখা যাচ্ছে বন্ধু, এতদিনে একটা কিছু হাতের মুঠোর পাওয়া যাচ্ছে।
গাড়ি ঢোকার রাস্তায় অর্ধেকের বেশী যাবার পর রাস্তাটা দুভাগ হয়ে গেছে, যে ভাগটা ফুলের বাগানের দিকে ঘুরে গেছে ওরা সেই পথ ধরে হাঁটতে লাগলেন। কিছু দূরে গিয়ে বাঁক নিতেই ড. লর্ড পোয়ারোর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন সেই ভাঁড়ার ঘরের দিকে।
আপন মনে বিড় বিড় করে পোয়ারো বললেন, আর এখান থেকে যেকোন নোক ওটা দেখতে পারে। জানালা খোলা দেখতে পাওয়া স্বাভাবিক।…আর বাড়ির ভেতর কি ঘটছে দেখার জন্য এই জায়গাটা বেছে নেওয়ার স্বাভাবিক।
দুজনে মিলে কিছু খুঁজতে লাগলেন, ড. লর্ড বললেন, ঐ যে জায়গাটা…ঝোঁপগুলির পাশে, ওখানে কিছু ঘাস-পাতার ওপর ভারী কিছুর ছাপ দেখা যাচ্ছে বলে মনে হয়, ঘাসগুলো মাথা তুলেছে বটে, কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে জায়গাটা দলামলা হয়েছিল।
হ্যাঁ, জায়গাটা ভালো, রাস্তা থেকে দেখা যায় না, অথচ এখান থেকে দাঁড়িয়ে জানালাটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের সেই বন্ধুটি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিল? সিগ্রেট খেয়েছিল কি?
হঠাৎ পোয়ারো মুখ দিয়ে একটা চাপা শব্দ করলেন। মুখ তুলে ডা. লর্ড দেখলেন পোয়ারোর হাতে ভাঙ্গা দোমড়ানো মোচড়ানো খালি একটা দেশলাই বাক্স। ভালো করে দেখে ড. লর্ড চমকে উঠলেন, বিদেশী দেশলাই। পোয়ারো প্রায় উদাস গলায় বললেন, এবং মেরী জেরার্ড সম্প্রতি জার্মানী থেকে ফিরেছিল?
ড. লর্ড উত্তেজিত হয়ে বললেন, একটা ভালো সূত্র পেয়েছি, এ বিষয়ে আর কি সন্দেহ আছে?…কিন্তু, এখানে কার কাছেই বা বিদেশী দেশলাই থাকতে পারে।
আমি জানি, পোয়ারা বললেন, তবে আরো একটা অসুবিধে আছে, দেখতে পাচ্ছেন কি? না তো, বললেন ড. লর্ড।
ড. লর্ডের উত্তরের প্রত্যাশাকে নস্যাৎ করে দিয়ে পোয়ারো ভিতরে যাবার জন্য পা বাড়ালেন।
প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে ড. লর্ড বলে উঠলেন, এমন কোন প্রমাণ নেই যে এলিনর কার্লিসল ঐ মরফিনের শিশিটা নিয়েছিল। ঐ বাগান থেকে কেউ ওকে লক্ষ্য করেছিল, তারপর এলিনর যখন মেরীদের ডাকবার জন্য আউটহাউসে গিয়েছিল সেই ফাঁকে কেউ এসে মরফিনের শিশির মুখ খুলে ওপরের স্যাণ্ডউইচের উপর ছড়িয়ে দিয়ে নিঃশব্দে চলে গিয়েছিল গাড়ি করে, খেয়ালই করেনি লেবেলের টুকরোটা বেসিনের নীচে মেঝের ফলকটাতে আটকে রইল। পোয়ারো দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, এখনও আপনি দেখতে পেলেন না। মানুষ যে কত নিরেট হতে পারে ভাবা যায় না।
.
২.১২.৩
শেষপর্যন্ত তারা সেই ঘরটিতে এলেন যেখানে মেরী মারা গেছিল। ড. লর্ড একটা চেয়ার দেখিয়ে বললেন, ঘরেই ঐ চেয়ারে মারা যায় মেরী জেরার্ড।
পোয়ারো সব দেখে আউটহাউসে যেতে চাইলেন। আউটহাউস থেকে বেরিয়ে একটা লতানো গোলাপ গাছ দেখিয়ে পোয়ারো আপন মনে বললেন, এই গোলাপের নাম জানেন? এর নাম জেফিরাইন দ্রুহিন।
ড. লর্ড বিরক্ত হলেন। পোয়ারো বললেন, এলিনর বলেছিলেন ছোটবেলায় তিনি আর রডারিক এই গোলাপ বাগানে গোলাপের যুদ্ধ খেলতেন। রডারিক ভালোবাসাত সাদা গোলাপ গন্ধ নেই।…এলিনর ভালোবাসত প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা লাল গোপাল। এলিনর ও রডারিকের ওটাই ছিল পার্থক্য। এর থেকে বোঝা যায় এলিনর কার্লির্সল আবেগপ্রবণ, অহংকারী হলেও ভালোবাসত একটি পুরুষকে যে ওর ভালোবাসার যোগ্য ছিল না।
পোয়ারো ঐ বাগানে যেতে চাইলেন।
নিঃশব্দে দুজনে গিয়ে বাগানে হাজির হলেন। সেই ঝোঁপের পাশে দাঁড়িয়ে যেন মৌনী নিলেন পোয়ারো, কিছুক্ষণ পরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ব্যাপারটা এতো সহজ অথচ আপনি কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। আপনার তত্ত্ব অনুসারে মেরী জেরার্ডকে জার্মানীর পরিচয় কেউ হত্যা করতে এসেছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার দেখুন, এখানে দাঁড়িয়ে সে দেখতে পেল মেরী নয়, অন্য একটি মেয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে স্যাণ্ডউইচ কাটছে। দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা কেন মনে করবে যে ঐ স্যাণ্ডউইচ দেওয়া হবে মেরীকে।
.
২.১৩.১
মুখভর্তি বানরুটির টুকরো নিয়ে নার্স হপকিন্স দেখলেন দরজায় মিঃ পোয়ারো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও পোয়ারোকে ঘরের ভিতর নিয়ে এলেন নার্স হপকিন্স। পোয়ারো জানালেন, তিনি সত্যি কথাটা জানার জন্য এসেছেন।
নার্স হপকিন্স রাগে ফেটে পড়ে বললেন, নিজেকে কোনভাবেই আমি বাঁচাতে চাই না, তাহলে তদন্তের সময় যেচে গিয়ে মরফিনের শিশি হারানোর কথা বলতাম না। পেশাগত অসাবধানতার জন্য ধমকানি শুনতে হবে জেনেও কথাটা আমি লুকোইনি। আমি সেইটুকুই করোনার কোর্টে বলেছি যেটুকু এ কেসের জন্য বলা দরকার। মেরী জেরার্ড-এর মৃত্যুর ব্যাপারে আমাকে কোনোভাবেই জড়ানো যাবে না।
পোয়ারো বাধা দেবার কোন চেষ্টাই করলেন না। শান্ত গলায় তিনি বললেন, মেরী জেরার্ডের জীবন বৃত্তান্তের কথা আপনি চেপে গিয়েছেন। আমি তাই জানতে চেয়েছি।
কেন চাপবো না, বিশেষ করে অপরাধের সঙ্গে যখন তার সম্পর্কে নেই।
যদি ব্যাপারটা সম্পূর্ণ অনুমান হয়…….তাহলে হয়তো সম্পর্ক নেই কিন্তু আপনি যদি প্রকৃত ঘটনাটা মানেন, তবে অন্য ব্যাপার।
পোয়ারো জানালেন, মিসেস ফ্লাটারীর সঙ্গে তার কথাবার্তায় তিনি জেনেছেন মিসেস ওয়েলম্যান আর স্যার লিউইস রাইক্রফট-এর মধ্যে বিশ বছরের বেশী একটা গভীর প্রেমের ব্যাপার ছিল। স্যার লিউইস রাইক্রফট-এর স্ত্রী ছিলেন পাগল কিন্তু তার শরীর স্বাস্থ্য ছিল খবুই মজবুত, অনায়াসে বছর নব্বই বেঁচে যেতে পারতেন। যেহেতু সেযুগে বিবাহ বিচ্ছেদের সুবিধাজনক আইন ছিল না তাই তাদের মিলন সম্ভব হয়নি। দুজনের প্রেমের গোপন সম্পর্কটা আন্দাজ করলেও কেউ সঠিকভাবে মানত না। পরে রাইক্রফট যুদ্ধে মারা যান। আমার অনুমান, রাইক্রফটের মৃত্যুর পর একটি শিশুর জন্ম হয় আর ঐ শিশুই হল মেরী জেরার্ড।